বিশ্বকাপ স্পেশাল

ইতিহাসে ১৯৭৫ এর বিশ্বকাপ

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশের তারিখ: 14:28 বুধবার, 15 মে, 2019

|| বিশ্বকাপ স্পেশাল ||

ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্মের ঠিক চার বছর পর ১৯৭৫ সালে আয়োজিত হয় ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ। ওয়ানডে ক্রিকেট তখন সবেমাত্র হাঁটতে শিখেছে। বিশ্বকাপের আগপর্যন্ত আন্তর্জাতিক ওয়ানডে খেলাই হয়েছে মাত্র ১৮টি! একমাত্র 'ইংল্যান্ড' ছাড়া অন্য দলগুলোর বেশিরভাগেরই ওয়ানডে অভিজ্ঞতা ছিল বলতে গেলে শূন্যের কোটায়। এমন একটা সময় বিশ্বকাপের মত বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি এবং খেলাটির বাণিজ্যিক প্রসার।

১৯৭৫ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা ছিল আট। ১৫ দিনব্যাপী ইংল্যান্ডের পাঁচটি শহরের ছয়টি ভেন্যুতে আয়োজিত হয় মোট ১৫টি ম্যাচ। ভেন্যুগুলো ছিল যথাক্রমে লর্ডস, ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, হেডিংলি, এজবাস্টন, ট্রেন্টব্রিজ এবং কেনিংটন ওভাল। টুর্নামেন্টের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল প্রুডেন্সিয়াল অ্যাসিউরেন্স কোম্পানি। আসরের নামকরণও হয়েছিল তাদের নামে; প্রুডেন্সিয়াল কাপ!

প্রথম রাউন্ডে আট দল খেলেছিল দুটো গ্রুপে ভাগ হয়ে। গ্রুপ এ-তে ছিল ইংল্যান্ড, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও পূর্ব আফ্রিকা। আর গ্রুপ বি-তে ছিল অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শ্রীলঙ্কা। টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহ্য বজায় রেখে খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাদা পোশাক আর লাল বলে। টুর্নামেন্টের সবক'টি ম্যাচই হয়েছিল দিনে আর প্রতিটি ইনিংসের দৈর্ঘ্য ছিল ৬০ ওভার।

ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপ আয়োজনের পেছনে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিল 'ইংলিশ সামারের' দীর্ঘ দিন। গ্রীষ্মকালে সেখানে সন্ধ্যা নামত বেশ দেরি করে। এই সুবিধাটাকেই কাজে লাগিয়েছিল আইসিসি। তাছাড়া ক্রিকেটীয় ঐতিহ্য ও অবকাঠামোগত সামর্থ্যের দিক থেকেও অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল ইংলিশরাই।

গ্রুপ "এ" থেকে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড আর গ্রুপ বি" থেকে সেমিফাইনালে উঠেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া। ফাইনাল হয়েছিল সেমিফাইনালে বিজয়ী দুই দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে। ইয়ান চ্যাপেলের অস্ট্রেলিয়াকে ১৭ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

গ্রুপ পর্বে ভারত এবং পাকিস্তান একটি করে ম্যাচ জিতলেও দুই সহযোগী সদস্য শ্রীলঙ্কা ও পূর্ব আফ্রিকা বিদায় নিয়েছিল খালি হাতে। মজার ব্যাপার হল,  পূর্ব আফ্রিকা' নামে যে দলটি অংশগ্রহণ করেছিল, সেটি ছিল আসলে কেনিয়া, উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া এবং জাম্বিয়া - এই চারটি দেশের খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে গড়া। বিতর্কিত বর্ণবাদনীতির কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা নিষিদ্ধ থাকায় সরাসরি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছিল দলটি।

৭ জুন, ১৯৭৫। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী দিনে লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। ওপেনার ডেনিস অ্যামিসের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির (১৪৭ বলে ১৩৭) সঙ্গে কিথ ফ্লেচারের ৬৮ ও ক্রিস ওল্ডের ৩০ বলে ৫১ রানের 'ক্যামিও'র সৌজন্যে নির্ধারিত ৬০ ওভারে ইংল্যান্ড তুলেছিল ওয়ানডেতে সে সময়ের রেকর্ড ৩৩৪ রান। জবাব দিতে নেমে ভারত করেছিল ৩ উইকেটে ১৩২ রান! হেরেছিল ২০২ রানের রেকর্ড ব্যবধানে!

