ক্রিকেট লিজেন্ডস

ভিভ ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ রিচার্ডস

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশের তারিখ: 16:55 রবিবার, 14 এপ্রিল, 2019

|| ফ্রাইডে স্পেশাল ||

অনেকের কাছে শচীন কিংবা জয়াসুরিয়া নয়; তিনিই ক্রিকেটের আসল ‘মাস্টার ব্লাস্টার’। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচাইতে ভয়ানক, আগ্রাসী এবং খুনে মেজাজের ব্যাটসম্যান হিসেবে যাঁকে একবাক্যে মেনে নেন সবাই। যিনি ব্যাট করতেন হেলমেট ছাড়া; ফাস্ট বোলারদের স্বর্ণযুগে যিনি ছিলেন ফাস্ট বোলারদের যম। প্রতিপক্ষের শিরদাঁড়ায় ভয়ের শীতল স্রোত বইয়ে দিতে কেবলমাত্র মাঠে যাঁর উপস্থিতিই ছিল যথেষ্ট। যাই হোক কথা বাড়িয়ে লাভ নেই, বলছিলাম সময়ের চেয়ে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকা ব্যাটিং জিনিয়াস, ক্যারিবীয় গ্রেট স্যার ভিভ রিচার্ডসের কথা।

পুরো নাম স্যার আইজ্যাক ভিভিয়ান আলেক্সান্ডার রিচার্ডস। ক্রিকেটে ‘মাস্টার ব্লাস্টার’ বিশেষণটির সার্থক রূপ সর্বপ্রথম তিনিই দিয়েছিলেন নিজের ব্যাটিংয়ে। অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স; একেবারে প্রথম বল থেকেই আক্রমণ ছিল যার ব্যাটিংয়ের শেষ কথা। চুইংগাম চিবুতে চিবুতে প্রতিপক্ষের বোলিং লাইনআপকে স্রেফ খুন করতেন যিনি। উইজডেনের ভাষায়, "possibly the most destructive batsman the sport has ever seen".

সাবেক ক্রিকেটার ও ক্রীড়ালেখক অ্যাশলি ম্যালেটের ভাষায়, “Intimidating like a boxer, he walked in with a swagger, chewing his gum; without a helmet, he took on the best bowlers and dominated them like none.”

ক্রিকইনফোর ভাষায়, “He revolutionised the art of batting with his sheer agression and the intent to dominate bowling attacks. The way he approached the game, his swagger and sheer presence at crease unnerved the best.”

ভিভ রিচার্ডসের ব্যাটিংকে বলা যায় পাওয়ার, টাইমিং আর স্টাইলের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। তাঁর ছিল দুর্দান্ত রিফ্লেক্স এবং হ্যান্ড আই কো-অর্ডিনেশন। পাশাপাশি ডেপথ অফ দ্য ক্রিজের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মত। ফুল লেন্থের বলে জোরালো ড্রাইভ খেলতে ভালোবাসতেন। অনসাইড ফ্লিক ছিল তাঁর ট্রেডমার্ক শট। অফ স্টাম্পের বাইরের একটা গুড লেন্থ বলকে অনায়াসে মিডউইকেট অঞ্চল দিয়ে সীমানাছাড়া করতে পারতেন। কম্পালসিভ পুলার এবং হুকার ছিলেন। বিশেষ করে হুক শটে তাঁকে সর্বকালের সেরাদের একজন বলে মনে করেন অনেকে।হরাইজন্টাল ব্যাটে 'অ্যাক্রস দ্য লাইন' শট খেলতে পছন্দ করতেন বলে নিজের আত্মজীবনীর নাম দিয়েছিলেন 'হিটিং অ্যাক্রস দ্য লাইন'!

উইজডেনের ভাষায়, “He was attacking, aggressive but not a slogger. His trademark shot was hitting across the line but his cover drives were gorgeous. He was a poet capable of violent poetry. A subtle artist who had the gift of ferocious performance. A man who made chewing gum a style statement. A man who defined swagger.”

