সাক্ষাৎকার

বড় দলকে হারিয়ে মজা পেতামঃ নেইল ও'ব্রায়েন

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 19:28 রবিবার, 10 ফেব্রুয়ারি, 2019

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

নেইল ও'ব্রায়েন আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটকে বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরার পেছনে অন্যতম কারিগরের একজন। তাঁর ভাই কেভিন ও'ব্রায়েন ও নেইল ও'ব্রায়েন জুটি বেঁধে বড় দল গুলোকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন বেশ কয়েকবার, যখন আয়ারল্যান্ড বিশ্ব ক্রিকেটের মানচিত্রে স্থায়ী সদস্যও ছিল না। দুই ভাইয়ের কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ়চেতা মনোভাব আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটকে ওয়ানডে ও টেস্ট মর্যাদার দলে পরিনত করেছে। নেইল ও কেভিন দুই ভাই পাকিস্তানের বিপক্ষে গত বছর মার্চে আয়ারল্যান্ডের ঐতিহাসিক প্রথম টেস্ট ম্যাচের একাদশে ছিলেন। কেভিন খেলা চালিয়ে গেলেও নেইল ও'ব্রায়েন গত বছর দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। পেশাদার ক্রিকেট ছাড়লেও ধারাভাষ্যকার হিসেবে প্রিয় খেলা ক্রিকেটে সম্পৃক্ত হয়েছেন তিনি। বিপিএল চলাকালীন সময় আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট ও ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে  ক্রিকফ্রেঞ্জির সাথে কথা বলেছেন নেইল ও'ব্রায়েন।

পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল...

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ অবসর পরবর্তী নতুন চাকরি কেমন উপভোগ করছেন?

নেইলঃ এখন পর্যন্ত ভালোই উপভোগ করছি। আমি গত চার-পাঁচ বছর ধরে ধারাভাষ্য করে আসছি, সাথে খেলা চালিয়ে গিয়েছি। এখন আমি অবসরের পর পুরোদমে ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করছি। সব ভালোই যাচ্ছে। বাংলাদেশে ফিরে এসে ভালো লাগছে। অনেক পরিচিত মুখের দেখা পাচ্ছি। এর আগে বাংলাদেশে এসেছিলাম ২০১৪ সালে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ১৫ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পর খেলাটাকে ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে দেখতে কেমন অনুভব করছেন?

নেইলঃ অবশ্যই ব্যতিক্রম। এখান থেকে আপনি খেলা নিয়ে গবেষণা করতে পারবে, খুঁটিনাটি সব কিছু নিয়েই আলাপ আলোচনা করতে পারবে। যখন আপনি মাঠে তখন আসলে এত বিশ্লেষণ করা যায় না। তখন ওই মুহূর্তেই বাস করেন আপনি, প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি বল। যখন আপনি ধারাভাষ্য কক্ষে, মাইক্রোফোন হাতে, আপনি দেখতে পাবেন কিভাবে ম্যাচটা বদলাচ্ছে। ম্যাচের মধ্যে থাকলে আপনি প্রতিযোগিতায় আবেগপ্রবণ হতে বাধ্য।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ২০০০ সালের শুরু থেকে ক্রিকেট খেলেছেন, ১৮ বছর আগের ক্রিকেট ও এখনকার ক্রিকেটের পার্থক্যটা কেমন?

নেইলঃ এখন অনেকটাই শক্তির খেলা, শক্তি ও ফিটনেস। যারা তিন ফরম্যাটে ক্রিকেট খেলে, তাদের ফিট ও স্বাস্থ্যবান হতেই হবে। খেলাটা খুব দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। টি-টুয়েন্টি প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। এই বিপিএলেই তো ২৩৯ রান হল। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪০০ রানের মত বড় স্কোর এখন কিছুই না। টেস্ট ক্রিকেটে রান রেট বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ওভার প্রতি ৪ রানে। ভালোর জন্যই বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটে। একই সাথে বদল আসছে প্লেয়ারদের স্কিলেও। মাঠে তরুণ ক্রিকেটারদের ফিল্ডিং স্কিল আমাকে অবাক করে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনার বাবা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছে, বোন পেশাদার ক্রিকেট খেলেছে। এমন ক্রিকেট পাগল পরিবারে বড় হওয়ার অভিজ্ঞতা অবশ্যই দারুণ ছিল? 

