বিশ্বকাপ

একজন যোদ্ধার একার বিশ্বকাপ

শান্ত মাহমুদ

শান্ত মাহমুদ
প্রকাশের তারিখ: 17:39 বুধবার, 03 জুলাই, 2019

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট ||

যুদ্ধের ময়দান, প্রতিপক্ষ সেনারা হুঙ্কার ছেড়ে এগিয়ে আসছে। মুহূর্তেই লোপাট হয়ে যেতে পারে অস্তিত্ব। সেনাপতি হওয়ায় তাঁর চিন্তা সবচেয়ে বেশি। আগে-পিছে না দেখে এগিয়ে গেছেন তিনি। লড়েছেন নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে। তাতে প্রতিপক্ষ শিবিরকে দমানো গেছে, কিন্তু পরাজিত করতে যখনই সাহায্য দরকার হয়েছে; পেছন ফিরে কাউকে খুঁজে পাননি সেনাপতি। হ্যাঁ, এই সেনাপতির নাম সাকিব আল হাসান।

তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রাণভোমরাও। তাঁকে ঘিরে আবর্তিত হয় বাংলাদেশের সব পরিকল্পনা। তবে চলমান বিশ্বকাপে সাকিবকে নিয়ে নিশ্চয়ই এমন পরিকল্পনা বাংলাদেশের ছিল না যে, সব পাহাড় তাঁকে একাই পাড়ি দিতে হবে। যে সেনাপতির পদ সাকিব অর্জন করে নিয়েছেন, সেটাও আগে থেকে দেয়া ছিল না। ক্রিকেটের জনক দেশে গিয়ে অনেক রথী-মহারথীর মাঝে নিজেকে সেনাপতি হিসেবে প্রমাণ করেছেন সাকিব।

বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার এবারের বিশ্বকাপে নিজেকে অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধা হিসেবে চিনিয়েছেন। প্রমাণ করেছেন একাই লড়তে জানেন তিনি। ব্যাটে-বলে শাসন করে বিশ্বকাপে একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেছেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার। যা দেখে মুগ্ধ গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। তাই তো সাকিবকে ভিন গ্রহের ক্রিকেটার বলতেও আগে-পিছে কিছু ভাবেননি সাবেক অনেক ক্রিকেটার। ‍

বেশ কটি রেকর্ড, যা বিশ্বকাপে সাকিবকে অবিসংবাদিত অলরাউন্ডারে পরিণত করেছে। একই আসরে ৫০০ রান ও ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছেন তিনি। যা প্রথমবারের মতো দেখলো বিশ্বকাপ। একই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট; সাকিবের কল্যাণে দ্বিতীয়বার এই ঘটনার সাক্ষী হয়েছে বিশ্বকাপ। ৯০.৩৩ গড়ে ৫৪২ রান করা করে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দুই নম্বরে থাকা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান নামের পাশে যোগ করেছেন দুটি সেঞ্চুরি ও চারটি হাফ সেঞ্চুরি।

এমন আলোকিত সাকিবকে দেখে মুগ্ধতার গান গেয়েছেন অনেক কিংবদন্তিই। কিন্তু এই মুগ্ধতাই বাংলাদেশ দলে থেকে গেছে চাপা কান্না হয়ে। আরেকজন সাকিবকে না পাওয়া বা এমন একজন সেনাপাতির পেছনে লড়ে যাওয়ার মতো সৈন্য না পাওয়াটা রাজ্যের হতাশা হয়ে চেপে বসেছে বাংলাদেশের কাঁধে।

ভারতের বিপক্ষে হেরে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি এখন নিতান্তই নিয়ম রক্ষার। টুর্নামেন্ট ফুরিয়ে আসায় ইশ, আহা জাতীয় শব্দগুলো বাংলাদেশের ক্রিকেটে ভেসে বেড়াচ্ছে। এই তালিকায় আছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও। এর মধ্যে একজন তরুণ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

ভারতের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত ব্যাট হাতে লড়ে যাওয়া সাইফউদ্দিন আফসোস করে বলেছেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই সাকিব ভাইয়ের ব্যাপারে। স্বপ্নের মতো বিশ্বকাপ যাচ্ছে তাঁর। পাশাপাশি মুশফিক ভাইও ধারাবাহিকতা বজায় রাখছেন। কিছু ব্যাটসম্যান যদি তাদের সমর্থন দিতে পারতো, তাহলে হয়তো আরও ভালো খেলতে পারতাম। আমরা সেমিফাইনালের দাবিদার হতে পারতাম যদি কয়েকজন ব্যাটসম্যান ওই রকম সমর্থন করতে পারতো।’

সাকিবকে সমর্থন দেয়ার মতো ব্যাটসম্যান খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে একটি নাম উল্লেখ করতেই হবে, মুশফিকুর রহিম। সাকিবের সঙ্গে এই নামটিও গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন সাইফউদ্দিন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকালে সাকিবের পাশে কেবল মুশফিককেই দাঁড় করানো যাবে। একটি সেঞ্চুরি ও দুটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৫৮.৫০ গড়ে এখন পর্যন্ত    ৩৫১ রান করেছেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। বাকিরা থেকে গেছেন নিস্প্রভ, নিরব সদস্য হয়েই।

ক্রিকেটবিশ্বের প্রায় সব দলেই সাকিবের মতো একজন সেনাপতি থাকেন, তাঁর মতো অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধা থাকেন; যে বুক চিতিয়ে একাই লড়ে যান। কিন্তু এমন একজনের পেছনে থাকে আরও কিছু সৈন্য, যারা একইভাবে লড়তে না পারলেও সেনাপতিকে ঢাল-তরবারি এগিয়ে দেয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকেন। বাংলাদেশ দলে এখন সেই সৈন্য না থাকার হাহাকার। এই না থাকার হাহাকার হয়তো কোনো না কোনোভাবে বিশ্বসেরা সাকিবকেও ছুঁয়ে গেছে!