তা ব্যাটসম্যান হিসেবে ঠিক কতটা আক্রমণাত্মক ছিলেন ভিভ? প্রয়াত ধারাভাষ্যকার রিচি বেনোর ভাষায়, “অনেকেই অনেক জোরে বল পিটিয়েছে। কিন্তু আর কেউ ভিভের মত প্রতিপক্ষ এবং দর্শকের মনে এমন ভয়ের বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারেনি।” ভিভের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান দেখলে অবশ্য এ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। ১২১ টেস্টে ৫০.২৩ গড়ে ৮৫৪০ রান কিংবা ১৪৭ ওয়ানডেতে ৪৭ গড়ে ৬৭২১ রান ভিভের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝানোর জন্য 'যথেষ্ট' হলেও ভিভের আসল মাহাত্ম্য লুকিয়ে আছে তাঁর অবিশ্বাস্য স্কোরিং রেটে। সত্তর-আশির দশকের ভয়ঙ্কর সব ফাস্ট বোলার, ঘাসে ভরা বাউন্সি উইকেট আর হেলমেটবিহীন যুগে খেলেও টেস্টে ৮৬ আর ওয়ানডেতে ৯০ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ভিভ যা এককথায় অতুলনীয়!

সত্তর-আশির দশকের বোলারদের কাছে ভিভ রিচার্ডস ছিল এক বিভীষিকার নাম। ইংল্যান্ডের সাবেক ফাস্ট বোলার বব উইলিস একবার মজা করে বলেছিলেন, “ভিভ আমার ভালো বলগুলোতে চার মারত, আর বাজে বলগুলোতে ছয়।”

ওয়াসিম আকরামের ভাষায়, “মার্টিন ক্রো, গাভাস্কারদের বিপক্ষে বল করা কঠিন ছিল, কিন্তু ভিভকে বল করতে গেলে রীতিমতো গলা শুকিয়ে আসত আমার।”

ইমরান খানের মতে, "জেনুইন ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে আমার দেখা সেরা ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডস।”

সত্তর-আশির দশকে ক্রিকেট মাঠের সবচাইতে আকর্ষণীয় দ্বৈরথগুলোর একটি ছিল ভিভ রিচার্ডস বনাম ডেনিস লিলি। সে যুগে লিলির মত দুর্ধর্ষ ফাস্ট বোলারের চোখরাঙানি উপেক্ষা করার সাহস খুব কম ব্যাটসম্যানই দেখাতে পেরেছেন। ভিভ ছিলেন তাঁদেরই একজন। লিলিকে মোটেই ভয় পেতেন না তিনি।

ইয়ান চ্যাপেলের ভাষায়, “When he was about to face Lillee at his fiercest, Viv, the "master blaster", feared not.”

শুধু বোলারদের কথাই বা বলছি কেন, প্রতিপক্ষের ফিল্ডাররা পর্যন্ত ভিভকে বিশেষ সমীহের চোখে দেখত। সাবেক উইকেটরক্ষক জেফ্রি ডুজনের ভাষায়, “নতুন ব্যাটসম্যান ক্রিজে আসলে সাধারণত ফিল্ডাররা দুই ধাপ এগিয়ে আসে। কিন্তু ভিভের বেলায় দেখেছি তার ঠিক উল্টো। ভিভ নামলে ফিল্ডাররা বরং দুই ধাপ পিছিয়ে যেত।”

ক্রিকেটে একমাত্র ভিভ রিচার্ডসকেই ‘কিং’ উপাধি দেয়া হয়। ক্রিকেট মাঠে তার রাজকীয় পদচারণা দেখলেই বোঝা যায় নামকরণটা যথার্থই। ভিভ রিচার্ডসের ড্রেসিংরুম থেকে মাঠে প্রবেশের পুরো দৃশ্যটাই একটা শিল্পকর্ম। পৃথিবী বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার দিয়ে আরো সাউন্ড, লাইট কিংবা ইফেক্ট যোগ করেও সেটা আর ভালো করা সম্ভব নয়।

উইজডেনের সাবেক সম্পাদক শিল্ড বেরি বলেছেন, ‘গর্ডন গ্রিনিজ কিংবা ডেসমন্ড হেইন্সের জন্য বরাদ্দ প্রশংসাপত্র দশর্কের করতালিতে অনূদিত হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর নীরবে-নিভৃতে, ধীরে-সুস্থে, হেলেদুলে আভিজাত্য আর ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে তিনি মাঠে প্রবেশ করতেন, যেন কোনো সম্রাট তাঁর রাজত্বে ফিরছে।”

ভিভ রিচার্ডসের ক্রিজে আসার পর গার্ড নেয়ার দৃশ্যের বর্ণণা দিয়েছেন অ্যাশলি ম্যালেট, “He was the epitome of arrogance. He would take guard, look about the field as if the opponents were non-existent, walk a few paces up the track to tap it, and wander back to settle down over his bat. This was his time, his space. Beware.”

