ক্রিকেট লিজেন্ডস

গ্লেন ম্যাকগ্রাঃ দ্য বোলিং মেশিন

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশের তারিখ: 14:54 শুক্রবার, 05 অক্টোবর, 2018

|| ফ্রাইডে স্পেশাল ||

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সোনালি প্রজন্মটা এসেছিল নব্বই দশকের মধ্যভাগে; একঝাঁক বিশ্বমানের চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারের হাত ধরে। তাদেরই একজন হলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা। প্রতিভা, পরিশ্রম, নিষ্ঠা আর অধ্যবসায়ের গুণে যিনি নিজের সামর্থ্যকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। সাবেক এই ডানহাতি পেসার দেখিয়েছেন শুধু গতি দিয়েই নয়; অ্যাকুরেসি, মাপা লেন্থ আর বুদ্ধিমত্তা দিয়েও কীভাবে ব্যাটসম্যানদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে হয়।

পরিসংখ্যান বলছে, ম্যাকগ্রাই ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম ফাস্ট বোলার। টেস্টে তাঁর চাইতে বেশি উইকেট আছে শুধুমাত্র জিমি অ্যান্ডারসনের। তবে ক্রিকেটের সব সংস্করণ মিলিয়ে এগিয়ে আছেন ম্যাকগ্রাই। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৯৭৯টি আন্তর্জাতিক উইকেট যা পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ম্যাকগ্রার বলে ভয়ঙ্কর গতি, দানবীয় আগ্রাসন কিংবা মারাত্মক সুইং কোনটাই ছিল না। তিনি ছিলেন মূলত সিম নির্ভর 'হিট দ্য ডেক' বোলার। হাই আর্ম একশন আর ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার শারীরিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে তিনি এক্সট্রা বাউন্স ও ক্যারি আদায় করে নিতে পারতেন যেকোন উইকেট থেকে। শার্প বাউন্সের সাথে যখন ল্যাটেরাল সিম মুভমেন্ট যোগ হত, ম্যাকগ্রা হয়ে উঠতেন রীতিমতো আনপ্লেয়েবল।

অফ স্টাম্পের বাইরে, ফোর্থ-ফিফথ স্টাম্প করিডোরে, গুড লেন্থ বরাবর একটার পর একটা, ওভারের পর ওভার বল করে যেতে পারতেন ম্যাকগ্রা। লাইন-লেন্থের ওপর অবিশ্বাস্য নিয়ন্ত্রণ, ডিসিপ্লিন এবং কনসিস্টেন্সির কারণে একসময় ম্যাকগ্রার নামই হয়ে যায় 'বোলিং মেশিন'!

ব্যাটসম্যানের টেকনিক ও টেম্পারমেন্টের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিতে পারত এই বোলিং মেশিন। মাথা খাটিয়ে যেকোন ব্যাটসম্যানের দুর্বলতাও পড়ে ফেলতে পারত মুহূর্তের মধ্যেই। ব্যাটসম্যানকে অফ স্টাম্পের বাইরে একটা লুপের মধ্যে আটকে রাখতেন ম্যাকগ্রা। ফলে বেশিরভাগ সময় ব্যাটসম্যান নিজেই উইকেট বিলিয়ে আসত অধৈর্য হয়ে।

অফ কাটার, ক্রস সিম, স্প্লিট ফিঙ্গার বল, স্লোয়ার বাউন্সার কিংবা ইয়র্কারের মত কার্যকর ভ্যারিয়েশন থাকায় তিনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও পেয়েছেন অভাবনীয় সাফল্য। তাছাড়া ক্যারিয়ারের শেষদিকে এসে আয়ত্ত করেছিলেন রিভার্স সুইংটাও যা তাঁর উইকেট টেকিং অ্যাবিলিটিকে বাড়িয়ে দিয়েছিল কয়েকগুণ।

পুরো নাম গ্লেন ডোনাল্ড ম্যাকগ্রা। জন্ম ১৯৭০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, নিউ সাউথ ওয়েলসের ডাব্বো নামক এলাকায়। তাঁর বেড়ে ওঠা, ক্রিকেটের প্রথম পাঠ সবকিছুই সেখানে।

ছেলেবেলা থেকেই ম্যাকগ্রার মধ্যে শেখার আগ্রহ ছিল প্রবল। একটা পানিভর্তি ড্রামকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে টার্গেট করে ঘন্টার পর ঘন্টা বোলিং অনুশীলন করতেন ম্যাকগ্রা।

