সাক্ষাৎকার

দলকে আমরা অনেক চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিঃ বুলবুল

শান্ত মাহমুদ

শান্ত মাহমুদ
প্রকাশের তারিখ: 21:32 শনিবার, 15 জুন, 2019

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট ||

চারটি ম্যাচ গেছে। এরই মাঝে অনেক জায়গায় রব উঠেছে, ‘সব শেষ’। কারণ চার ম্যাচে মাত্র একটিতে জয় মিলেছে। একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে গেলেও বাকি দুই ম্যাচে হার নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারটি আবার আত্মবিশ্বাসে ছোবল হেনেছে। পারফর্মেন্সের কারণে অনেক ক্রিকেটারকে তোলা হচ্ছে কাঠগড়ায়। এছাড়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই সেমিফাইনালে খেলা নিয়ে রাজ্যের আলাপ তো ছিলই। এসব ব্যাপার বাংলাদেশকে বড় ধরনের চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। এতো এতো আলোচনা-সমালোচনার করার জন্য বিশ্বকাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও আরও অনেক বিষয় নিয়ে ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: অনেক প্রত্যাশা-স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মাশরাফি বিন মুর্তজার দল কি সেই প্রত্যাশার পথে হাঁটতে পারছে?

আমিনুল ইসলাম বুলবুল: আমার কাছে মনে হয় প্রথম যে তিন দলের সঙ্গে বাংলাদেশ খেলেছে, এরপর বাংলাদেশ যে অবস্থানে আছে; সবকিছু মিলিয়ে আমার বাংলাদেশ এখনও কক্ষপথেই আছে। যদিও একটি ম্যাচ বৃষ্টির জন্য হয়নি। হয়তো আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিততেও পারতাম। এরপরেও আমি বলবো, আমরা সঠিক পথেই আছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: তিন ম্যাচ পরে বাংলাদেশ দল নিয়ে আপনার সার্বিক মূল্যায়ন কী?

বুলবুল: সব ম্যাচ জিতলে হয়তো বলতে পারতাম যে সন্তোষজনক। যেহেতু আমরা দুটি ম্যাচ হেরে গিয়েছি, একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে এবং একটিতে জিতেছি, তো আমার কাছে মনে হচ্ছে আমরা কিছু কিছু জায়গায় ভালো করতে পারতাম। এরপরেও আমি বলবো যে দলটি তৈরি হচ্ছে। একটি ভিন্ন কন্ডিশনে খেলছে, ভিন্ন স্ট্যান্ডার্ডে খেলছে। প্রধান ম্যাচগুলোর জন্য বাংলাদেশ এখন তৈরি। 

ক্রিকফ্রেঞ্জি: টুর্নামেন্টের এই অবস্থায় এসে বাংলাদেশ দলকে কোনো পরামর্শ দিতে চান কি না? কিংবা এমন কোনো বিষয় আছে, যে বিষয়টিতে বাংলাদেশ দলের বেশি ফোকাস করা উচিত?

বুলবুল: যেহেতু এবারের বিশ্বকাপটা লম্বা এবং অনেক খেলা, তাই আমি এই মুহূর্তে খেলোয়াড়দের এবং দলকে কোনো প্রেশার দিতে চাই না। আমার কাছে মনে হয় যেভাবে খেলে চলেছে গেম প্ল্যান অনুযায়ী, সেই প্ল্যানটি অনেক জরুরি এখানে। এই প্ল্যানের মধ্যে থাকা উচিৎ কারণ ইংল্যান্ডের যে মাঠগুলোতে খেলা হচ্ছে, সেগুলো একেকটা একেক ধরণের সাইজ, উইকেটও আলাদা ধরণের। এখানে প্ল্যানের মধ্যে থাকাটাই বড় ব্যাপার

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিশ্বকাপে দারুণ শুরুর পর সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড বিপক্ষে হেরে গেছে তারা। এই দুই ম্যাচে ভুল করে নাকি সামর্থ্যেরকারণে হেরেছে বাংলাদেশ? 