ভিভ রিচার্ডস হলেন টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি দেড়শ'র বেশি স্ট্রাইক রেটে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ১৯৮৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জন্মভূমি অ্যান্টিগায় ক্যারিয়ারের বিশতম সেঞ্চুরিটি তিনি তুলে নিয়েছিলেন মাত্র ৫৬ বলে! টেস্ট ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড হিসেবে যেটি টিকে ছিল প্রায় ৩০ বছর!

অনেকেই হয়ত জানেন না, টেস্ট ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডটিও একসময় ছিল ভিভ রিচার্ডাসের দখলে। ভিভের ৮৪ ছক্কার রেকর্ডটি টিকে ছিল প্রায় ১৩ বছর; ২০০৪ সালে যেটি ভেঙেছিলেন সাবেক কিউই অলরাউন্ডার ক্রিস কেয়ার্নস। বর্তমানে সেটি ব্রেন্ডন ম্যাককালামের (১০৭) দখলে।

ব্যাট হাতে ভিভ যে কেবল বিধ্বংসীই ছিলেন তা নয়, তিনি ছিলেন অবিশ্বাস্য রকমের ধারাবাহিক। ১৯৭৬-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫৫ গড়ে রান করেছেন ভিভ। ২৩টি সিরিজ খেলেছেন, যার ১৩টিতেই তাঁর গড় ছিল পঞ্চাশের বেশি। ব্যাটিং গড়ে ভিভ পেছনে ফেলে দিয়েছিলেন গ্রেগ চ্যাপেল (৫৪), সুনীল গাভাস্কার (৫১), অ্যালান বোর্ডার (৫২), জাভেদ মিয়াঁদাদের (৫৪) মত অলটাইম গ্রেটদেরও।

টেস্টে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পজিশনে ব্যাট করলেও ভিভ সবচাইতে সফল ছিলেন তিন নম্বরে। এই পজিশনে অন্তত ৫০ ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্যাটিং গড়ের বিচারে ভিভের অবস্থান তৃতীয়। তিন নম্বর পজিশনে ভিভের (৬১.৫৪) চেয়ে এগিয়ে আছেন শুধুমাত্র স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান (১০৩.৬৩) এবং ওয়ালি হ্যামন্ড (৭৪.৭৮)।

ভিভ রিচার্ডস যেসব দেশে গিয়ে টেস্ট খেলেছেন, সব জায়গাতেই তাঁর ব্যাটিং গড় অন্তত ৪০। টেস্ট ম্যাচের ইনিংসভেদেও তাঁর কন্সিস্টেন্সি ছিল একই রকম। ১ম ইনিংস- ৫৪, ২য় ইনিংস- ৪৯, ৩য় ইনিংস- ৫০, ৪র্থ ইনিংস- ৪৮!

১৯৭৬ সালে মাত্র ১১ টেস্ট খেলে ৯০ গড়ে ভিভ করেছিলেন ১৭১০ রান! হাঁকিয়েছিলেন ১১টি সেঞ্চুরি! এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বাধিক টেস্ট রানের রেকর্ড হিসেবে যা টিকে ছিল প্রায় ৩০ বছর! একই বছর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক সিরিজে করেছিলেন ৮২৯ রান!

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস ঘাঁটলে হয়ত ভিভের চাইতে ভাল ব্যাটসম্যান খুঁজে পাওয়া যাবে। যদিও তা সংখ্যায় অতি নগন্য। তবে ওয়ানডেতে যে ভিভই সর্বকালের সেরা এ নিয়ে দ্বিমত করার লোক বোধ হয় চাইলেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ইয়ান বোথাম, ব্যারি রিচার্ডস, মার্টিন ক্রো, শেন ওয়ার্ন, রবি শাস্ত্রী, নিল ফেয়ারব্রাদার, ডেরেক প্রিঙ্গলদের মত বিশেষজ্ঞরাও সেরার প্রশ্নে রায় দিয়েছেন ভিভের পক্ষেই। আবারও বলছি, ভিভ ছিলেন যুগের চাইতে বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকা একজন খেলোয়াড়। চলুন জেনে নিই এ সম্পর্কে পরিসংখ্যান কী বলছে।

১৯৭৫-১৯৯১ সাল পর্যন্ত ওয়ানডেতে ১-৭ নম্বর পজিশনে ব্যাট করা সকল ব্যাটসম্যানের এভারেজ ছিল ২৯ আর স্ট্রাইক রেট ছিল ৬৫! সেখানে ভিভ রান করেছেন ৪৭.০ গড় আর ৯০.২০ স্ট্রাইক রেটে!