তখন এমনিতেই অত বড় স্কোর তাড়া করে জেতার কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবত না। তার ওপর দল হিসেবে ভারত তখন ওয়ানডেতে একেবারেই কাঁচা। প্রথম ইনিংসের পরই তাই ম্যাচ কার্যত শেষ। তাই বলে লক্ষ্যের কথা ভুলে গিয়ে ভারতের এমন শম্বুকগতির ব্যাটিং কারও কল্পনাতেও ছিল না। যার নেতৃত্বে ছিলেন ব্যাটিং গ্রেট সুনীল গাভাস্কার! বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তোলা তো দূরের কথা, গাভাস্কারের অতি রক্ষণাত্মক বিরক্তিকর ব্যাটিং অনেক টেস্ট ইনিংসকেও হার মানিয়েছিল!

প্রথমে সবাই ভেবেছিল গাভাস্কার বুঝি বলটা পুরোনো হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু যত সময় গড়াচ্ছিল, গাভাস্কার যেন রানের কথা আরও ভুলে যাচ্ছিলেন। ইংলিশ দর্শকরা তো বটেই, একপর্যায়ে ভারতীয় দর্শকেরাও অধৈর্য হয়ে উঠলেন। দু-একজন তো মাঠেই ঢুকে পড়তে যাচ্ছিলেন! ব্যালকনিতে ভারতীয় সতীর্থদের প্রতিক্রিয়াই বলে দিচ্ছিল, তাঁরাও এ ঘটনায় বিব্রত। শেষ পর্যন্ত পুরো ৬০ ওভার খেলে ১৭৪ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেন গাভাস্কার।

কেন এমনটা করেছিলেন গাভাস্কার? কারণটা আজও রহস্য হয়েই আছে। গাভাস্কার সে সময় কিছু বলেননি। তবে অনেক বছর পরে বলেছিলেন, ‘সেদিন না পারছিলাম রান করতে, না পারছিলাম আউট হতে। কী যে মানসিক যন্ত্রণা! মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছিল ইচ্ছে করে আউট হয়ে যাই। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই আমি কট বিহাইন্ড ছিলাম। কিন্তু এজটা এতই সুক্ষ্ম ছিল যে কেউ আবেদনও করেনি। আমিও তাই উইকেট ছাড়ি নি। কেন যে তখন উইকেট ছেড়ে চলে এলাম না!’

একই দিনে বার্মিংহামে 'বি' গ্রুপের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল নিউজিল্যান্ড ও পূর্ব আফ্রিকা। অধিনায়ক গ্লেন টার্নারের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে (১৭১*) ভর করে ১৮১ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছিল ব্ল্যাক ক্যাপসরা। 

উল্লেখ্য, ওই ম্যাচেই ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ব্যাটিং-বোলিং দুটোই ওপেন করেছিলেন পূর্ব আফ্রিকার অলরাউন্ডার ফ্রাসাত আলী। যিনি ৯ ওভার বল করে ৫০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকলেও পরে ব্যাটিংয়ে নেমে করেছিলেন ১২৩ বলে ৪৫ রান।

টুর্নামেন্টের প্রথম চারদিনে গড়িয়েছিল আটটি ম্যাচ। কিন্তু সবগুলো ম্যাচেরই ফলাফল ছিল একতরফা। ফলে বিশ্বকাপ নিয়ে দর্শক-অনুরাগীদের মধ্যে এক ধরনের চাপা হতাশা ও একঘেয়েমি কাজ করছিল। আর ঠিক তখনই এজবাস্টনে পাকিস্তান বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ম্যাচটি জন্ম দিয়েছিল উত্তেজনা-রোমাঞ্চ-নাটকীয়তায় ভরপুর এক রূদ্ধশ্বাস থ্রিলারের।

পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটি ছিল 'ডু অর ডাই'। মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছিলেন নিয়মিত অধিনায়ক আসিফ ইকবালের অনুপস্থিতিতে নেতৃত্ব দেয়া মাজিদ খান। ওয়াসিম রাজার ৫৮, মাজিদ খানের ৬০ এবং মুশতাক মুহম্মদের ৫৫ রানের সুবাদে নির্ধারিত ৬০ ওভারে পাকিস্তান করেছিল ৭ উইকেটে ২৬৬ রান। 

জবাব দিতে নেমে ডানহাতি সুইং বোলার সরফরাজ নওয়াজের তোপে মাত্র ৩৬ রানেই ৩ উইকেট খুইয়ে বসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪র্থ উইকেটে রোহান কানহাইকে নিয়ে ৪৮ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় খানিকটা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড (৫৩)। কিন্তু কানহাইয়ের (২৪) বিদায়ের পর থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা। ফলে এক পর্যায়ে উইন্ডিজের স্কোর দাঁড়ায় ২০৩/৯!

মাত্র ১ উইকেট হাতে নিয়ে জয়ের জন্য তখনও লাগে ৬৪ রান! ক্রিজে স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে আছেন কেবল উইকেটরক্ষক ডেরেক মারে। পৃথিবীর সবচাইতে আশাবাদী মানুষটিও বোধ হয় সেই মুহূর্তে জেতার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সব হিসাব নিকাশ পালটে দিয়ে শেষ উইকেট জুটিতে প্রয়োজনীয় ৬৪ রান তুলে দলকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিয়েছিলেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান ডেরেক মারে (৬১*) ও অ্যান্ডি রবার্টস (২৪*)।

গ্রুপ পর্বের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে চুনোপুঁটি শ্রীলঙ্কার বীরোচিত লড়াই। অজিদের ছুঁড়ে দেয়া ৩২৯ রানের জবাবে পুরো ৬০ ওভার খেলে লঙ্কানরা করেছিল ৪ উইকেটে ২৭৬। অস্ট্রেলিয়ার মত শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যা মোটেই চাট্টিখানি ব্যাপার ছিল না। গতিদানব জেফ থমসনের গোলার আঘাতে 'রক্তাক্ত' ও 'আহত' দুই লঙ্কান ব্যাটসম্যানকে সেদিন যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। এরপরেও দমে যায় নি টেস্ট পরিবারের বাইরে থাকা এই সদস্য দেশটি; লড়েছিল বুক চিতিয়ে। 

গ্রুপ পর্বের 'হাই-ভোল্টেজ' শেষ ম্যাচে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে পরাজিত করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যে ম্যাচের হাইলাইটস হয়ে থাকবে 'লিলি বনাম কালিচরণ' দ্বৈরথ।

প্রথমে ব্যাট করে সবকটি উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া করেছিল ১৯২ রান। জবাব দিতে নেমে শুরুতেই গ্রিনিজকে হারালেও আরেক ওপেনার রয় ফ্রেডেরিক্সকে (৫৮) নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ১২৪ রানের ম্যাচ উইনিং পার্টনারশিপ গড়েন বাঁহাতি স্ট্রোকমেকার আলভিন কালিচরণ। লিলি, থমসন, ম্যাক্স ওয়াকারদের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়ার বোলিং লাইনআপটা ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী। অথচ এই বোলিং আক্রমণকেই অবলীলায় পিটিয়ে তুলোধুনো করেছিলেন আলভিন; খেলেছিলেন ১৪ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ৭৮ বলে ৮৩ রানের দৃষ্টিনন্দন এক ইনিংস। ঝড়টা সবচেয়ে বেশি গিয়েছিল 'স্পিডস্টার' ডেনিস লিলির ওপর দিয়ে। এক পর্যায়ে লিলির টানা ১০ বল থেকে ৩৫ রান (৪,৪,৪,৪,৪,১,৪,৬,০,৪) তুলে নেন তিনি!