বুলবুল: আমার কাছে মনে হয়েছে প্রথম ম্যাচটি আমরা যোগ্য দল হিসেবে জিতেছিআমার কাছে মনে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে এটি দুর্বলতম দল। আপনি যদি সবকিছু মিলিয়ে দেখেন, আমরা অবশ্যই ভালো খেলেছি দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেনিউজিল্যান্ডের সঙ্গেও আমরা ভালো খেলেছি। এরপরও আমি বলবো, বাংলাদেশ একটি অভিজ্ঞ দল হিসেবে ছোট ছোট যে ভুলগুলো করেছে; ওসব না করলেও পারতো। ইংল্যান্ডের সঙ্গে টস থেকে শুরু করে কখনোই মনে হয়নি যে আমরা এই ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক অবস্থায় ছিলাম বা আমরা শক্ত প্রতিপক্ষ আমরা শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভালো খেলেছি। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আমরা নিজেদের দোষে ভুল করেছি। ইংল্যান্ডের সঙ্গে তো আমরা দাঁড়াতেই পারিনি। আর শ্রীলঙ্কার সাথে তো বৃষ্টির কারণে খেলাই হলো না। 

ক্রিকফ্রেঞ্জি: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারটা দলকে মানসিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে দিয়ে কি না? 

বুলবুল: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি কোনোভাবেই আমাদের হারা উচিত হয়নি। কারণ আমরা কম রান করেছিলাম, ৩০০ রান করতে পারিনি। আমাদের টপ অর্ডার থেকে সাকিব, মুশফিককে বাদ দিলে আমরা কিছুই আমরা করতে পারিনি। আমরা কোনো জায়গাতেই ভালো করিনি। আর আমার কাছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দল হিসেবেবাংলাদেশকে কেমন যেন ছাড়া ছাড়া লেগেছিল। তবে আমরা বেশ ভালো একটি সম্ভাবনা তৈরি করেছিলাম, কিন্তু সেটি ধরে রাখতে পারিনি 

ক্রিকফ্রেঞ্জি: শ্রীলঙ্কার ম্যাচ না হওয়ায় আমাদের ক্ষতি হয়েছে কি না? 

বুলবুল: আসলে বৃষ্টিতে তো কারো হাত নেই। শ্রীলঙ্কা খেলতে চেয়েছে, আমরাও খেলতে চেয়েছি। আইসিসিও খেলাতে চেয়েছে। সবাই চেয়েছে যেন খেলাটি হয়এমন একটি ব্যাপার যে এখানে আমাদের কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বৃষ্টিকে দোষ দেয়া বা ধন্যবাদ দেয়া উচিত না। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপেও কিন্তু আমরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মূল্যবান একটি পয়েন্ট পেয়েছিলাম। আমরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও বৃষ্টির সুবিধা নিয়ে সেমিফাইনালে খেলেছিলাম। সুতরাং বৃষ্টি নিয়ে এখানে কারো কিছু করার নেই। এটি কারো নিয়ন্ত্রণে নেই, সুতরাং কিছু বলারও দরকার নেই। 

ক্রিকফ্রেঞ্জি: নির্দিষ্ট করে বলতে বলা হলে কোন বিষয়ের কথা বলবেন, যা বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে খুব দ্রুত শুধরে নেওয়া উচিত বাংলাদেশের?