পেশাদার ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে ১৮ বছর বয়সে নিউ সাউথ ওয়েলস ছেড়ে পাড়ি জমান সিডনিতে। সিডনির স্থানীয় টুর্নামেন্ট 'গ্রেড ক্রিকেটে' অংশ নেন সাদারল্যান্ড ক্লাবের হয়ে।

১৯৯২-৯৩ মৌসুমে জন্মভূমি নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক।

মাত্র ৮টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে ১৯৯৩ সালে পার্থে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক; মার্ভ হিউজের বিকল্প হিসেবে। ডেব্যু টেস্টে ম্যাকগ্রার শিকার ছিল ৩ উইকেট।

মাসখানেক পরই রঙিন পোশাকে আন্তর্জাতিক অভিষেক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, এমসিজিতে।

খুব দ্রুতই ঘটে গিয়েছিল সবকিছু, ঠিক যেন স্বপ্নের মত।

১৯৯৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ২-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জেতে অস্ট্রেলিয়া। ওই সিরিজ হারটাকে দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা ক্যারিবীয় সাম্রাজ্যের পতন হিসেবে দেখেন অনেকে। ১৭ উইকেট নিয়ে তাতে বড় অবদান ছিল ২৫ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার ম্যাকগ্রার।

ওই সিরিজের পর থেকে আর একটিবারের জন্যও পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি তাঁকে। সোনালী প্রজন্মের ম্যাচ উইনারদের কল্যাণে একের পর এক ম্যাচ জিততে থাকে অস্ট্রেলিয়া। ওদিকে ম্যাকগ্রাও ধীরে ধীরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন বিশ্ব ক্রিকেটের শীর্ষ বোলারদের একজন হিসেবে।

১৯৯৭ সালের অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলেন ম্যাকগ্রা। প্রথম ম্যাচেই ৩৮ রানে ৮ উইকেট নিয়ে নাম ওঠান লর্ডসের অনার্স বোর্ডে।

১৯৯৫, ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০১ ও ২০০৫ — টেস্টে সর্বমোট ৫ বার নিয়েছেন এক পঞ্জিকাবর্ষে ৫০ বা তার বেশি উইকেট।

১৯৯৯ সালে ইতিহাসের 'প্রথম' বোলার হিসেবে টেস্ট এবং ওয়ানডে উভয় ফরম্যাটেই ৫০ বা তার বেশি উইকেট নেয়ার বিরল কীর্তি গড়েন ম্যাকগ্রা।

২০০০ সালে প্রথমবারের মত কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে যান ইংল্যান্ডে। উস্টারশায়ারের হয়ে সেবার ১৪টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেন তিনি। উইকেট পেয়েছিলেন ৮০টা, মাত্র ১৩.২১ গড়ে!

উস্টারের হয়ে খেলার সময়কার একটি ঘটনা। সতীর্থ শেন ওয়ার্নের সাথে এক হাজার ডলারের একটা বাজি ধরেছিলেন ম্যাকগ্রা। বলেছিলেন এবারের কাউন্টি সিজনে একটা ফিফটি নাকি করেই ছাড়বেন! এবং সেটা তিনি সত্যি সত্যি করে দেখিয়েছিলেন! নটিংহ্যামশায়ারের বিপক্ষে ফার্স্ট ক্লাস ক্যারিয়ারের প্রথম পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের (৫৫) ইনিংস খেলার পর বল হাতেও নিয়েছিলেন ৮ উইকেট।

২০০০ সালের ১লা ডিসেম্বর, টেস্ট ক্যারিয়ারের একমাত্র হ্যাটট্রিকটা পেয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, পার্থের ওয়াকায়। পরপর ৩ বলে ম্যাকগ্রার শিকার হয়েছিলেন যথাক্রমে শেরউইন ক্যাম্পবেল, ব্রায়ান লারা ও জিমি অ্যাডামস।

মজার ব্যাপার হল, ব্রায়ান লারার উইকেটটা ছিল ম্যাকগ্রার ৩০০তম টেস্ট উইকেট। এবং সেটা তিনি নিয়েছিলেন রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে।

অনেকে হয়ত জানেন না, টেস্টে সবচেয়ে কম রান খরচায় ১০ উইকেট লাভের রেকর্ডটি ম্যাকগ্রার দখলে। ২০০৪ সালে পার্থের ওয়াকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে দু'ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ২৭ রানে ১০ উইকেট (৮/২৪ ও ২/৩) নিয়েছিলেন ম্যাকগ্রা। অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ৪৯১ রানের বিশাল ব্যবধানে!

