বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ দল পরিচিতিঃ নিউজিল্যান্ড

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 09:48 রবিবার, 12 মে, 2019

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

২০১৯ বিশ্বকাপ উপলক্ষে ক্রিকফ্রেঞ্জির পাঠকদের জন্য বিশ্বকাপে অংশ নেয়া দশ দলের পরিচিতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের আলোচ্য দল নিউজিল্যান্ড।

বিশ্বকাপের আসরে সবচেয়ে ধারাবাহিক দল গুলোর একটি নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ছয়বার সেমিফাইনাল খেলার রেকর্ড রয়েছে কিউইদের। তবে ২০১৫ সালের সর্বশেষ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল ব্র্যান্ডন ম্যাককালামের নিউজিল্যান্ড।

গতবারের মত পরিস্কার ফেভারিট না হলেও শক্তিমত্তায় পিছিয়ে নেই কেন উইলিয়ামসনের নিউজিল্যান্ড। সর্বদা দল হিসেবে খেলে আসা কিউইরা নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সামর্থ্যের সবটুকু দেয়ার জন্য জনপ্রিয়।

কিউই ব্যাটিং অর্ডারের দায়িত্ব সামলানোর দায়িত্বে থাকবেন বিধ্বংসী ওপেনার মার্টিন গাপটিল। গত বিশ্বকাপে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর রেকর্ড আছে এই ওপেনারের। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিপক্ষে পর পর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। ওপেনিংয়ে গাপটিলকে সঙ্গ দিতে দেখা যাবে কলিন মুনরো অথবা টম ল্যাথামকে।

মুনরোর ফর্ম নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও নিজের দিনে প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন তিনি। অন্যদিকে টম ল্যাথাম কিউই টপ অর্ডারে স্থিতিশীলতা এনে দিতে সক্ষম। দেখার বিষয় নিউজিল্যান্ড কোন কম্বিনেশন বেঁছে নেয়।

বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসন তিন নম্বরে দলের ব্যাটিং নিয়ন্ত্রণ করবেন। চার নম্বরে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের একজন, রস টেইলর কিউই ব্যাটিং অর্ডারে চার নম্বরের দায়িত্ব পালন করবেন। নিউজিল্যান্ডের সাফল্যের অনেকাংশ অধিনায়ক উইলিয়ামসন ও টেইলরের ওপর নির্ভর করবে।

তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হেনরি নিকোলসের সাথে মিডেল অর্ডারের দায়িত্ব সামলাবেন অলরাউন্ডার জিমি নিশাম। লোয়ার অর্ডারে ঝড় তোলার দায়িত্বে থাকবেন আরেক অলরাউন্ডার কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম।

টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্ট…এই বিশেষজ্ঞ বোলার নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণের মূল চালিকাশক্তি। ম্যাট হেনরি, লকি ফার্গুসনের একজন তৃতীয় পেসার হিসেবে একাদশে সুযোগ করে নিবেন। স্পিন আক্রমণের নেতৃত্বে থাকবেন মিচেল স্যান্টনার, বাড়তি স্পিনার হিসেবে স্কোয়াডে আছেন লেগ স্পিনার ইশ সোধি।

নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে কেন উইলিয়ামসন, রস টেইলর, টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টের পারফর্মেন্সের ওপর। ২০১৫ বিশ্বকাপে সাউদি-বোল্ট জুটি নিউজিল্যান্ডে ফাইনালে তুলতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল। এবারও একই দায়িত্ব সামলাতে হবে এই দুই পেস বোলারকে।

নিউজিল্যান্ডের স্কোয়াড বিশ্লেষণ –

কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক): ২৮ বছর বয়সী কেন উইলিয়ামসন এবারের বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের আধিপত্যের স্ট্যাম্প পুঁতে ফেলতে চাইবেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে কিউই কাপ্তান ব্রেন্ডন ম্যাককালাম তিন বিভাগেই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

দলকে বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে দিতে ম্যাককালামের নেতৃত্ব বড় ভূমিকা রেখেছিল। এখন পর্যন্ত ১৩৯ ওয়ানডেতে সাড়ে পাঁচ হাজার রান করা উইলিয়ামসনের কাছেও কিউই সমর্থকদের তেমন কিছুই চাওয়া থাকবে। ব্যাট হাতে ও অধিনায়ক হিসেবে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে ১১টি ওয়ানডে সেঞ্চুরির মালিক উইলিয়ামসনকে।

