এশিয়া কাপ

নায়ক

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 04:41 রবিবার, 16 সেপ্টেম্বর, 2018

||ডেস্ক রিপোর্ট||

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উপস্থিত ২২ হাজার দর্শক মুশফিকুর রহিমের অবিশ্বাস্য শৈল্পিক ব্যাটিং দেখতে পেয়েছেন এশিয়া কাপের মঞ্চে। বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে অন্যতম সেরা ইনিংস বললে ভুল হবে না।

মনঃসংযোগের সর্বোচ্চ পরীক্ষা দেয়ার মধ্য দিয়ে মরুর বুকে নিয়ে এসেছেন এক অবিশ্বাস্য ইনিংসের কাব্যগাঁথা। ১৪৪ রানের এক ইনিংসের মধ্য দিয়ে দলকে দুই দুইবার ব্যাটিং ধ্বস থেকে রক্ষা করে ২৬১ রানের মূলধন এনে দিয়েছেন তিনি। 

একবার চিন্তা করুন না, চ্যাম্পিয়ন ,লঙ্কান ফাস্ট বোলার লাসিথ মালিঙ্গা বল হাতে এক ওভারেই দুই দুইবার ছোবল দিলেন। ফেরালেন লিটন ও ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসানকে। ঠিক তারপরেই গর্ত আরও গভীর করলেন তামিম।
 
লাকমলকে পুল করতে গিয়ে হাতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়া বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে 'প্রোলিফিক' রান স্কোরার তামিম ইকবাল! কার্যত স্কোর বোর্ডে রান ১০ ছাড়ানোর আগেই তিন উইকেট হাওয়া! 

কে ভেবেছিল ব্যাটিং পাওয়ারপ্লেতেই মুশফিক ও মিথুনকে নতুন করে ভাঙ্গা গড়ার দায়িত্ব নিতে হবে? কিন্তু অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ম্যাচের অবস্থা ভাল পড়তে পারেন এবং সেই অনুযায়ী ম্যাচের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।

মুশফিক-মিথুনের গড়া পঞ্চম উইকেটে একশ ছাড়ানো জুটিটি ছিল মুশফিকের নির্দেশনায় গড়া ছোট্ট তাবু, যেখানে আশ্রয় নিয়েই বিশাল পাহাড় পাড়ি দেয়ার কথা ছিল মুশফিকের।

জুটির শুরুতে মিথুনের প্রতিআক্রমণ ননস্ট্রাইকে থেকে দেখেই গেছেন মিডেল ওভার পর্যন্ত। অপেক্ষায় ছিলেন সঠিক সময়ের, কিন্তু সেই সঠিক সময় আসতে বিলম্ব হল।

একের পর এক উইকেট পতনে ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি মুশফিক। স্থায়ী হয়ে মিথুনের বিদায়, একই পথে রিয়াদ-মোসাদ্দেকের হাঁটা দেখেছেন নন স্ট্রাইকে অসহায় অবস্থায়। 

মরুর আদ্রতা ও উষ্ণতার সাথে চোয়াল শক্ত করে যুদ্ধ করে এক-দুই রানে প্রান্ত বদল করে স্কোর বাড়ানোর কাজটি করে যান তিনি। টপ অর্ডারে ধ্বসের পর মিডেল অর্ডারে ফের ধ্বস, এরপর প্রথমে মিরাজের সাথে ৩৩ রানের জুটি, মাশরাফির সাথে আরও ২০ রান...বলা চলে, বাংলাদেশের ইনিংস গাড়ি একবার চলছিল, একবার থামছিল।

মিরাজ, মাশরাফির ও রুবেলের বিদায় মুশফিকের গলায় চাকাবিহীন গাড়ী ঝুলিয়ে দেয়, যা তাঁকে টেনে নিতে হচ্ছিল প্রায় একাই। এমন অবস্থায় সঙ্গী হিসেবে আবির্ভাব ঘটে মুস্তাফিজ ও ইনজুরি আক্রান্ত তামিম ইকবালের।

শেষ দুই জুটির মধ্য দিয়ে নায়ক রূপে সেঞ্চুরি করার পর বাংলাদেশকে লড়াই এর হাতিয়ার এনে দেন তিনি। ততক্ষণে দুবাই স্টেডিয়াম ও সারা বিশ্বে থাকা ক্রিকেট প্রেমীদের মুখে একটাই নাম, মুশফিকুর রহিম, যার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১৪৪ রান, যা দলের স্কোরের প্রায় ৫৬ শতাংশ!

বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচ ১৩৭ রানে জিতেছে, বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ ইনিংস থেকে মুশফিকের ইনিংস বাদ দিলে পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই মাঠ ছাড়তে হত মাশরাফিদের। 

কাপ্তান মাশরাফির কাছে মুশফিকের এই ইনিংসটি বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ইনিংস। ম্যাচ শেষে বলেছেন, 'আমি মনে করি মুশফিক বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ইনিংস খেলেছে। 

'সে খুবই চাপের মুখে ব্যাট করতে নেমেছিল, দ্রুত দুইটি উইকেট পতনের পর সে ব্যাট করতে নেমেছিল। আর সেই সময়টায় তামিম ব্যাট করতে পারেনি। সে যেভাবে ইনিংসটা সে শেষ করেছে, সেটা দুর্দান্ত ছিল।'

অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলার সমান্তরালে রেকর্ড বই এর পাতায় নতুন কয়েকটি পাতা যোগ করেছেন মুশফিক। ওয়ানডে ক্রিকেটে কোন বাংলাদেশীর ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের তালিকায় দ্বিতীয়তে উঠে এসেছেন তিনি। 

নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসের মধ্য দিয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে কোনো বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের করা সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডেও চূড়ায় জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

এশিয়া কাপে উইকেট রক্ষকের দিক থেকে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ও সবমিলিয়ে ষষ্ঠ সেরা ইনিংসটি এখন মুশফিকের। নিঃসন্দেহে, লঙ্কানদের বিপক্ষে নায়ক ছিলেন এক মুশফিকই।