ভিভের ওয়ানডে সেঞ্চুরির সংখ্যা ১১টি; এবং তার সবকটিতেই জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডেতে প্রতি ১৫ ইনিংসে অন্তত একটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। ভাবছেন এ আর এমন কী! তবে জেনে রাখুন, ভিভের যুগে ১-৭ নম্বর পজিশনে ব্যাট করা ব্যাটসম্যানদের প্রতিটি সেঞ্চুরির জন্য খেলতে হয়েছে গড়ে প্রায় ৫৫ ইনিংস!

ভিভের সমসাময়িক প্রথম সারির কয়েকজন ব্যাটসম্যানের ওডিয়াই পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, তাঁদের বেশিরভাগের গড় ছিল চল্লিশ আর স্ট্রাইক রেট ছিল ষাটের ঘরে।

জহির আব্বাস- গড় ৪৭.৬২, স্ট্রাইক রেট ৮৪.৮০

গ্লেন টার্নার- গড় ৪৭.০, স্ট্রাইক রেট ৬৮.০৫

গর্ডন গ্রিনিজ- গড় ৪৫.০৩, স্ট্রাইক রেট ৬৪.৯২

ডিন জোন্স- গড় ৪৪.৬১, স্ট্রাইক রেট ৭২.৫৬

জাভেদ মিয়াঁদাদ- গড় ৪১.৭০, স্ট্রাইক রেট ৬৭.০১

ডেসমন্ড হেইন্স- গড় ৪১.৩৭, স্ট্রাইক রেট ৬৩.০৯

গ্রেগ চ্যাপেল- গড় ৪০.১৮, স্ট্রাইক রেট ৭৫.৭০

ক্লাইভ লয়েড- গড় ৩৯.৫৪, স্ট্রাইক রেট ৮১.২২

অ্যালান ল্যাম্ব- গড় ৩৯.৩১, স্ট্রাইক রেট ৭৫.৫৪

মার্টিন ক্রো- গড় ৩৮.৫৫, স্ট্রাইক রেট ৭২.৬৩

দেখা যাচ্ছে, ভিভ (৯০.২০) বাদে আশির ওপর স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন কেবল দুজন; জহির আব্বাস (৮৪.৮০) আর ক্লাইভ লয়েড (৮১.২২)। তবে এঁরা দুজনেই ভিভের তুলনায় ম্যাচ খেলেছেন অনেক কম। ভিভের ১৮৭ ওয়ানডের বিপরীতে লয়েড ৮৭ আর জহির খেলেছেন মাত্র ৬২ ম্যাচ।

ভিভ রিচার্ডস হলেন ওয়ানডে ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি ৪৫ গড় এবং ৯০ স্ট্রাইক রেটের অনবদ্য 'কম্বিনেশন' বজায় রেখে পাঁচ সহস্রাধিক রান করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এই পাওয়ারপ্লে, শর্ট বাউন্ডারি, বিগ ব্যাট আর ফ্লাট উইকেটের যুগে এসেও যে কৃতিত্বে ভাগ বসাতে পেরেছেন আর মাত্র দুজন; এবি ডি ভিলিয়ার্স আর বিরাট কোহলি!

ওয়ানডের দ্রুততম (২১ ইনিংস) ১০০০ রানের রেকর্ডটি এখনো ভিভের দখলে। ওয়ানডেতে ৪ নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটাও (১৮৯*) ভিভের।

ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বাধিক রেটিং পয়েন্ট (৯৩৫) পাওয়া ব্যাটসম্যানের নামটাও ভিভ রিচার্ডস। দ্বিতীয় স্থানে আছেন বিরাট কোহলি (৯০৯)।

ভিভ রিচার্ডসকে মনে করা হয় ওয়ানডের সর্বকালের সেরা ম্যাচ উইনার। ১৮৭ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে তিনি ম্যাচসেরা হয়েছেন ৩১ বার! অর্থাৎ প্রতি ৬.০৩ ম্যাচে অন্তত একবার 'ম্যান অব দ্য ম্যাচ' হয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ওয়ানডেতে সর্বাধিক ম্যাচসেরার (৪৬৩ ম্যাচে ৬২ বার) পুরস্কার জেতা শচীন টেন্ডুলকার (৭.২৪)।

ভিভ রিচার্ডস ছিলেন বিগ ম্যাচ প্লেয়ার। ওয়ানডেতে তাঁর ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৪৭, টুর্নামেন্টের ফাইনালে সেটা ৫৬! ক্যারিয়ারে মোট ১৭টি ফাইনালে অংশ নিয়েছেন ভিভ। ১ সেঞ্চুরি ও ৯ ফিফটিসহ প্রায় ৫৬ গড়ে করেছেন ৮৩৬ রান।

মজার ব্যাপার হল, ওয়ানডেতে হোমের তুলনায় ভিভের এওয়ে গড় বেশি। বিদেশের মাটিতে তাঁর ওয়ানডে গড় ৫৭ আর দেশের মাটিতে মাত্র ৩৬! ব্যবধান প্রায় ২০ রান!

