বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ দল পরিচিতিঃ অস্ট্রেলিয়া

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 23:53 রবিবার, 19 মে, 2019

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

বর্তমানে আইসিসি ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে পঞ্চম অবস্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া। টেস্ট ও টি-টুয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ে যথাক্রমে পঞ্চম ও চতুর্থ অবস্থানে আছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরাদের কাতারে না থাকলেও বিশ্বকাপ চিরাচরিত ফেভারিট দল অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের ঠিক আগে ভারত ও পাকিস্তানকে তাদের আঙ্গিনায় হারিয়ে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

গত দুই বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গেলেও ঠিক যখন বিশ্বকাপ দুয়ারে, তখনই এলোমেলো ঘর সাজিয়ে নিয়েছে অজিরা। বরাবরের মত এবারও অন্যতম ফেভারিটের তকমা গায়ে মেখে বিশ্বকাপে যাবে অ্যারন ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া।

হ্যাট্রিক শিরোপা জয়, ১১টি বিশ্বকাপের আসরে সাতবারই ফাইনাল খেলা, টানা ৩৪ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড, পর পর দুইবার অপরাজিত বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া...বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান জুড়ে সদা দাপুটে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় টুর্নামেন্টটি কত যে রঙিন করা যায়, তা অস্ট্রেলিয়ার দেখিয়ে দিয়েছে বারংবার।

বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যাটিং শক্তি বাড়াবে দলে ফেরা স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার। ফর্মে থাকা অ্যারন ফিঞ্চ, উসমান খাজা, শন মার্শদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলাবে অস্ট্রেলিয়া। অ্যালেক্স ক্যারি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টইনিসরা মিডেল অর্ডারের দায়িত্ব সামাল দিবেন। তবে ম্যাক্সওয়েল হবে বড় স্কোর তাড়া করার ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া দলের মূল চাবিকাঠি।

এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণ অস্ট্রেলিয়ার। ইনজুরি ফেরত মিচেল স্টার্ক এর সাথে দারুণ ফর্মে থাকা প্যাট কামিন্সকে পুরো আসরে সম্পূর্ণ ফিট অবস্থায় পেতে চাইবে অস্ট্রেলিয়া। জাই রিচার্ডসন ইনজুরির কারণে স্কোয়াড থেকে ছিটকে পড়ায় সুযোগ পাওয়া কেন রিচার্ডসনকে ব্যবহার সিমিং কন্ডিশনে ব্যবহার করতে চাইবে অজিরা। এছাড়া ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি বিশেষজ্ঞ ন্যাথান কোল্টার-নাইল অজিদের বোলিং আক্রমণের গভীরতার প্রমাণ। বাঁহাতি পেসার জ্যাসন বেহেনড্রফ অজি বোলিং আক্রমণে বৈচিত্র্য যোগ করবে।

স্পিন আক্রমণ সামলাবেন অভিজ্ঞ অফ স্পিনার ন্যাথান লায়ন ও লেগ স্পিনান  অ্যাডাম জ্যাম্পা। দুজনই সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ফর্মে আছেন।

অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াড বিশ্লেষণ –

স্টিভ স্মিথঃ বল বিকৃতির অভিযোগে এক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হওয়া স্টিভ স্মিথ আসন্ন বিশ্বকাপ দিয়ে ক্রিকেটে ফিরবেন। গত বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রাখা স্মিথ এবারও নিঃসন্দেহে অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং অর্ডারের মূল ভরসা। সাম্প্রতিক ফর্মও স্মিথের পক্ষে কথা বলছে। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার অনানুষ্ঠানিক ওয়ানডে সিরিজে পর পর দুই ম্যাচে অপরাজিত ৮৯ ও ৯১ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি।

ডেভিড ওয়ার্নারঃ স্টিভ স্মিথের মতই দীর্ঘ এক বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যাচ্ছেন আগ্রাসী ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। তবে আইপিএলের ১২তম আসরে মাত্র ১২ ম্যাচ খেলে ৬৯২ রান করেন। বিশ্বকাপেও আইপিএলের মত বড় আসরের ফর্ম ধরে রাখতে চাইবেন ওয়ার্নার। এখন পর্যন্ত ১০৬ ওয়ানডে খেলে ৪৩ গড় ও ৯৬ স্ট্রাইক রেটে ৪৩৪৩ ওয়ানডে রান করেছেন তিনি। 

গ্লেন ম্যাক্সওয়েলঃ ১০০ ওয়ানডে খেলা অজি অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৩৩ গড় ও অবিশ্বাস্য ১২১ স্ট্রাইক রেটে ২৭০০ রান করেছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে ম্যাক্সওয়েলের একটি সেঞ্চুরি এসেছে গত বিশ্বকাপে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এবারের বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়া দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের একজন তিনি। 

মিচেল স্টার্কঃ গত বিশ্বকাপে ২২ উইকেট নিয়ে শীর্ষ বোলার ছিলেন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্ক। এবারের বিশ্বকাপে আরও পরিনত ও শাণিত স্টার্ককে দেখতে চাইবে অজিরা। অস্ট্রেলিয়ান বোলিং আক্রমণের অন্যতম নেতা হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব সামলাতে হবে তাঁকে।