বুলবুল: আমি এর আগেও বলেছি যে প্ল্যান অনেক জরুরিএই ধরণের টুর্নামেন্টে গেম প্ল্যান করা অনেক জরুরিইংল্যান্ডের সঙ্গে টস থেকে শুরু করে আমার কখনোই মনে হয়নি যে আমরা একটি প্ল্যানের মধ্যে ছিলাম বা আছি। আবার নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আমরা ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হওয়ার পরে বোলিংয়ে কিন্তু দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। অল্প পুঁজি নিয়েও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে প্ল্যানের কারণেআর ইংল্যান্ডের সাথে যে গেম প্ল্যানের কথা বলছিলাম, সেটি আমাদের ছিল না। এই জিনিসগুলো যদি আমরা শিখতে পারি আমাদের সামনের ম্যাচগুলোতে কাজে লাগবে। আরেকটি ব্যাপার এখানে বলে রাখি, আমরা কিন্তু নতুন দল নয়। আফগানিস্তানের মতো কোনো দলনই আমরা আমরা অনেক অভিজ্ঞ এবং এই টুর্নামেন্টে ডেলিভারি করার সময় আমাদের এবং আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে যদি ২০০৩, ১৯৯৯ কিংবা ২০০৭ এর কথা বলেন, তখন দলটি তৈরি হচ্ছিল। সেই গ্রুপটিই খেলছে এখন। এটি আমাদের জন্য সৌভাগ্যের এবং ভালো খেলাটাই স্বাভাবিক এই দলটির জন্য। 

ক্রিকফ্রেঞ্জি: সাকিব আল হাসান তিন নম্বরে ব্যাটিং করার কারণে মিডল অর্ডার কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। এ বিষয়ে আপনার মত কী?

বুলবুল: আমিও তাই মনে করি। কিন্তু সেটি সাকিবের দোষ না, আবার দলেরও না। তিন নম্বর কিন্তু বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় একটি খালি জায়গা ছিল। সেখানে মমিনুল ছিল সবচেয়ে ভালো পছন্দ। কিন্তু আমরা তাঁকে সেভাবে তৈরি করিনি। সুতরাং তিন নম্বরটি সবসময় খালি ছিল। সাকিবের যে কোয়ালিটি বা তাঁর যে ফর্ম, সে সেরা ব্যাটসম্যান হতে পারতো যদি দলের স্বার্থে বলি, সে পাঁচ নম্বরে খেলে শেষ করতে পারতো। যেটি আমাদের এখন নেই। এরপরও আমি বলব যে সে তিনে সফল হয়েছে এবং এই মুহূর্তে তাঁকে সরানো ঠিক হবে না। আমি আশা করবো যেন মাহমুদউল্লাহ অপেক্ষা না করে মুশফিকের পর পরই চলে আসে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: লিটন কুমার দাস খুব ভালো ছন্দে ছিল। কম্বিনেশনের কারণে তাকে খেলানো হচ্ছে না। এমন একজন ব্যাটসম্যানকে কি আপনি বসিয়ে রাখার পক্ষে?

বুলবুল: লিটনের ব্যাপার যেটি হচ্ছে যে, আপনি যদি তাঁকে খেলান তাহলে তাঁকে খেলাতে হবে এক কিংবা দুইয়ে। লিটন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান নয়। যেহেতু আমরা ক্যারি করছি মোসাদ্দেক এবং মিরাজকে, সুতরাং সেখানে তাঁদেরকেই খেলানো উচিতআর লিটনকে যদি খেলাতেই হয় তাহলে তাঁকে টপ অর্ডারে খেলানো উচিত। যেহেতু সাকিব তিন নম্বরে রান করে ফেলেছে এবং ভালো করছে, তাঁকেও বিরক্ত করা ঠিক হবে না। একে তামিম এবং দুইয়ে সৌম্য খেলছে। দুই-একটি ম্যাচে পঞ্চাশ না করলে যেন তামিম অফ ফর্মে আছে, এই ধরণের কথা বলে চাপ না দেয়া হয়। 

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ব্যাটিং অর্ডারে পাঁচ এবং সাত নম্বর জায়গা দুটি কি ঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে? 