ভিভের ব্যাটসম্যানশিপের দাপটে আড়ালে চলে যায় তাঁর অলরাউন্ডার সত্ত্বা! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৫০০০ রানের পাশাপাশি অফ স্পিন আর স্লো মিডিয়াম বোলিংয়ে ভিভের ঝুলিতে রয়েছে ১৫০টি উইকেট। টেস্টে ৩২টি আর ওয়ানডেতে ১১৮টি। ওয়ানডেতে দুইবার গড়েছেন ইনিংসে ৫ উইকেট লাভের কীর্তি।

ওয়ানডেতে একই ম্যাচে 'সেঞ্চুরি' এবং ৫ উইকেট নেয়া প্রথম 'অলরাউন্ডার' কে জানেন? ভিভ রিচার্ডস! ১৯৮৭ সালে ডানেডিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৮ রান করার পাশাপাশি বল হাতে ৪১ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ভিভ। ওয়ানডেতে ১০০০ রান এবং ৫০ উইকেটের 'ডাবল' অর্জনকারী প্রথম ক্রিকেটারও তিনি!

এবারে চলুন এক নজরে দেখে নিই ভিভ রিচার্ডসের বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার হাইলাইটস।

১৯৭৪ সালে ব্যাঙ্গালোরে ভারতের বিপক্ষে ভিভ রিচার্ডসের টেস্ট অভিষেক। অভিষেকে অবশ্য মনে রাখার মত তেমন কিছুই করতে পারেন নি। ডানহাতি লেগ স্পিনার ভগবৎ চন্দ্রশেখরের ঘুর্ণিজাদুতে বিভ্রান্ত হয়ে দুই ইনিংসেই আউট হয়েছিলেন অল্প রানে (৪ ও ৩)। তবে নিজের জাত চেনাতে খুব বেশি দেরি করেন নি। দিল্লিতে পরের টেস্টেই খেলেন ৬ ছক্কা ও ২০ বাউন্ডারিতে সাজানো অপরাজিত ১৯২ রানের অনবদ্য এক ইনিংস!

সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজটা জিতেছিল ৩-২ ব্যবধানে। আর অভিষেক সিরিজে 'কিং' ভিভের ব্যাট থেকে এসেছিল ৫০.৪৩ গড়ে ৩৫৩ রান।

১৯৭৫ সালে অনুষ্ঠিত হয় ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ। অবশ্য সেই টুর্নামেন্টে ব্যাট হাতে ভিভের তেমন বড় কোন সাফল্য ছিল না। তবে ২৩ বছরের 'তরুণ' ভিভ আলাদাভাবে নজর কেড়েছিলেন ফিল্ডিং দিয়ে! বিশেষ করে ফাইনালে শিরোপা জয়ে 'ফিল্ডার' ভিভের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে তিনি রান আউট করেছিলেন 'চ্যাপেল ব্রাদার্স'সহ প্রথম সারির তিন অজি ব্যাটসম্যানকে।

১৯৭৫-৭৬ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য কেটেছিল দুঃস্বপ্নের মত। জেফ থমসন আর ডেনিস লিলির গতির সামনে দাঁড়াতেই পারছিল না তরুণ অনভিজ্ঞ ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনআপ। ৬টা টেস্টের ৫টাতেই হেরে বসে ক্লাইভ লয়েডের দল।

প্রথম চার টেস্টে ১৮.৩৭ গড়ে মাত্র ১৪৭ রান করা ভিভ শেষ দুই টেস্টে এক সেঞ্চুরি (১০১) ও দুই ফিফটি (৯৮, ৫০) হাঁকিয়েও দলকে ৫-১ ব্যবধানে হারের লজ্জা থেকে বাঁচাতে পারেন নি।

১৯৭৬ সালে ভারতের বিপক্ষে হোম সিরিজে ভিভ রিচার্ডসের ব্যাটে চড়ে ঘুরে দাঁড়ায় ক্যারিবীয়রা। সিরিজসেরা ভিভের ব্যাট থেকে আসে ৩টি সেঞ্চুরিসহ (১৪২, ১৩০, ১৭৭) ৯২.৬৭ গড়ে ৫৫৬ রান। স্বাগতিকরা সিরিজ জিতেছিল ২-১ ব্যবধান।

এরপরই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সেই সিরিজ। চার ম্যাচে তিন সেঞ্চুরিসহ (২৯১, ২৩২ ও ১৩৫) ভিভ করেন ৮২৯ রান।  মজার ব্যাপার হল, একবারও অপরাজিত না থেকেও তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ১০৩.৬২!

