সাক্ষাৎকার

বুকে হাত দিয়ে বলতে চাই, শতভাগ দিয়ে এসেছিঃ নাঈম

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 15:47 শুক্রবার, 28 ডিসেম্বর, 2018

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দলে ডাক পাওয়া তরুণ স্পিনার নাঈম হাসান টেস্ট ক্যাপ পেয়েছেন বছরের শেষে এসে, উইন্ডিজদের বিপক্ষে নিজ ঘরের মাঠ চট্রগ্রামে।

নিজের অভিষেক টেস্টেই সবচেয়ে কম বয়সে পাঁচ উইকেট নেয়ার বিশ্ব রেকর্ড গড়েন তিনি। সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সেরা বোলিং ফিগারের (৮/৪৭) রেকর্ডটিও নিজের করে নিয়েছেন সদ্য ১৮ পূর্ণ হওয়া নাঈম। ক্রিকফ্রেঞ্জির সাক্ষাৎকারে নাঈম টেস্ট ক্রিকেট, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট, সীমিত ওভারের ক্রিকেট নিয়ে তাঁর ভাবনা ও ক্রিকেটবোধ নিয়ে কথা বলেছেন।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ টেস্টে প্রথমবারের মত ডাক পেয়েছেন বছরের শুরুতে, এখন পেছনে ফিরে তাকালে সেই কেমন লাগে?

নাঈমঃ প্রথমবার যখন ডাক পেয়েছিলাম, আমি নিউজিল্যান্ডে ছিলাম তখন (অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ)। ভালো লেগেছিল টেস্ট দলে ডাক পেয়ে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ এবছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে দারুন পারফর্মেন্স ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্মেন্সটা কিভাবে দেখছেন?

নাঈমঃ আমি আসলে যেখানেই খেলি না কেন, আমি সবসময় সিরিয়াস থাকি। আমি যেই ম্যাচই খেলতে যাই না কেন, আমি চিন্তা করি আমার বেস্ট দেয়ার। এবার এনসিএলে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়ার পর চিন্তা ছিল বিসিএলেও সর্বোচ্চ উইকেট নিব। ওই সময়টায় জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি, জাতীয় দলে খেলেছি, আল্লাহর রহমতে ভালোই গিয়েছে। এরপর ইমার্জিং কাপ খেলতে চলে গিয়েছি। এরপর বিসিএল খেলা হয়নি।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ইমার্জিং কাপের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

নাঈমঃ ইমার্জিং কাপের প্রথম ম্যাচে আমাকে খেলানো হয়নি। আমাকে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে খেলিয়েছে। আমার যেই দায়িত্বটা ছিল, আমি সেটা পূর্ণ করেছি। প্রথম ম্যাচে নতুন বলে ব্যাটিং পাওয়ারপ্লেতে তেমন কেউ ভালো বোলিং করেনি। এরপরের ম্যাচ থেকে আমিই পাওয়ারপ্লেতে বল করেছি। ভালোই গিয়েছে। ইকনমিও কম ছিল। উইকেটও পেয়েছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ এত দ্রুত টেস্ট অভিষেক অবাক করেছে?

নাঈমঃ ওটা স্বাভাবিক লেগেছে। আমার মনে হয়নি আমি জাতীয় দলে খেলছি। এত চাপ ছিলো না। তবে খেলা শেষ হওয়ার পর ফেরার পথে মনে হচ্ছিল, একটা স্বপ্নের দিন চলে গেল। এমনিতে বাড়তি কোন অনুভূতি ছিল না।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ প্রথম টেস্টে সাকিব আল হাসানদের মত ক্রিকেটারদের সাথে খেললেন, একই সাথে ড্রেসিং রুম শেয়ার করলেন।

নাঈমঃ সাকিব ভাই খুব ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। প্রথম ম্যাচে আমরা অনেক কথা বলে বোলিং করেছি। অনেক সাহস দিয়েছেন তিনি। তাঁর অনেক অভিজ্ঞতা তিনি শেয়ার করেছেন।

ক্রিকফেঞ্জিঃ ঘরোয়া ও টেস্ট ম্যাচের মধ্যে পার্থক্য কেমন অনুভব করেছেন?

নাঈমঃ সত্যি কথা বলতে, আমার তেমন কিছুই মনে হয় নি। আপনি জাতীয় দলের পার্থক্যটা যদি বড় করে দেখেন, তাহলে দেখবেন পার্থক্যটা অনেক বিশাল, অনেক কঠিন। আর যদি স্বাভাবিক খেলার মত নেন, স্বাভাবিক খেলার মত খেলে যান, তাহলে আপনার জন্য সহজ হবে। আমি স্বাভাবিকভাবে নিয়েছি। ওই জায়গাটা অনেক কঠিন। কিন্তু আমি এতকিছু চিন্তা করিনি।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ এই মানসিকতা এত দ্রুত কিভাবে রপ্ত করেছেন, সব কিছু এত সহজ ভাবে দেখা?