নেইলঃ হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা সব ধরনের খেলা খেলেছি। ফুটবল, হকি, ক্রিকেট...সব খেলেছি। তবে ক্রিকেট আমার সত্যিকারের ভালোবাসা ছিল। আমাদের পরিবারের সবাই ক্রিকেট খেলেছে। ছয় ভাই বোনের সবাই প্রতিদিন ক্রিকেট খেলতাম। তবে আয়ারল্যান্ডের হয়ে পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে খেলা, বিশ্ব ভ্রমণ করা, নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া, দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর সুযোগ পাওয়া, সব কিছু মিলিয়ে আমি নিজেকে ভাগ্যবান বলবো। এখন আবার অবসরের পর মিডিয়ায় ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে পারছি, এমন সুযোগের জন্যও আমি কৃতজ্ঞ। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ২০০০ সালের দিকে যখন খেলা শুরু করেছিলাম, তখন আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট কেমন ছিল?

নেইলঃ এখনকার তুলনায় সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না তখনকার সময়ে আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট কেমন ছিল। কোনো চুক্তি ছিল না, ছিল না কোনো অবকাঠামো। খেলার জন্য কিট পাওয়াও মুশকিল ছিল। দুটি শার্ট ও একটি ক্যাপ, এছাড়া কিছুই ছিল না আমার। আপনি যদি ভাগ্যবান হন, তাহলে আপনি ব্যাটের স্পন্সর পাবেন। কিন্তু এখন তো ক্রিকেট অনেক বড় ইন্ডাস্ট্রিতে পরিনত হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটাররা এখন ভালো অর্থ উপার্জন করছে। বিশ্ব ভ্রমণ করছে, টেস্ট ম্যাচ খেলছে। খেলাটা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ক্রিকেট খেলোয়াড়ের সংখ্যা বেড়েছে। আয়ারল্যান্ডের ভবিষ্যৎ অনেক উজ্জ্বল। আমাদের আরও ভালো করতে হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের সোনালি প্রজন্ম বলা হয় আপনাদের, ক্যারিয়ারের শুরুতে কী এমন অনুভূতি কাজ করত?

নেইলঃ হ্যাঁ, তখন আমরা অবগত ছিলাম। আমাদের দলটা ভালো ছিল। স্থিতিশীল দল ছিল। আয়ারল্যান্ড খেললে সবসময় ৯-১০ জন প্লেয়ার চেনা মুখ একাদশে থাকবে এটা নিশ্চিত ছিল। জয়েস, ও'ব্রায়েন, জনসন, মুনি...এরা খেলবেই, এটা সবাই জানত। আমি মনে করি, আপনি যেটা বললেন, সোনালি প্রজন্ম, তখন নিজেদের এভাবেই চিন্তা করতাম আমরা। তবে এখন অনেক ভালো ক্রিকেটার বের হয়ে আসছে। তাদের সুযোগের দরকার, কিছু সাহায্যর দরকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কিন্তু কঠিন, এখানে কোনো সহজ ম্যাচ পাবেন না। সবাইকেই দ্রুত শিখতে হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আয়ারল্যান্ড একদিন বিশ্বকাপ খেলবে, এটা ক্যারিয়ারের শুরুতে চিন্তা করেছিলেন?

নেইলঃ হ্যাঁ, আমাদের বিশ্বাস ছিল। তবে আমি বলব, আমি কখনো ভাবি নি আমরা টেস্ট খেলতে পারব। ভেবেছিলাম আমাদের পরের প্রজন্ম টেস্ট খেলতে পারবে। গত বছরের মে মাস সেই দিক থেকে অনেক বড় ঘটনা ছিল আমাদের ক্যারিয়ারের জন্য। তবে আমি বিশ্বকাপ খুব পছন্দ করতাম। আমি বড় মঞ্চ, বড় দলের বিপক্ষে পারফর্ম করে মজা পেতাম। সব মিডিয়া দেখবে, সারা দুনিয়া দেখবে, আপনি দলকে জেতাবেন, পুরো দুনিয়া কয়েক দিনের জন্য আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট নিয়ে কথা বলবে, এইসব আমার ভালো লাগত। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ২০০৭ সালে পাকিস্তানকে হারায় আয়ারল্যান্ড। আপনি ৭২ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছিলেন... 