মার্টিন গাপটিলঃ বড় ইনিংস খেলায় পটু ওপেনার গাপটিলের কাছে কিউইদের ব্যাটিং অর্ডারের অন্যতম শক্তি। ১৬৯ ম্যাচ খেলা গাপটিল ৪৩ গড় ও ৮৭ স্ট্রাইক রেটে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার রান করেছেন। ১৬টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন এই ৩২ বছর বয়সী ওপেনার। বড় মঞ্চে নিজের সেরা পারফর্মেন্স দেয়ার জন্য পরিচিতি গাপটিল আসন্ন বিশ্বকাপেও জ্বলে উঠতে মুখিয়ে থাকবেন।

হেনরি নিকোলসঃ ৪১ ওয়ানডে খেলা হেনরি নিকোলস প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তিনি। ৩৫ গড় ও ৮৫ স্ট্রাইক রেটে রান তোলা নিকোলস দ্রুতই কিউই ব্যাটিং অর্ডারের ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন। এবার বড় মঞ্চে কেমন পারফর্ম করেন তিনি, সেটাই দেখার বিষয়।

রস টেইলরঃ ৩৫ বছর বয়সী রস টেইলরকে নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং অর্ডারের স্তম্ভ বললে ভুল হবে না। ২১৮ ওয়ানডে খেলা টেইলর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সকল রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন। ৪৮ গড় ও ৮৩ স্ট্রাইক রেটে রান তোলা টেইলর এখন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২০টি সেঞ্চুরির মালিক।

নামের পাশে ইতিমধ্যেই আট হাজার রান আছে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় এসে নিজের সামর্থ্যের সবটুকু বিশ্বকাপের জন্য জমিয়ে রাখতে চাইবেন রস টেইলর। যার কারণে বিশ্বকাপে টেইলরের ব্যাটে আলাদা নজর থাকবে।

টম ল্যাথামঃ গত তিন বছরে ধাপে ধাপে উন্নতি করে নিজেকে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটারে পরিণত করেছেন ২৭ বছর বয়সী টম ল্যাথাম। ৮৫ ম্যাচে ৩৩ গড় ও ৮৩ স্ট্রাইক রেটে ২৩৯৫ রানের মালিক ল্যাথাম কিউই ব্যাটিং অর্ডারের অন্যতম ভরসার নাম। ইতিমধ্যে চারটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি।

উইকেটের পেছনে নিউজিল্যান্ডের প্রথম পছন্দ ল্যাথাম। স্পিনের বিপক্ষে সাবলীল বলে নিউজিল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ল্যাথামকে মিডেল অর্ডারেও ব্যবহার করেছে। এবারের বিশ্বকাপে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে নিউজিল্যান্ড দলের বড় দায়িত্ব সামলাতে হবে ল্যাথামকে।

কলিন মুনরোঃ টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে তিন তিনটি সেঞ্চুরির মালিক কলিন মুনরোকে কিউই বিশ্বকাপ স্কোয়াড রাখা নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে নির্বাচকদের। ওয়ানডে ফরম্যাটে রেকর্ড (৫১ ম্যাচে ২৪ গড়ে ১১৪৬ রান) ও বর্তমান ফর্ম কিছুই পক্ষে ছিল না মুনরোর। তবে স্কোয়াডের এক্স ফ্যাক্টর হিসেবে সুযোগ মিলেছে ৩২ বছর বয়সী এই বাঁহাতির। মূল একাদশে সুযোগ পেলে সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করতে চাইবেন এই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান।

টম ব্লান্ডেলঃ এবারের নিউজিল্যান্ড স্কোয়াডে চমকের নাম টম ব্লান্ডেল। বিকল্প কিপার হিসেবে সুযোগ মিলেছে ২৮ বছর বয়সী ব্লান্ডেলের। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে টেস্ট অভিষেকেই উইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। তিনটি টি-টুয়েন্টি খেলেছেন, তবে চোখে পড়ার মত পারফর্মেন্স ছিল না ব্লান্ডেলের। বিশ্বকাপ একাদশে সুযোগ পেলে ওয়ানডে অভিষেক হবে তাঁর।

জিমি নিশামঃ প্রতিভাবান অলরাউন্ডার জিমি নিশামের জন্য এবারের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া দ্বিতীয় জীবন ফিরে পাওয়ার মতন। বিশ্বকাপের আগে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে নিশামের রেকর্ড খুব উজ্জ্বল ছিল না। তবুও নির্বাচকরা আস্থা রেখেছেন ৪৯ ওয়ানডে খেলা নিশামে।