'কালিচরণ ভার্সেস লিলি' রোমাঞ্চকর দ্বৈরথের বিবরণ দিয়ে উইজডেন লিখেছিল, “Kallicharran's silken smooth strokes were in evidence right from the start. He was particularly severe on Dennis 'Tiger' Lillee. The great pacer was left bewildered as he had rarely been treated with such disdain. As Kallicharran waded into him, Lillee bowled faster, only to be hit harder by the elegant left-hander.”

টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড। হেডিংলির সবুজাভ সিমিং উইকেটে অস্ট্রেলিয়া নেমেছিল চার পেসার নিয়ে। ডেনিস লিলি, জেফ থমসন, ম্যাক্স ওয়াকারের সাথে 'নবাগত' গ্যারি গিলমোর। বিশ্বকাপ অভিষেকেই বল হাতে বাজিমাত করেছিলেন যিনি! টানা ১২ ওভারের উদ্বোধনী স্পেলে ৬ উইকেট নিয়ে ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপকে বলতে গেলে একাই ধসিয়ে দিয়েছিলেন এই বাঁহাতি সুইং বোলার! ভয়ঙ্কর সুন্দর এই স্পেলকে (১২-৬-১৪-৬) বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা স্পেল বললেও অত্যুক্তি হবে না! গিলমোর তান্ডবে ইংরেজরা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৩ রানে। 

গিলমোর ম্যাজিকের এখানেই শেষ নয়। ৯৪ রানের মামুলি টার্গেট তাড়া করতে নেমে মাত্র ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে অজিরা যখন খাদের কিনারায়, তখন এই গিলমোরই বাঁচিয়েছিলেন তাদের! উপহার দিয়েছিলেন ৫ বাউন্ডারিতে সাজানো ২৮ বলে ২৮ রানের মহামূল্যবান এক ইনিংস: সপ্তম উইকেটে ডগ ওয়াল্টার্সকে (২০*) নিয়ে গড়েছিলেন ৫৫ রানের ম্যাচ উইনিং পার্টনারশিপ। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচসেরাও হয়েছিলেন গিলমোর।

প্রথম সেমিফাইনালের তুলনায় দ্বিতীয় সেমিফাইনালটাকে বরং একপেশেই বলা ভাল। নিউজিল্যান্ডকে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫৮ রানে বেঁধে ফেলে ক্যারিবিয়ান পেসাররা। অথচ এক পর্যায়ে কিউইদের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ১০৫ রান! টুর্নামেন্টের টপ স্কোরার গ্লেন টার্নার (৩৬) ও জিওফ হাওয়ার্থের (৫১) বিদায়ের পরই মূলত পথ হারিয়ে ফেলে দলটি। ডানহাতি পেসার বার্নার্ড জুলিয়েন মাত্র ২৭ রান দিয়ে শিকার করেন চার উইকেট।

জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে গর্ডন গ্রিনিজের ৫৫ এবং আলভিন কালিচরণের ৭২ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের উপর ভর করে ৫ উইকেট ও ১১৯ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় ক্যারিবিয়ানরা।

'হোম অব ক্রিকেট' খ্যাত লর্ডসের ফাইনালটা ছিল সত্যিকার অর্থেই একটি ক্ল্যাসিক। সেমিফাইনালের পর ফাইনালেও বল হাতে বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন টুর্নামেন্টের 'সারপ্রাইজ প্যাকেজ' গ্যারি গিলমোর। ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েড, আলভিন কালিচরণ, রোহান কানহাইয়ের উইকেটসহ একাই নিয়েছিলেন ৫ উইকেট; গড়েছিলেন বিশ্বকাপ ফাইনালে সেরা বোলিং ফিগারের (১২-২-৪৮-৫) রেকর্ড। তবে অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের ১২ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ৮৫ বলে ১০২ রানের 'মহাকাব্যিক' ইনিংসের সৌজন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পায় ২৯১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর।