নেইলঃ অবিশ্বাস্য ছিল। আমার জীবন বদলে দিয়েছে ওই ইনিংসটি। আমি খুবই বাজে ফর্মের মধ্যে ছিলাম। আমি ভালো ব্যাটিং করছিলাম না। তবে কোচ আমার পক্ষে ছিলেন। তিনি আমাকে সাহস দিয়েছিলেন। আমি ভালো কিছু করতে পারব, এই বিশ্বাস তাঁর ছিল। সেদিন সব কিছুই আমার পক্ষে গিয়েছে। ওই দিনটি আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আমি এরপরেই বিপিএল, আইসিএল ও আরও অন্যান্য টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পাই। বিভিন্ন লীগে খেলার সুবাদে আমি বড় ক্রিকেটারদের সাথে পরিচিত হই। আমার জন্য অনেক বড় অভিজ্ঞতা ছিল। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ২০০৭ বিশ্বকাপের পর আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের সময়টা ভালো কেটেছে... 

নেইলঃ আমরা বড় বড় দলকে হারিয়েছি। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা সুপার এইটে জায়গা করে নিয়েছিলাম। ২০১০ সালে বৃষ্টির কারণে ভাগ্য সহায় দেয়নি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ আমাদের ভালো কেটেছে। আমরা ঢাকায় এসেছিলাম, বাংলাদেশকে হারানোর সুযোগ ছিল কিন্তু আমরা সুযোগ হাতছাড়া করেছি। আমরা তালগোল পাকিয়ে ম্যাচটা হেরেছি। আমি আর আমার ভাই ভালো খেলছিলাম, আমাদের দু'জন একজনের ৫০-৬০ রান করলেই হত, আমরা ৩০ এর ঘরেই আউট হয়েছি। এরপর ইংল্যান্ডে হারানোর অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা ছিল।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ২০১১'র বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারানো আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের আরেকটি বড় ধাপ, তাই নয় কী?

নেইলঃ হ্যাঁ, রান তাড়া করে সেই ঐতিহাসিক জয়। আমরা তিনবার বিশ্বকাপে ৩০০ রান তাড়া করেছি। ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছি ৩২০ রানের লক্ষ্য তাড়া করে। ২০১১ সালে কলকাতায় নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছি। তবে হ্যাঁ, সেই ম্যাচটায় বিশ্বের সামনে আরেকবার নিজেদের চিনিয়েছে আয়ারল্যান্ড। জানান দিয়েছি যে, ২০০৭ সালে পাকিস্তানকে হারানো অঘটন ছিল না। কেভিন খুবই ভালো খেলেছে। আয়ারল্যান্ডে সবার জন্যই স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল সেইদিনটি। পুরো আয়ারল্যান্ডে সেই সময়টা শুধুই ক্রিকেটময় ছিল। আর কেভিন ছিল মূল তারকা।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনার বিশ্বকাপ রেকর্ড খুবই সমৃদ্ধ...

নেইলঃ হ্যাঁ, আমার বিশ্বকাপ রেকর্ড ভালো। গড় ৪০ এর মতন ছিল, ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে। আমি বড় মঞ্চ পছন্দ করতাম। আমি উল্টো ধুঁকতাম ছোট দলের বিপক্ষে। আমার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ছোট দলের বিপক্ষে ম্যাচ গুলোতে, যেখানে কোনো দর্শক নেই, খুব বেশি মানুষ দেখছেন, এমন অবস্থায় আমি খুব বেশি রান পাই নি। আমি একটু নিজেকে দেখাতে পছন্দ করতাম, মাঠ ভর্তি দর্শকদের সামনে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বড় মঞ্চে নিয়মিত ভালো করার পরও কম ম্যাচ খেলার কারণ কী ছিল?