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ জিতে নেয় ৩-০ ব্যবধানে আর ভিভ হয়েছিলেন সিরিজসেরা।

পরের বছর কাউন্টিতে সমারসেটের হয়ে এক মৌসুমে ভিভ করলেন ৩ ডাবল সেঞ্চুরি ও ৭ সেঞ্চুরিসহ ২১৬১ রান।

উল্লেখ্য, ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে ক্যারিয়ার সেরা ৩২২ রানের ইনিংসটাও খেলেছিলেন ওই মৌসুমেই। ত্রিশতক পূরণ করেছিলেন মাত্র ২৪৪ বলে! মেরেছিলেন ৪২টি চার এবং ৮টি ছক্কা!

১৯৭৯-৮০ সালে অস্ট্রেলিয়াকে তাদেরই মাটিতে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হারিয়ে 'মধুর প্রতিশোধ' নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৯৬.৫০ গড়ে ৩৮৬ রান করে ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ভিভ রিচার্ডস।

ওই সফরেরই একটি ওয়ানডেতে দেড় শতাধিক (১৩০ বলে ১৫৩*) রানের ইনিংস খেলেছিলেন ভিভ। ভেন্যু ছিল মেলবোর্ন। অস্ট্রেলিয়া দলে তখন জেফ থমসন, ডেনিস লিলি, রডনি হগের মত দুর্দান্ত সব ফাস্ট বোলার। সেই ম্যাচের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মাইকেল হোল্ডিং বলেন, “হগের একটি বাউন্সার সরাসরি গিয়ে লাগল ভিভের চিবুকে। হগ বলছিল, ও কি মাঠ ছাড়বে না? ভিভ মাঠ ছাড়ে নি। সেবা-শুশ্রূষা নিয়ে পুনরায় সেটেল হতে কিছুক্ষণ সময় নিয়েছিল এই যা। হগ বলল, দাঁড়াও এবার ওকে বাইরে পাঠাচ্ছি। ফলাফল আরেকটি বাউন্সার। কিন্তু ভিভ এবার আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। ব্যাকফুটে কনভেনশনাল হুক। স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে চোখের পলকে বল মাঠের বাইরে। অ্যান্ড আই টেল ইউ মেলবোর্ন ইজ আ বিগ্র গ্রাউন্ড।”

১৯৭৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে অপরাজিত ১৩৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন ভিভ রিচার্ডস; টানা দ্বিতীয়বারের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

কিংস্টন, জ্যামাইকা, ১৯৮৩। ভারতের বিপক্ষে পঞ্চম দিনের ভাঙা উইকেটে জয়ের জন্য উইন্ডিজের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬ ওভারে ১৭২ রান। ওভারপ্রতি আস্কিং রেট ৬.৬২! সেই যুগের পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন অসম্ভব লক্ষ্য তাড়া করার কথা ভাবাটা রীতিমতো দুঃসাহসের পর্যায়ে পড়ে। সেই দুঃসাহসকেই সেদিন বাস্তবে রূপ দিয়েছিল লয়েড বাহিনী। সামনে থেকে যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভিভ রিচার্ডস। সেদিন প্রথম বল থেকেই ভারতীয় বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন ভিভ; খেলেছিলেন ৫ চার আর ৪ ছক্কায় সাজানো ৩৬ বলে ৬১ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস। স্ট্রাইক রেট ১৬৯.৪! মাত্র ২ বল বাকি থাকতে উইন্ডিজ পেয়েছিল ৪ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস এক জয়।