ম্যাকগ্রা বল হাতে যতটা ভয়ঙ্কর ছিলেন, ব্যাট হাতে ছিলেন ততটাই হাসির পাত্র। টেস্ট এবং ওয়ানডে — দুই অভিষেকেই উপহার পেয়েছেন 'গোল্ডেন ডাক'! অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে টেস্টে সর্বোচ্চ ৩৫ ডাকের রেকর্ডটাও ম্যাকগ্রার দখলে। নিজে বারবার ০ রানে আউট হতেন বলে সেই ঝালটা তিনি মেটাতেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের ওপর।

টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ '১০৪' বার প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের ০ রানে আউট করেছেন ম্যাকগ্রা!

২০০৪-০৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাকগ্রা পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট ফিফটি। তাঁর ৬১ রানের ইনিংসটা টেস্ট ইতিহাসে ১১ নম্বরে নামা ব্যাটসম্যানের তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর।

'এগারো নম্বর' ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের রেকর্ডটাও একসময় ছিল ম্যাকগ্রার দখলে। তাঁর ৬০৩ রানের রেকর্ডটা পরে ভেঙে দেন শ্রীলংকার মুত্তিয়া মুরালিধরন (৬২৩ রান)।

ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত ২০০৫ সালের অ্যাশেজটা ছিল স্মরণকালের মধ্যে সবচাইতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজ। এদিকে অনুশীলনের সময় চোটে পড়ে সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ দুটি টেস্ট মিস করেন ম্যাকগ্রা। ফলশ্রুতিতে দুটো ম্যাচেই হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে ১৯ বছর পর অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করেছিল ইংলিশরা। আর ম্যাকগ্রার কপালে জুটেছিল ক্যারিয়ারের প্রথম অ্যাশেজ হারের দুঃখ। অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়ের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে ম্যাকগ্রার অনুপস্থিতিকেই দায়ী করেছিলেন অনেকে।

উল্লেখ্য, লর্ডসে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ৫০০ উইকেটের মাইলফলক অতিক্রম করেন ম্যাকগ্রা। ম্যাকগ্রার ৫০০তম শিকার ছিলেন ইংলিশ ওপেনার মার্কাস ট্রেসকোথিক। প্রথম ইনিংসে ২১ রানে ৫ উইকেটের ম্যাচ উইনিং স্পেলসহ ম্যাকগ্রা একাই নিয়েছিলেন ৯ উইকেট; যার সুবাদে অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ২৩৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। 

২০০৫ সালের অক্টোবরে 'আইসিসি সুপার সিরিজে' অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচে কোর্টনি ওয়ালশকে (৫১৯ উইকেট) টপকে ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের কীর্তি গড়েন ম্য্যকগ্রা।

টেস্ট ক্যারিয়ারের ৫২০তম শিকার হিসেবে ম্যাকগ্রার আরও একটি মাইলফলকের অংশীদার হয়েছিলেন ব্রায়ান লারা।

২০০৬-০৭ সালে ঘরের মাঠে ফিরতি অ্যাশেজেই ইংলিশদের ৫-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে 'মধুর প্রতিশোধ' নেয় অস্ট্রেলিয়া। তাতে বড় অবদান ছিল 'বুড়িয়ে যাওয়া' ম্যাকগ্রারও, মাত্র ২৩.৯০ গড়ে নিয়েছিলেন ২১ উইকেট।

উল্লেখ্য, ব্রিসবেনের গ্যাবায় অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম ম্যাচটা ছিল ম্যাকগ্রার 'কামব্যাক' টেস্ট। ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য দীর্ঘ আট মাস ক্রিকেট থেকে দূরে ছিলেন তিনি। ফিরে এসেই দুর্দান্ত বোলিংয়ে তুলে নেন ৬ উইকেট।

১২৪ টেস্টে ম্যাকগ্রার শিকার ২১.৬৪ গড়ে ৫৬৩ উইকেট। টেস্টে কমপক্ষে ৪০০ উইকেট পেয়েছেন এমন বোলারদের মধ্যে বোলিং গড়ে (২১.৬৪) ম্যাকগ্রার চাইতে এগিয়ে আছেন শুধুমাত্র স্যার কার্টলি অ্যাম্ব্রোস (২০.৯৯)।

যেকোন অজি কিংবা ইংলিশ ক্রিকেটারের গ্রেটনেসের মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয় অ্যাশেজকে। ম্যাকগ্রা যথারীতি সেখানেও রেখেছেন কৃতিত্বের ছাপ। ক্যারিয়ারে মোট ২৯ বার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছেন তিনি; যার মধ্যে ১০ বারই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

উল্লেখ্য, খেলোয়াড়ি জীবনে ইংল্যান্ডের কাছে অ্যাশেজ হার কোনভাবেই মেনে নিতে পারতেন না ম্যাকগ্রা। প্রতিবার অ্যাশেজের আগে তিনি একই ভবিষ্যদ্বাণী করতেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ৫-০ ইংল্যান্ড’!