নেইলঃ আমি মনে করি আমাদের অনেক ম্যাচ খেলা দরকার ছিল। আমি মনে করি দলটা আরও ম্যাচ খেলার যোগ্য দাবীদার ছিল। কিন্তু বড় ম্যাচ গুলো কালেভদ্রে পাওয়া যেত। এটা কিছুটা হতাশার ছিল। আমাদের যা ছিল তাঁর সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। আমি কাউন্টি ক্রিকেটে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের মানুষরা আরও বেশি ম্যাচের দাবীদার। বিশেষ করে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানের মতন বড় দল গুলোর বিপক্ষে। তবে সামনে আয়ারল্যান্ডের অনেক খেলা আছে। এই গ্রীষ্মে অনেক ম্যাচ আছে তাদের, আমি ধারাভাষ্য কক্ষ থেকে আইরিশদের খেলা দেখার অপেক্ষায় আছি। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ দশ দলের বিশ্বকাপ নিয়ে মতামত কী?

নেইলঃ সত্যি কথা বলতে, এটা খুবই বাজে সিদ্ধান্ত। আমি মনে করি ১২টি টেস্ট খেলুড়ে দলের সরাসরি বিশ্বকাপ খেলা উচিত। বাকি দুইটি দল আসবে সহযোগী সদস্য দেশ থেকে। আমার ব্যক্তিগত মতামত, বিশ্বকাপ হওয়া উচিত ১৪ দলের। দুই গ্রুপে ৭ দল থাকবে। আমি মনে করি এখন যা হচ্ছে সেটা সঠিক না। এটা হতাশার। তবে আয়ারল্যান্ডের সুযোগ ছিল কোয়ালিফাই করার, আমরা ভালো খেলতে পারি নি। আমরা জানতাম কি করতে হত, আমরা যথেষ্ট ভালো খেলি নি।

ক্রিকফেঞ্জিঃ আপনি বলেছিলেন কখনো টেস্ট ক্রিকেট খেলার চিন্তাও করেননি, আয়ারল্যান্ডের জন্য ২০১৭ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া কি অবাক করার মতন ছিল?

নেইলঃ আমরা জানতাম এটা হতে যাচ্ছে। যদি ২০১৪-১৫ সালের দিকে জিজ্ঞেস করত, আয়ারল্যান্ড টেস্ট খেলবে কিনা, আমি হলে জবাব নেতিবাচক দিতাম। আমি ভেবেছিলাম আমরা খেলার ছাড়ার পর টেস্ট স্ট্যাটাস আসবে। আমি পুরো কৃতিত্ব আইরিশ ক্রিকেটের প্রধান নির্বাহীকে দেব এবং প্লেয়ারদের, যারা ভালো ক্রিকেট খেলে ক্রিকেটকে এত দূর নিয়ে এসেছে। আমরা ভালো খেলেছি পাকিস্তানের সাথে। পাকিস্তান তাদের জায়গা থেকে খেলেছে। ভালো দর্শক ছিল মাঠে। শেষ দিনে খেলা গড়িয়েছিল। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আয়ারল্যান্ডের জন্য প্রথম টেস্টের সকালটা কেমন ছিল?

নেইলঃ এক কথায় অসাধারণ। প্রথম সকালে টেস্ট ক্যাপ হাতে পাওয়া, কয়েক ফোঁটা অশ্রু, স্নায়ুর চাপ সব কিছু মিলিয়ে স্মরণীয় সময় বলা যায়। প্রথম কয়েকটা বল খুব নার্ভাস ছিলাম। তবে দ্রুত উইকেট পাওয়ার কিছুটা শান্ত হয়েছি। সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। তবে আমি খুব বেশি রান পাই নি। মোহাম্মদ আমির আমার দুই স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেছিল। আমি উপভোগ করেছি, ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ কেভিন ও'ব্রায়েন এখানেও সেঞ্চুরি করেছে... 

নেইলঃ ইনিংসটি অসাধারণ ছিল। এত ঠাণ্ডা মাথায় সে খেলবে আমি ভাবি নি। সে বল ভালোই থামিয়েছে। ভালো টেকনিক, মানসিক শক্তি দেখিয়েছে সেদিন। বাজে বল শাসন করে খেলেছে সে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ পুরো ও'ব্রায়েন পরিবারের জন্য আবেগঘন মুহূর্ত ছিল নিশ্চয়ই?

নেইলঃ খুবই আবেগপ্রবণ... বাবা মা দুইজনই ছিলেন। পুরো পরিবার খেলা দেখেছে সরাসরি। মাঠেই পাশেই ছিল সবাই। আবারো, অনেক অশ্রু, খুশির অশ্রু।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ পাকিস্তানের বিপক্ষে আইরিশরা লড়াই করে হেরেছে, নিশ্চয়ই পাকিস্তানের বিপক্ষে পারফর্মেন্স আত্মবিশ্বাস যোগাবে?