বুলবুল: মিঠুন অনেক সম্ভাবনাময় একজন খেলোয়াড়। সে নিউজিল্যান্ডে ভালো খেলেছে এবং পাঁচ নম্বরে নিজেকে প্রমাণ করে এসেছে। মিঠুন ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলছে। ভালো ফর্মে আছে। টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে ঠিকভাবেই কাজে লাগাচ্ছে পাঁচ নম্বরে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় ওই জায়গাটিতে সাব্বিরের আরো ভালো করার সম্ভাবনা ছিল এবং তাঁর অভিজ্ঞতা আছে। আর মোসাদ্দেকের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, তাঁর অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ফর্মে আছে এবং বাড়তি সুবিধা হচ্ছে কিছু ওভার সে বল করতে পারে। তবে এটাও ঠিক. যার যে কাজ, পাঁচের জায়গায় পাঁচের কাজ করা উচিত। সাতের জায়গায় সাতের কাজ করা উচিতআমার কাছে মনে হয়, পাঁচ-সাত এতো কিছু না করে যে দায়িত্বগুলো আছে সেই দায়িত্বগুলো যেন সবাই ফুলফিল করতে পারে আমি আগেও বলেছি, ইংল্যান্ডের একেক মাঠে একেক রকম গেম প্ল্যান নিয়ে দলকে মাঠে নামতে হবে, একেক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে একেকভাবে নামতে হবে গৎবাঁধা নিয়মে যেন না হয়। আমরা কিন্তু গত তিনটি ম্যাচ দেখলাম, আয়ারল্যান্ডে যেভাবে খেলেছি সেভাবেই আমরা চালিয়ে যাচ্ছি, যেটি ভুল। 

ক্রিকফ্রেঞ্জি: কয়েকটি ম্যাচের পরও বাংলাদেশ কি সঠিক কম্বিনেশন পেয়েছে? 

বুলবুল: আমাদের আসলে সঠিক কম্বিনেশন বলে কিছু নেই। যেহেতু আমি বলছিলাম একেক দেশের একেক ধরনের বোলিং, একেক ধরনের সাইজের মাঠ, তাই আমরা যেনকোনো গৎবাঁধা সিস্টেমে না খেলি আমার কাছে মনে হয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে ছাড়া যে দুটি ম্যাচ খেলা হয়েছে সেখানে তেমনটি হয়নি। 

ক্রিকফ্রেঞ্জি: অন্যান্য প্রতিপক্ষের তুলনায় পেস আক্রমণে আমরা পিছিয়ে থাকছি কি না? 

বুলবুল: এই বিশ্বকাপ বা ইংল্যান্ডে যে সময়টিতে খেলা হচ্ছে এখানে কিন্তু সিমাররা সুবিধা পায় কন্ডিশনের কারণে। আমি আগেও ধারণা করেছিলাম, পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজে দেখেছি প্রতিটি ম্যাচ সাড়ে তিনশ করে রান হচ্ছে। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে বিশ্বকাপের উইকেটগুলো এমনটা থাকবে না কারণ এটা ইংল্যান্ডের ট্যাক্টিকস যে,আমরা দেখাবো সারা পৃথিবীকে যে সাড়ে তিনশর উইকেট, কিন্তু আদতে সেটি সাড়ে তিনশর না। সুতরাং আমার কাছে যেটি মনে হয় যে একেকটি পিচ একেক ধরনেরহচ্ছে। সেখানে কিন্তু আমরা ফাস্ট বোলারদের দাপটটি বেশ দেখতে পারছি প্রত্যেক দলে। আমাদের ফাস্ট বোলারদের কেউই হয়তো গতির দিক থেকে সেই পর্যায়ে নেইসবচেয়ে জোরে বল করা বোলারটিকে আমরা বসিয়ে রেখেছি। আর আমার কাছে আরেকটি ব্যাপার যেটি মনে হয়েছে, সেটা কম্বিনেশন। প্রথম থেকে আরেকটি ফাস্ট বোলার যুক্ত হলে ভালো হতো। মিরাজ নিজেকে দলের একজন প্রয়োজনীয় খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছে এবং সেই জন্যই হয়তো একজন অতিরিক্ত পেসার নেয়ার ব্যাপারে অসুবিধা হচ্ছে। অতিরিক্ত পেসার নিলে হয়তো মোসাদ্দেককে বসতে হতে পারে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: গতির বিবেচনায় অতিরিক্ত পেসার হিসেবে তাসকিন আহমেদ ভালো চয়েজ হতো কি না?