ওয়ানডে ক্রিকেট একশ ছাড়ানো স্ট্রাইক রেটে এক হাজার রান করা নিশাম পাঁচ ফিফটির মালিক। বল হাতেও নিয়মিত উইকেট শিকার করে আসছেন তিনি। ৪৬ ইনিংসে বল করে ৪৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি, দুইবার চার উইকেট নিয়েছেন তিনি।

কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমঃ লোয়ার অর্ডারে দ্রুত রান তোলার দায়িত্ব পালন করবেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। ১১০ স্ট্রাইক রেটে ওয়ানডে ম্যাচে রান তোলা এই হার্ড হিটার বল হাতেও ৫-৬ ওভার দিতে সক্ষম। গ্র্যান্ডহোমের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াম পেস প্রতিপক্ষের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়ে জুটি ভাঙ্গতে সক্ষম। ২৮ ওয়ানডে খেলা গ্র্যান্ডহোমের এটাই প্রথম বিশ্বকাপ। গত বিশ্বকাপে একই জায়গায় খেলে নায়ক বনে গিয়েছিলেন গ্র্যান্ট এলিয়ট।

মিচেল স্যান্টনারঃ নিউজিল্যান্ডের স্পিন বোলিং আক্রমণ সামাল দিবেন বাঁহাতি স্পিনার স্যান্টনার। এখন পর্যন্ত ৫৯ ওয়ানডে খেলা স্যান্টনার ৬৩ উইকেটের মালিক। ব্যাট হাতেও দ্রুত রান তুলতে পারেন এই বাঁহাতি। লোয়ার অর্ডারে ব্যাট চালাতে সক্ষম স্যান্টনার ওয়ানডেতে দুটি ফিফটির মালিক।

ইশ সোধিঃ লেগ স্পিনার হিসেবে আসন্ন বিশ্বকাপে বড় ভূমিকা পালন করবেন ২৬ বছর বয়সী সোধি। ৩০টি ওয়ানডে খেলা ইশ সোধি ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন। নামের পাশে ৩৯ উইকেট আছে তাঁর। ইংলিশ কন্ডিশনে মিডেল ওভারে প্রতিপক্ষের উইকেট নেয়ায় সোধিকে ব্যবহার করতে চাইবে নিউজিল্যান্ড। 

টিম সাউদিঃ ১৩৯ ওয়ানডে খেলা টিম সাউদিকে নিউজিল্যান্ড বোলিং আক্রমণের নেতা বলা যায়। ১৮৫ উইকেটের মালিক সাউদি নতুন বলে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারেন। নতুন বলে মৃদু সুইং করানোর সুযোগ থাকলে সেটি কাজে লাগাবেন তিনি। গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩ রানে ৭ উইকেটের স্পেলটি সহজে ভুলবার নয়।

ম্যাট হেনরিঃ ৪৩ ম্যাচে ৭১ উইকেটের মালিক ম্যাট হেনরি সঠিক কন্ডিশনে ভয়ঙ্কর বোলার হতে পারেন। মূল একাদশে সুযোগ পেলে চোখ ধাঁধানো স্পেল উপহার দেয়ার সামর্থ্য আছে তাঁর। তবে ডেথ ওভারে খরুচে বোলিং করায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। বিশ্বকাপে নিজেকে নিউজিল্যান্ডের ফ্রন্ট লাইন বোলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবেন তিনি। 

লকি ফার্গুসনঃ নিউজিল্যান্ড স্কোয়াডের একমাত্র গতি তারকা বলা যায় লকি ফার্গুসনকে। নিয়মিত ১৪৫+ গতিতে বল করতে পারা এই তরুণ ফাস্ট বোলার ফ্ল্যাট উইকেটে আগুন ঝরা বোলিং করতে সক্ষম। ২৭ ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ারে ৪৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি, একবার পাঁচ উইকেটও শিকার করেছেন। তবে বিশ্বকাপ জুড়ে ফিটনেস ধরে রাখা লকি ফার্গুসনের জন্য চ্যালেঞ্জের হবে।  

ট্রেন্ট বোল্টঃ গত বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার ট্রেন্ট বোল্ট এবারও একই পারফর্মেন্স দিতে চাইবেন। ইংলিশ কন্ডিশনে গতি ও সুইং এর মিশেলে প্রতিপক্ষ দলের টপ অর্ডারে কাঁপুনি ধরাতে চাইবেন বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসার বোল্ট। এখন পর্যন্ত ৭৯ ওয়ানডে খেলে ১৪৭ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।