জবাবে শুরুটা ভাল হলেও মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলা অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয় ২৭৪ রানে। অলরাউন্ডার কিথ বয়েস নেন ৪ উইকেট। স্নায়ুচাপে ভুগে রানআউটের শিকার হন অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ ব্যাটসম্যান! ব্যাট হাতে মাত্র ৫ রান করা ভিভ রিচার্ডস নজর কেড়েছিলেন ফিল্ডিং দিয়ে! সরাসরি থ্রো থেকে তিনি রান আউট করেছিলেন 'চ্যাপেল ব্রাদার্স'সহ প্রথম সারির তিন অজি ব্যাটসম্যানকে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

উইন্ডিজ: ৬০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯১ (কানহাই ৫৫, লয়েড ১০২, কিথ বয়েস ৩৪, গিলমোর ৫/৪৮)

অস্ট্রেলিয়া: ৫৮.৪ ওভারে ২৭৪ অলআউট (অ্যালান টার্নার ৪০, ইয়ান চ্যাপেল ৬২, ডগ ওয়াল্টার্স ৩৫, কিথ বয়েস ৪/৩৫)

ম্যাচসেরা: ক্লাইভ লয়েড।

এবারে চলুন এক নজরে দেখে নিই ১৯৭৫ বিশ্বকাপের উল্লেখযোগ্য কিছু পরিসংখ্যান।

ব্যাটিং:

• সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর: ইংল্যান্ড ৩৩৪/৪, বিপক্ষ ভারত।

• সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক: গ্লেন টার্নার (নিউজিল্যান্ড) ১৬৬.৫০ গড়ে ৩৩৩ রান; দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন ডেনিস অ্যামিস (ইংল্যান্ড) ৮৪.৩৮ গড়ে ২৪৩ রান।

• ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস: গ্লেন টার্নার ১৭১*, বিপক্ষ পূর্ব আফ্রিকা।

• সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি: গ্লেন টার্নার দুটি (১৭১* ও ১১৪); এছাড়া একটি করে সেঞ্চুরি হাঁকান অ্যালান টার্নার (অস্ট্রেলিয়া), ডেনিস অ্যামিস (ইংল্যান্ড), কিথ ফ্লেচার (ইংল্যান্ড) এবং ক্লাইভ লয়েড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

• সবচেয়ে বেশি হাফ সেঞ্চুরি: মাজিদ খান (পাকিস্তান) ৩টি; এছাড়া দুটি করে ফিফটি হাঁকান আলভিন কালিচরণ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) এবং রস এডওয়ার্ডস (অস্ট্রেলিয়া)।

• সবচেয়ে বেশি ছক্কা: ক্রিস ওল্ড (ইংল্যান্ড), ৩টি।

বোলিং:

সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি: গ্যারি গিলমোর (অস্ট্রেলিয়া) ১১ উইকেট; এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের বার্নার্ড জুলিয়েন এবং কিথ বয়েস নিয়েছিলেন ১০টি করে উইকেট।

সেরা বোলিং: গ্যারি গিলমোর ৬/১৪, বিপক্ষ ইংল্যান্ড

৫ উইকেট: ৩টি, গিলমোর দুটি (৬/১৪ ও ৫/৪৮) এবং ডেনিস লিলি একটি (৫/৩৪)।

উইকেটকিপিং:

সর্বোচ্চ ডিসমিসাল: রডনি মার্শ (অস্ট্রেলিয়া), ১০টি।

এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ডিসমিসাল: ডেরেক মারে (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) ৪টি, বিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।

ফিল্ডিং:

সর্বোচ্চ ক্যাচ: ক্লাইভ লয়েড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ) ৪টি

এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ: ক্লাইভ লয়েড ৩টি, বিপক্ষ শ্রীলঙ্কা।