১৯৮৩ সালে কপিল দেবের নেতৃত্বে ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের গল্প তো আমরা সকলেই জানি। ভারত শিরোপা জিতেছিল আগের দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন 'পরাক্রমশালী' ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে। ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন যে কোন বিচারেই ক্রিকেট দুনিয়ার এক নম্বর টিম। মোটামুটি সবাই ধরে নিয়েছিল যে চ্যাম্পিয়ন হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় 'অঘটন'গুলোর একটা যে বিশ্বকাপের ফাইনালেই ঘটতে চলেছে তা কে জানত! ১৮৩ রানের মামুলি টার্গেট তাড়া করতে নেমে অবিশ্বাস্যভাবে ক্যারিবীয়রা গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪০ রানে! দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেও পরাজয় এড়াতে পারেন নি টুর্নামেন্টজুড়ে দারুণ ফর্মে থাকা (৭৩.৪০ গড়ে ৩৬৭ রান) ভিভ রিচার্ডস।

১৯৮৩ সালে ভারত সফরের একটি ওয়ানডেতে ২০ বাউন্ডারি আর ৩ ছক্কায় মাত্র ৯৯ বলে ১৪৯ রানের 'টর্নেডো' ইনিংস (স্ট্রাইক রেট ১৫০.৫) খেলেছিলেন ভিভ। নির্ধারিত ৪৫ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছিল ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান। রান রেট ছিল ওভার প্রতি ৭.৪! পুরো ৬০ ওভার খেলা হলে স্কোরটা নির্ঘাত ৪০০ ছাড়িয়ে যেত সেদিন।

ম্যানচেস্টার, ১৯৮৪। টেক্সাকো ট্রফির প্রথম ওয়ানডেতে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভিভ উপহার দিয়েছিলেন ২১ চার ও ৫ ছক্কায় সাজানো ১৭০ বলে অপরাজিত ১৮৯ রানের অবিস্মরণীয় এক ইনিংস। ১৬৬ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর শেষ উইকেট জুটিতে মাইকেল হোল্ডিংকে নিয়ে গড়েছিলেন ১০৬ রানের বিশ্বরেকর্ড। যেখানে হোল্ডিংয়ের অবদান ছিল মাত্র ১২ রান!

উইজডেনের বিবেচনায় ভিভের ১৮৯* গত শতাব্দীর সেরা ওয়ানডে ইনিংস। ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের তালিকায় এটি শীর্ষস্থান ধরে রেখেছিল প্রায় ১৩ বছরেরও বেশি।

শুধু তাই নয়, ওয়ানডেতে দলীয় স্কোরে শতকরা হারে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা ইনিংসের তালিকায় আজও সবার উপরে অবস্থান করছে রিচার্ডসের 'কালজয়ী' এ ইনিংসটি। উইন্ডিজের দলীয় সংগ্রহ ২৭২ রানের মধ্যে শতকরা ৬৯.৪৮ ভাগ রানই এসেছিল স্যার ভিভ রিচার্ডসের (১৮৯*) ব্যাট থেকে!

এরপর ১৯৮৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হাঁকালেন ইতিহাস গড়া সেই বিধ্বংসী শতক (৫৮ বলে ১১০*)। বাউন্ডারি এবং ওভার বাউন্ডারি মেরেছিলেন ৭টি করে!

ঐতিহাসিক সেই ইনিংস সম্পর্কে উইজডেনের সাবেক সম্পাদক শিল্ড বেরি বলেছিলেন, “It had to be, by any yardstick, among the most wonderful innings ever played. If there was any element of doubt in his innings, it was whether he would hit a four or a six.”

শিল্ড বেরি আরও বলেন, “The extraordinary, and forever memorable, feature of his innings was the way he walked off at the end. It was Caesar returning to Rome after his greatest triumph.”

১৯৮৩ সালের মত ১৯৮৭ বিশ্বকাপেও শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় ২৮ রানে। যার ফলে ১ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিসহ ৩৯২ রান করেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল ভিভ রিচার্ডসকে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৭ বিশ্বকাপেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২৫ বলে ১৮১ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেছিলেন ভিভ। মেরেছিলেন ১৬টি চার ও ৭টি ছক্কা। সেঞ্চুরির কোটা পূরণ করতে ৯৮ বল খরচ করলেও শেষ ৮১ রান তুলেছিলেন মাত্র ২৭ বলে! আর উইন্ডিজ গড়েছিল ওয়ানডে ইতিহাসের তৎকালীন সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের (৩৬০/৪) রেকর্ড।

১৯৮৭ সালের নভেম্বরে দিল্লীতে ভারতের বিপক্ষে ভিভ উপহার দিয়েছিলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস। ফিরোজ শাহ কোটলার স্পিনবান্ধব মন্থরগতির উইকেটে হাঁকিয়েছিলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। ভিভের অনবদ্য ১০৯* রানের উপর ভর করে চতুর্থ ইনিংসে ২৭৬ রান তাড়া করে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