বুলবুল: আমি আসলে তাসকিন এবং রাহির ফর্ম সম্পর্কে জানি না। যেহেতু আমি দেশে থাকি না, সুতরাং এটা বলা আমার জন্য কঠিন হবে। তবে যেহেতু আমরা রাহিকে দলে নিয়েছি, সুতরাং অবশ্যই তাঁকে পুরোপুরি সুযোগটি দেয়া উচিতআর এখন মিডল অফ দ্যা রোড যদি আমরা ভাবতে থাকি যে তাসকিন আরো ভালো বোলার, তাহলে আমি বলবো যে নির্বাচন ভুল ছিল। 

ক্রিকফ্রেঞ্জি: পাঁচটি ম্যাচ আছে বাংলাদেশের। এই অবস্থায় সেমিফাইনালের কথা চিন্তা করা কতটা বাস্তবসম্মত? 

বুলবুল: আমি বলবো, আমরা খুব নেতিবাচক অতিরিক্ত চাপ দিয়ে চলেছি প্রত্যেকটি ম্যাচে আমাদের দলকে। সেমিফাইনালে খেলতে হলে কিন্তু আমাদের অপেক্ষা করতে হবে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত যেটি পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা লর্ডসে খেলবো। প্রথম ম্যাচ থেকেই আমরা বলে চলেছি যে সেমিফাইনালে খেলবো। একটি ম্যাচ খেলে তো সেমিফাইনালে যাওয়া যাবে না। আমরা অনেক চাপ দিয়ে ফেলেছি দলকে এরই মধ্যে। সুতরাং সেমিফাইনালের চাপটা এই মুহূর্তে অন্তত আমরা উইথড্র করি এবং ম্যাচ বাই ম্যাচ জিততে থাকি। অবশ্যই আমাদের সেই সক্ষমতা আছে, অভিজ্ঞতা আছে, ফর্ম ভালো। সুতরাং সেই লক্ষ্যে খেলা উচিৎ। আমরা খেলোয়াড়দেরকে অযথা অনেক বেশি চাপ দিচ্ছি। মাত্র তিনটি খেলা হয়েছে, একটিতে তো বৃষ্টি হলো নাএর মধ্যে আমরা তামিমের ফর্ম নিয়ে কথা বলা শুরু করেছি। সবচেয়ে সফল অধিনায়ক এবং যার ইকোনমি রেট ফাস্ট বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সেই মাশরাফির বোলিং নিয়ে সমালোচনা করছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: তামিম ইকবাল এবং মাশরাফি বিন মুর্তজার পারফর্মেন্স নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। টুর্নামেন্ট চলাকালীন এমন সমালোচনা কখনও কখনও ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে কি না? 