প্যাট কামিন্সঃ গত দুই বছর ধরে অবিশ্বাস্য ফর্মে আছেন ডানহাতি ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স। মাত্র ৪৮ ম্যাচ খেলে ৮২ উইকেট শিকার করা কামিন্স ছোট্ট ক্যারিয়ারে চারবার ৪ উইকেট শিকার করেছেন, ৫ উইকেট নিয়েছেন একবার। এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং আক্রমণে মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন তিনি। লোয়ার অর্ডারে দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রেও পটু কামিন্স।

অ্যারন ফিঞ্চঃ ডেভিড ওয়ার্নারের সাথে ইনিংসের সূচনা করবেন অ্যারন ফিঞ্চ। ১০৯ ওয়ানডে খেলে ৪ হাজার রান করা ফিঞ্চ শেষ পাঁচ ইনিংসে দুইটি ফিফটি ও দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। অবিশ্বাস্য ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপে যাচ্ছেন অজি কাপ্তান।

উসমান খাওয়াজাঃ ওয়ানডে দলের নিয়মিত সদস্য না হলেও স্মিথ-ওয়ার্নাররা না থাকায় সুযোগ পেয়েছিলেন খাওয়াজা। সুযোগটা দুই হাত ভরে নিয়েছেন ৩২ বছর বয়সী এই বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন তিনি। দুই সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি ও চারটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন, যার মধ্যে দুইটি ইনিংসই নব্বইয়ের ঘরে।

শন মার্শঃ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান শন মার্শ ২০০৮ সালে ওয়ানডে ক্যাপ পেলেও অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলে জায়গা পাকা করতে পারেননি। ৩৫ বছর বয়সী মার্শের জন্য এবারের বিশ্বকাপই হয়তো শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৭১টি ওয়ানডে খেলে ৭ সেঞ্চুরি ও ১৫ ফিফটিতে ২৭৪৭ রান করেছেন তিনি।

অ্যালেক্স ক্যারিঃ অস্ট্রেলিয়া দলে একমাত্র উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে আছেন অ্যালেক্স ক্যারি। মাত্র ১৩ ওয়ানডে খেলা ক্যারি ব্যাট হাতে এখনো নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। ২৭ বছর বয়সী এই সম্ভাবনাময় তরুণকে ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। অ্যালেক্স ক্যারির জন্য বিশ্বকাপ হতে পারে নিজেকে চেনানোর মঞ্চ।

মার্কাস স্টইনিসঃ ২৯ বছর বয়সী অলরাউন্ডার স্টইনিস এখন পর্যন্ত ৩৩ ওয়ানডে খেলেছেন। ছোট্ট ক্যারিয়ারে ব্যাটে বলে দারুণ পারফর্মেন্স দিয়েছেন তিনি। ছোট্ট ক্যারিয়ারে একটি সেঞ্চুরি ও ছয়টি ফিফটি হাঁকিয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে স্টইনিস অস্ট্রেলিয়ার টিম কম্বিনেশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার হতে পারেন।  

কেন রিচার্ডসনঃ পেসার জাই রিচার্ডসনের বদলী হিসেবে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়া কেন রিচার্ডসন এখন পর্যন্ত ২০ ম্যাচ খেলেছেন। পেস বোলিং সহায়ক কন্ডিশনে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন তিনি। ইতিমধ্যে একবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।

ন্যাথান কোল্টার-নাইলঃ সাদা বলের ক্রিকেটের বিশেষজ্ঞ ন্যাথান কোন্টার-নাইল অজি বিশ্বকাপ একাদশের প্রথম পছন্দ হতে যাচ্ছেন। কামিন্স ও স্টার্কের পর তৃতীয় পেসার হিসেবে বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকবেন তিনি।

জ্যাসন বেহেনড্রফঃ মিচেল স্টার্কের ব্যাক আপ হিসেবে নির্বাচকদের প্রথম পছন্দ ছিল দীর্ঘদেহী বাঁহাতি ফাস্ট বোলার জ্যাসন বেহেনড্রফ। মাত্র ছয় ওয়ানডে খেলা জ্যাসন ছোট্ট ক্যারিয়ারে ভবিষ্যৎ তারকা বনে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিশ্বকাপে সুযোগ পেলে নিজেকে চেনানোর জন্য মুখিয়ে থাকবেন এই বাঁহাতি পেসার।

ন্যাথান লায়নঃ টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে আধুনিক ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বোলারে পরিনত করেছেন ন্যাথান লায়ন। তবে ওয়ানডে ক্রিকেটে কখনই নিয়মিত ছিলেন না এই অভিজ্ঞ অফ স্পিনার। তবে অস্ট্রেলিয়ার এবারের বিশ্বকাপ পরিকল্পনার বড় অংশ জুড়ে আছেন লায়ন। মাত্র ২৫ ওয়ানডে খেলে ২৬ উইকেট নেয়া লায়নের জন্য এবারের বিশ্বকাপ সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ।

অ্যাডাম জ্যাম্পাঃ ৪৪ ওয়ানডে খেলা লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পা সাদা বলের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার নাম্বার ওয়ান স্পিনার। জ্যাম্পার নামের পাশে ৬০টি ওয়ানডে উইকেট আছে। মিডেল ওভারে লেগ স্পিন দিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার দায়িত্ব সামলাতে হবে জ্যাম্পাকেই।