টেস্টে ম্যাকগ্রার 'বানি' ছিলেন মাইক আথারটন। সাবেক এই ইংলিশ ওপেনারকে মোট ১৯ বার আউট করেছেন ম্যাকগ্রা। নির্দিষ্ট একজন ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে টেস্টে কোন বোলারের এটাই সেরা সাফল্য।

ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলারদের তালিকায় ম্যাকগ্রার অবস্থান ৭ম। ২৫০টি ওয়ানডে খেলে মাত্র ২২.০২ গড়ে তাঁর অর্জন ৩৮১ উইকেট। ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন ৭ বার, ৪ উইকেট ৯ বার।

উল্লেখ্য, ওয়ানডেতে কমপক্ষে ৩০০ উইকেট নিয়েছেন এমন বোলারদের মধ্যে সেরা বোলিং গড় (২২.০২) ম্যাকগ্রার। শন পোলকের (৩.৬৭) পর ওয়ানডে ইতিহাসের দ্বিতীয় সেরা ইকোনমি রেটটা (৩.৮৮) গ্লেন ম্যাকগ্রার।

বিশ্বকাপের সবচাইতে সফল বোলার কে? এই প্রশ্নের কেবল একটাই উত্তর হতে পারে গ্লেন ম্যাকগ্রা! ওয়ানডেতে যে ১৫ বার ম্যাচসেরা হয়েছেন, তার ৬টাই এসেছে বিশ্বকাপে!

১৯৯৬ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ৪টি বিশ্বকাপ খেলেছেন ম্যাকগ্রা। ৪ বারই ফাইনালে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া এবং একমাত্র '৯৬ বিশ্বকাপ বাদে ৩ বারই হয়েছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।

২০০৭ সালের বিশ্বকাপটা ছিল ম্যাকগ্রার শেষ টুর্নামেন্ট। ২৬ উইকেট নিয়ে ম্যাকগ্রা হয়েছিলেন 'ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট', অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল টানা তৃতীয় শিরোপা।

বিশ্বকাপে ম্যাকগ্রা হচ্ছেন বোলিংয়ের ‘শচীন টেন্ডুলকার’! বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরে বোলিং রেকর্ডের প্রায় সবগুলোই ম্যাকগ্রার দখলে! চলুন এক নজরে দেখে নিই সেগুলো-

★ বিশ্বকাপের সব আসর মিলিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট - ৭১টি।
★ বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট - ২৬টি, ২০০৭ বিশ্বকাপে।
★ বিশ্বকাপের সেরা বোলিং ফিগার - ৭/১৫, নামিবিয়ার বিপক্ষে, ২০০৩ বিশ্বকাপে।
★ বিশ্বকাপে সর্বাধিক মেডেন ওভার - ৪২টি।

দুই ম্যাচের সংক্ষিপ্ত টি২০ ক্যারিয়ারে ম্যাকগ্রা উইকেট নিয়েছেন ৫টা। ক্যারিয়ারের শেষ বলেও পেয়েছেন উইকেটের দেখা। কাকতালীয় ব্যাপার হল, ২০০৭ সালে সিডনিতে টেস্ট ক্যারিয়ারের শেষ বল আর দেশের মাটিতে খেলা শেষ ওয়ানডের শেষ বলেও উইকেট পেয়েছেন তিনি! আরও অবাক করা ব্যাপার হল, তিনটি 'শেষ' ম্যাচেই প্রতিপক্ষের নাম ছিল ইংল্যান্ড!

ম্যাকগ্রার নিজ হাতে গড়া দাতব্য সংস্থা 'ম্যাকগ্রা ফাউন্ডেশন'। এই সংগঠনের প্রাপ্ত অর্থ স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের চিকিৎসায় ব্যয় করা হয়। উল্লেখ্য, ম্যাকগ্রার প্রথম স্ত্রী জেন ম্যাকগ্রা দীর্ঘ ১০ বছর ধরে স্তন ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে মারা যান ২০০৮ সালে।

শেষ করব একটি মজার তথ্য দিয়ে। ম্যাকগ্রার ডাক নাম 'পিজিয়ন' যার মানে হচ্ছে কবুতর। লিকলিকে গড়নের সাদা কবুতরের মতই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে হেলে দুলে বল করতেন ম্যাকগ্রা। এই নামটা তাঁকে দিয়েছিলেন স্থানীয় কোচ ব্র্যাড ম্যাকনামারা। তিনি বলতেন, "You've stolen a pigeon's legs, Mcgrath".