বুলবুল: আমাদের প্রত্যেক খেলোয়াড়দের প্রতি পুরোপুরি আস্থা থাকা উচিতআস্থা থাকা উচিত এই জন্য যে সকলেই প্রমাণিত ভালো খেলোয়াড় এবং তাঁরা পূর্বেও ভালো খেলেছে এবং তাঁদের ভালো খেলার সম্ভাবনা আছে আমার কাছে মনে হয়নি এখন পর্যন্ত একটি খেলোয়াড়ও দলে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ডাক পেয়েছে বা দলে তাঁদের যোগ্যতা নেই এটি কিন্তু ভুল। আমরা তামিমের মতো খেলোয়াড়কে নিয়ে বলা শুরু করেছি যে অফ ফর্মে আছে। মাশরাফির মতো ক্রিকেটার, যে কি না শুধু একজন ফাস্ট বোলার না,দলটিকে তিনি দারুণভাবে পরিচালনা করে আসছেন দুই-একটি ম্যাচ দিয়ে আমরা এতোবড় কথা ফেলি, যা একেবারে ভুল। আমার কাছে মনে হয় কাউকেই বিরক্ত করা উচিত নয়। একেবারে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত, সব খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আমরা আমাদের মন্তব্যগুলো যেন করা শুরু করি। এই মুহূর্তে শান্তিমতো, সুস্থভাবে খেলার জন্য যে আত্মবিশ্বাস দরকার, তাঁদেরকে আমরা সেটা দিতে থাকি এবং টুর্নামেন্ট শেষে আমরা পর্যালোচনা করবো কে ভালো খেললো বা খারাপ খেললো। আর ক্রিকেট খেলা তো বিশ্বকাপের পরে শেষ হয়ে যাবে না আমাদের। আমরা আরও সুন্দর প্ল্যান করে এগোতে পারবো। আমার বিশ্বাস এই দলটি বহুদূর যাবে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বৃষ্টিতে বেশ কয়েকটি ম্যাচ ভেসে গেছে। বিশ্বকাপের মতো আসরের কথা মাথায় রেখে ড্রেনেজ বা মাঠ ঢাকার ব্যাপারে আয়োজক দেশের আরেকটু যত্নশীল হওয়া উচিত ছিল কি না?

বুলবুল: আসলে এই ব্যাপারটি তো কারো হাত নেই। আর এটি তো টি-টোয়েন্টি খেলা না যে পাঁচ ওভারের খেলাই হতে হবে বা সুপার ওভারে খেলাটি শেষ করে দেয়া যাবে। এটি পঞ্চাশ ওভারের খেলা, প্লেয়িং কন্ডিশন বা এর সম্পূর্ণ প্লেয়িং কন্ডিশন আলাদা। এই ২০১৯ সালে আপনি যদি ইংল্যান্ডের মাঠগুলোর দিকে তাকান তাহলে দেখবেন একমাত্র রোজবল বাদে সবগুলো মাঠের আকৃতি অন্যরকম। আপনি যদি আমাদের সহযোগী সদস্য দেশ মালয়েশিয়ার কথা ভাবেন, যেখানে সাড়া বছর বৃষ্টি হয়; সেখানেও কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার আধা ঘন্টা পরে খেলা হয় ড্রেনেজ সিস্টেম ভালো থাকার জন্য। আমাদের মিরপুর বা চিটাগংয়ের কথা ভাবেন, সারা দিন বৃষ্টি হওয়ার পরও খেলা হয়। ইংল্যান্ডের যে মাঠগুলোতে খেলা হচ্ছে, রোজবল, ওভাল এবং লর্ডস- এর বাইরে যে ড্রেনেজ সিস্টেম আছে, ভালো নয়। বিশেষ করে ব্রিস্টল, আমার কাছে কখনোই মনে হয়নি আমাদের বাংলাদেশের কোনও ভেন্যু থেকে ভালো। সাইজ থেকে শুরু করে আপনি সবকিছু দিক দিয়ে যদি দেখেন। আমার কাছে মনে হয় যে ইংল্যান্ডে যেহেতু খেলা হবে, আমরা সবাই জানতাম; আমার মনে হয় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আরেকটু প্রস্তুতি তারা নিয়ে ভালো করে রাখতে পারতো। মাঠগুলো কাভার করার জন্য আরেকটু ব্যবস্থা আমরা নিতে পারতাম। আমরা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করছি বিভিন্ন জায়গায়, কিন্তু এখানে খামখেয়ালি করা হয়েছে। আর এত বড় বড় ম্যাচ যেমন শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ,ভারত-নিউজিল্যান্ড; এই যে বড় বড় ম্যাচগুলো বাতিল হয়ে গেল, দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ বাতিল হয়ে গেল- এত বড় ম্যাচ তো আর বিশ্বকাপে আসবে না।