ক্যারিয়ারের শেষ পর্যায়ে এসে ব্যাট হাতে ধারাবাহিকতা এবং ছন্দ দুটোই হারিয়ে ফেলেন ভিভ। পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্টভাবে বোঝা যায় সেটা। ক্যারিয়ারের শেষ ২৭ টেস্টে ভিভের সেঞ্চুরি মাত্র ২টি! অন্যদিকে, শেষ ৪৬ ওয়ানডেতে তাঁর সংগ্রহ মাত্র ২৭.১৯ গড়ে ৯৭৯ রান! কোন সেঞ্চুরি নেই, ফিফটি মাত্র ৪টি!

১৯৯১ সালে যেদিন অবসর নিলেন, তখনও পর্যন্ত তিনিই ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ২৪টি শতক, ৪৫টি অর্ধশতক আর ১২১ টেস্টে ৫০.২৩ গড়ে ৮৫৪০ রান।

অনেকেই হয়ত জানেন না, অধিনায়ক হিসেবেও ভিভ ছিলেন দুর্দান্ত। সর্বমোট ৫০টি টেস্টে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতেছেন ২৭টিতে, হেরেছেন মাত্র ৮টিতে। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, তাঁর নেতৃত্বে ১২টি সিরিজে অংশ নিয়ে একবারও সিরিজ হারে নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, যা একটি বিশ্বরেকর্ড!

ভিভের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগ, বড় স্কোর খুব বেশি নেই। এর কারণ কী? মাইকেল হোল্ডিংয়ের মতে, ‘ওর সেঞ্চুরি হয়ে গেলে, দলের রান তিনশ পেরিয়ে গেলে ভিভ ভাবত, জাস্ট এনাফ। আমাদের বোলিং আক্রমণের ওপর অগাধ আস্থা ছিল ওর। সেঞ্চুরির পর নতুন গার্ড নিতে হবে, ডাবল-ট্রিপল করতে হবে এভাবে কখনই ভাবতো না ও। দলের জয় নিশ্চিত হয়ে গেলে বাকি ক্রিকেট তার কাছে কেবলই বিনোদন’।

হোল্ডিং আরও বলেন, ‘ইনফ্যাক্ট ওর সেঞ্চুরি হয়ে গেলে অনেক বোলার হাঁফ ছেড়ে বাঁচত। যাক এখন হয়তো ও প্যাভিলিয়নে ফিরবে!’

নিজে উপভোগ করতেন, অন্যকেও আনন্দ দিতেন ভিভ। সুনীল গাভাস্কারের ভাষায়, ‘হি ওয়াজ আ গ্রেট এন্টারটেইনার, আ গ্রেট হিউম্যান বিং। হি মেড ব্যাটিং সো সিম্পল।’

ভিভকে বক্সার জো ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে তুলনা করে টনি কোজিয়ার বলছেন, ‘হি ওয়াজ ভেরি ওয়েল বিল্ট। সাচ আ ক্লিন স্ট্রাইকার অব দ্যা বল। বক্সারদের মতো ও যেন সারাক্ষণ বোলারদের বলতো, আই অ্যাম কামিং টু গেট ইউ।”

বিখ্যাত পেস কোয়ার্টেটের অন্যতম সদস্য কলিন ক্রফট এককথায় বলে দিয়েছেন, ‘ও ক্রিকেটের মোহাম্মদ আলী।’

অর্জন ও স্মরণীয় কীর্তি:

উইজডেন ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার: ১৯৭৭

ওয়াল্টার লরেন্স ট্রফি: ১৯৮০, ১৯৮৬

অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার: ১৯৯৪

নাইটহুড উপাধি লাভ: ১৯৯৯

উইজডেন মনোনীত শতাব্দীর সেরা পাচঁ ক্রিকেটারের একজন: ২০০০

ভিভ রিচার্ডসের নামে স্টেডিয়াম নির্মাণ: ২০০৭ 

শেষ করব আগে একটি অন্যরকম তথ্য দিয়ে। ভিভ রিচার্ডস হলেন ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড়, যিনি ফুটবল (বাছাইপর্ব) এবং ক্রিকেট দুটো বিশ্বকাপেই অংশগ্রহণ করেছেন। যদিও ফুটবল বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব উৎরাতে ব্যর্থ হয়েছিল তাঁর দেশ অ্যান্টিগা।