এশিয়া কাপ

এক হাতে ব্যাটিং করা যোদ্ধারা

সৈয়দ সামি

সৈয়দ সামি
প্রকাশের তারিখ: 20:49 রবিবার, 16 সেপ্টেম্বর, 2018

|| ডেস্ক রিপোর্ট || 

দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিককে সঙ্গ দিতে মাঠে নেমেছিলেন ইনিংসের প্রথম ওভারেই চোট পাওয়া তামিম। এর মধ্যেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বেরিয়ে যায় অন্তত ৬ সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেছেন তিনি।

আরেকবার যদি বল লাগে আঘাত পাওয়া জায়গাটায়, এই টুর্নামেন্ট কেন পুরো ক্যারিয়ারটাই তাঁর পড়ে যাবে হুমকিতে। এমন বড় ঝুঁকি নিয়েই এক হাতে ব্যাট করেছেন তামিম। সব জেনে-বুঝেই শেষে আবার ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তিনি।

এই টাইগার ওপেনার মালিঙ্গার করা যে শর্ট বলে ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছেড়েছিলেন এসেই লাকমলের শর্ট বল সামলাতে হয়েছে তাকে। বাঁ-হাতটা কোনোভাবে সামলে, এক হাতেই বলটা ফিরিয়েছেন। এরপর আরও ১৮ বল বাকি ছিল ইনিংসের।

তামিমের উদ্দেশ্য ছিল মুশফিককে সঙ্গ দিয়ে স্কোরটা প্রতিপক্ষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়ার। সেই উদ্দেশ্যে সফল তামিম। এই দুজনে শেষ উইকেটে ১৬ বলে ৩২ রানের অতিমূল্যবান জুটি গড়েছেন। বাংলাদেশ পেয়েছে ২৬১ রানের লড়াইয়ের স্কোর।

সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় এখন তামিমের এক হাতের ব্যাটিং। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় তামিমের আগেও বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার দলের প্রয়োজনে এক হাতে ব্যাটিং করেছেন। ফিরে দেখে নেয়া যাক আলোচিত তিন জনের ব্যাটিংয়ের মুহূর্ত।

গ্রায়েম স্মিথ, ২০০৯, সিডনি

সাবেক প্রোটিয়া অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনিতে টেস্ট ম্যাচ বাঁচাতে ভাঙ্গা হাত নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন। ম্যাচের বাকি ছিল তখন ৮ ওভার ২ বল। স্মিথ মাঠে নেমে অজি পেসার মিচেল জনসন আর ডগ বলিঞ্জারের একের পর এক বল ফিরিয়েছেন এক হাতে।

তবে ম্যাচ বাঁচাতে পারেননি তিনি। ম্যাচের ঠিক ১০ বল বাকি থাকতে মিচেল জনসনের একটি বল ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে বেড়িয়ে যায়। সেই বলেই বোল্ড হয়ে আউট হন স্মিথ। ম্যাচ বাঁচাতে না পারলেও স্মিথের এক হাতের লড়াই ক্রিকেট প্রেমীরা কখনও ভুলতে পারবেন না।

ম্যালকম মার্শাল, ১৯৮৪, হেডিংলি

১৯৮৪ সালে হেডিংলিতে ভাঙ্গা বা হাত নিয়েই ৭ উইকেট নিয়েছিলেন ডানহাতি পেসার ম্যালকম মার্শাল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেডিংলি টেস্টের প্রথম দিনে ইংল্যান্ডের ক্রিস ব্রডের ব্যাট থেকে ছুটে আসা একটি বল ফলো থ্রুতে ফেরাতে গিয়ে বুড়ো আঙ্গুলে চিড় ধরে এই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারের।

এই ম্যাচের তৃতীয় দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ল্যারি গোমেজ একাই ব্যাট হাতে লড়ছিলেন। দলের নবম উইকেটের পতনের সময় গোমেজ অপরাজিত ছিলেন ৯৬ রানে। তাকে সেঞ্চুরি পাইয়ে দিতে সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাঠে নেমে যান মার্শাল।

এরপর ভাঙ্গা হাত নিয়েই বল হাতেও চমক দেখান তিনি, ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে বা হাতে কনুই পর্যন্ত ব্যান্ডেজ দিয়ে পেচিয়ে বল করতে নামেন ম্যালকম মার্শাল। ২৬ ওভার বল করে ৫৩ রান দিয়ে ৭ টি উইকেট দখল করেছিলেন সেই ইনিংসে।

পল টেরি, ১৯৯৯, ওল্ড ট্রাফোর্ড

ব্যাটে বলের পারফর্মমেন্সে কোনো ভাবেই কিংবদন্তীতুল্য নন পল টেরি। তবে, ভাঙ্গা হাত দিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেই তিনি কিংবদন্তীতুল্য হয়েছেন। ১৯৯৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে সতীর্থ অ্যালান ল্যাম্বকে সেঞ্চুরি পেতে সহায়তা করতে এক হাতে ব্যাটিং করেন টেরি।

মোকাবেলা করেন ৩৩ টি বল। তার এই ত্যাগের বিনিময়ে ল্যাম্ব ঠিকই তুলে নেন সেঞ্চুরি। ল্যাম্বের সেঞ্চুরি কেউ মনে না রাখলেও পল টেরির লড়াইয়ের কথা এখন পর্যন্ত কেউ ভুলেনি।