নাঈমঃ এই পরিবর্তনটা এসেছে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট খেলা শেষ করার পর। আমি অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট খেলার সময় চিন্তা করতাম আমি সেরা খেলোয়াড় হব। কিন্তু তখন আমার কোন প্রক্রিয়া জানা ছিল না। সেরা হতে হলে চিন্তা ভাবনা তো ইতিবাচক হতে হবে। আমি জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর আমি যখন প্রিমিয়ার লীগ খেলতে যাই। প্রথম যখন আমাকে জাতীয় দলে ডাকা হয়, তখন আমি খেলার সুযোগ পাই নি। তবে আমি দলের সাথে থেকে ক্রিকেটারদের চিন্তাভাবনা, ইতিবাচক মানসিকতা দেখেছি। উনারা কি কি করে দেখেছি। সেখান থেকেই নিজেকে বদলে ফেলা শুরু করি আমি। এখন আমি সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করি।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনি এখন একজন টেস্ট ক্রিকেটার, গর্ব বোধ করেন না?

নাঈমঃ এটা তো মাত্র শুরু। গর্ববোধ করার কিছু নেই। কারণ আমি তো সাধারন মানুষ। আমার মত অনেক ছেলে আছে কষ্ট করছে। আল্লাহ আমাকে দিয়েছে, এটাকে আমার অনেক দূর নিয়ে যেতে হবে। আমার বিশ্বমানের স্পিনার হওয়ার ইচ্ছে আছে। যেদিন খেলা ছাড়ব, কিছু করা করে সফল হয়ে খেলাটা ছাড়ব। তখন গর্ববোধ করব।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে সফল স্পিনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেন?

নাঈমঃ জাতীয় দলে আমার জায়গায় মিরাজ ভাই আছে। আমার এখন টার্গেট থাকবে, আমাকে যেই জায়গাই সুযোগ দিবে, আমি নিজেকে প্রমান করার চেষ্টা করব। টেস্টে খেলানো হলে টেস্টে, ওয়ানডে হলে ওয়ানডেতে। আমি মনে করি আমি সব ফরম্যাটে খেলতে পারব।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ টেস্টের বোলিংয়ের সাথে সীমিত ওভারের বোলিংয়ে কোন কোন বিষয় মানিয়ে নিতে হয়?

নাঈমঃ আমি বলব যে টেস্টে ভালো খেলতে পারবে, সে সব ফরম্যাটে ভালো খেলতে পারবে। কারণ টেস্ট ম্যাচে অনেক সময় অবস্থা তৈরি হয়। হয়তো অনেক সময় দেখা যায় ব্যাটসম্যান একদম ডিফেন্স করে খেলছে। তখন আপনি এক রকম বোলিং করবেন। আবার অনেক সময় দেখবেন ওয়ানডের মতন সিঙ্গেল নিয়ে খেলছে, বাজে বল মারছে। তখন এক রকম বোলিং করতে হবে। আবার অনেক সময় দেখবেন ব্যাটসম্যান ক্রমাগত বড় শট খেলছে। তখন আপনাকে টি-টুয়েন্টির বোলিং করতে হবে। তিন ফরম্যাটের খেলাই কিন্তু টেস্টে আছে। যারা বলে ওয়ানডে বোলার, টেস্ট বোলার... এইগুলো সব ভুল।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ব্যাটিংয়ে সাফল্যের পেছনের কারণ কি?

নাঈমঃ আমি ব্যাট হাতে নিয়ে যখন নামি, তখন আমি ব্যাটসম্যান। আমি নিজেকে তখন একজন ব্যাটসম্যান মনে করি। আর আমি বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান ছিলাম।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বিপিএলে প্রত্যাশার চাপ থাকবে, কিভাবে দেখছেন?

নাঈমঃ আমি কোন চাপ নিচ্ছি না। আমি আমার ন্যাচারাল ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করব। আমি কখন ভালো খেলি খারাপ খেলি, সেটা নিয়ে তেমন কিছু চিন্তা করি না। আমি আজ উইকেট পেয়েছি, পাই নি, রান করেছি কি করি নি...এইসব ভাবনা কাজ করে না। আমার চিন্তা থাকে মাঠের মধ্যে শতভাগ দিয়ে আসার। আমি যখন মাঠ থেকে ফিরে আসি, আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব যে আমি শতভাগ দিয়ে এসেছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ তার মানে আপনি ফলাফল নয়, প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী?

নাঈমঃ হ্যাঁ, আমি প্রক্রিয়াটা ঠিক রাখার চেষ্টা করি এবং নিজের শতভাগ মাঠে দিয়ে আসার চেষ্টা করি।