নেইলঃ হ্যাঁ আমি তাই করি, যদি খেলা আইরিশ কন্ডিশনে হয়। আমাদের বোলাররা আছে। আয়ারল্যান্ড দেরাদুনে টেস্ট খেলবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। যা আয়ারল্যান্ডের জন্য সহজ হবে না। উইকেট শুষ্ক থাকবে। আফগানদের রাশিদ খান, মুজিবুর রহমান, মোহাম্মদ নবির মতন স্পিনার আছে। এটা আমাদের জন্য বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। তুলনা করতে গেলে ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলা টেস্টের চেয়ে কঠিন হবে দেরাদুন টেস্ট, শুধুমাত্র কন্ডিশনের কারণে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ দ্রুত অবসর নিয়েছেন, এমন অনুভূতি কাজ করে? কারণ সামনে আয়ারল্যান্ডের অনেক খেলা রয়েছে। 

নেইলঃ নাহ আমি একদমই আফসোস করি না। আমি অনুশীলন করা উপভোগ করছিলাম না। গত ছয় মাস আমি অনুশীলন করা একদমই উপভোগ করছিলাম না। কিন্তু আমি সবসময় অনুশীলন উপভোগ করে এসেছি, পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে। আমি শতভাগ প্রস্তুতি নিতে পারছিলাম না। আমি যেমন খেলতে চাচ্ছি, ওই রকম পারফর্ম করতে না পারলে খেলা চালিয়ে যেতে চাই নি। আমি আমার সিদ্ধান্তে খুশি। আমি জীবনের পরের অধ্যায় উপভোগ করছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলবে না আয়ারল্যান্ড, এতে করে আইরিশ ক্রিকেট পিছিয়ে পড়বে না তো?

নেইলঃ বিশ্বকাপ না খেলা হতাশাজনক। তবে আয়ারল্যান্ডের অনেক খেলা অপেক্ষা করছে। গ্রীষ্মে অনেক ম্যাচ খেলবে ওরা। ত্রিদেশীয় সিরিজ আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশের বিপক্ষে। জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তান সিরিজ আছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলবে আইরিশরা। ছেলেদের কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে এবং উপভোগ করতে হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ যথেষ্ট ক্রিকেটার আসছে আইরিশ ক্রিকেটের পাইপলাইন থেকে?

নেইলঃ এখন অনেকেই ক্রিকেট খেলছে যারা কখনই ক্রিকেট খেলে নি। এমন এমন জায়গায় খেলা ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে আগে কখনো ক্রিকেট খেলা হয় নি। চিত্রপট বদলে যাচ্ছে। অনেক উপমহাদেশের ক্রিকেটার ক্রিকেট খেলছে আয়ারল্যান্ডে। আমাদের দলে এখন সিমি সিং খেলছে, সে পাঞ্জাবে জন্মগ্রহন করেছে। আমি নিশ্চিত, আগামী দশ বছরে আরও অনেক এশিয়ান ক্রিকেটার আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলবে। আর এটা ভালো দিক। আমরা আমাদের দলে ভালো স্পিনার, বিগ বিটার চাইব। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ এবারের আয়ারল্যান্ড সফরে কেমন করবে বাংলাদেশ?

নেইলঃ সিরিজটি ভালো হবে। দুই বছর আগে বাংলাদেশ খেলেছিল আইরিশ কন্ডিশনে এবং ভালো খেলেছে। বোলাররা ভালোই উপভোগ করেছে, বিশেষ করে পেসাররা। উইকেট সবুজ ছিল। আর বাংলাদেশ দলে এখন খুবই ভালো বেশ কয়েকজন পেস বোলার রয়েছে। আমি তরুণ পেসারদের দেখে মুগ্ধ হচ্ছি। বিশেষ করে, তাসকিন আহমেদ ভালো করছে, রুবেল হোসেন আছেন। তবে আমি তরুণদের দেখে মুন্ধ হয়েছি। আমার মনে হয় বেশ কিছু তরুণ প্রতিভা আছে পেস বোলিং বিভাগে।