প্লেয়ার বাই চয়েজ কথন

প্লেয়ার বাই চয়েজের সমাধান কি?

ইনতেছার

ইনতেছার
প্রকাশের তারিখ: 17:52 রবিবার, 19 আগস্ট, 2018

আগে ব্যক্তিগত চুক্তিতেই ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে খেলত দেশের ক্রিকেটাররা। কিন্তু কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি রক্ষা না করতে পারায় এই নিয়মে ব্যাঘাত আসে। তখনই প্রশ্ন আসে 'প্লেয়ার বাই চয়েজ' ইস্যু নিয়ে।

২০১৩-১৪ মৌসুমের প্রিমিয়ার লীগে প্রথমবারের মত আনা হয় 'প্লেয়ার বাই চয়েজ' পদ্ধতি। যদিও মাঝে এক মৌসুমের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল এই নিয়ম। কিন্তু আবারও চালু করা হয়েছে তা।

যদিও এই পদ্ধতিতে লীগের আগে থেকেই অসন্তোষ ছিলেন দেশের বেশীরভাগ ক্রিকেটার। দেখা গেছে, লীগে আগেরবার যিনি ১৭ লাখ পেয়েছিলেন, এবার তিনি পাচ্ছেন ৭ লাখ। 

যদিও নিলামের টাকাটা ক্লাব থেকে ক্রিকেটাররা পাচ্ছেন কিনা এই ইস্যুতে নাক গলাতে পারতো না আয়োজকরা। মূলত এজন্যই আনা হয়েছে 'প্লেয়ার বাই চয়েজ' পদ্ধতি। 

প্লেয়ার বাই চয়েজের' সারমর্ম হচ্ছে নির্ধারিত মূল্যে লটারির মাধ্যমে খেলোয়াড় দলে নেওয়া। কয়েক ক্যাটাগরিতে ক্রিকেটারদের ভাগ করে দেওয়া হয়, আর সেখান থেকেই লটারির মাধ্যমে ক্রিকেটার দলে নিয়ে থাকে ক্লাবগুলো।

লিগের আয়োজক ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিটনের (সিসিডিএম) প্রয়োগ করা এই পদ্ধতিতে শেষবারের লীগে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন দেশের প্রায় ২০০ ক্রিকেটার।

ভেতরে ভেতরে তারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে, নিজের ইচ্ছামতো ক্লাবে খেলে গতবার টাকার অঙ্কে যা পেয়েছিলেন, সেখান থেকে এবার কমে গিয়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ! 

এবারের লীগের আগে ‘আইকন’ গ্রেডিংয়ে থাকা ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫ লাখ টাকা এবং ‘সি’ গ্রেডে থাকা ক্রিকেটারদের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বনিম্ন তিন লাখ টাকা।

তবে জাতীয় দলে আগে খেলেছেন এমন ক্রিকেটাররা রীতিমতো রাগে ফুঁসেছেন পারিশ্রমিক দেখে। কিন্তু বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়াতে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি কেউ। তখন 'প্লেয়ার বাই চয়েজ' ইস্যুতে সিসিডিএম’র সদস্য সচিব আলী হোসেনের বক্তব্য ছিল,

'অনেক ক্রিকেটার কিন্তু উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দলবদল করে সব টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করে। কিন্তু প্লেয়ার বাই চয়েজ করলে তারা শতভাগ টাকা নিশ্চিত পাবে। শুরুর আগে ৫০ শতাংশ টাকা, শুরুর পর ২৫ ও শেষে ২৫ শতাংশ টাকা দলগুলোকে দিতেই হবে। 

'আর একটা বিষয় আমাদের ক্লাবের কথাও ভাবতে হবে। কিছু বড় ক্লাব ছাড়া সবার তো এত টাকা খরচ করার ক্ষমতা নেই। আবার ক্রিকেটাররা যেন না ঠকে সেটিও আমরা খেয়াল রেখেছি।'

কিন্তু আদৌ কি খেয়াল রাখতে পেরেছে সিসিডিএম এবং বিসিবি কর্তারা? প্রশ্ন ওঠানোই যায় এই ইস্যুতে। গত রোজার ইদের আগে ক্রিকফ্রেঞ্জিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কলাবাগানের ক্রিকেটার মোক্তার আলী জানিয়েছিলেন, তখনও পারিশ্রমিক পাননি তিনি ও তার দলের ক্রিকেটাররা।

বেশিরভাগ ক্লাব তাদের চুক্তি অনুযায়ী ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করলেও কিছু ক্লাব তাদের চুক্তির বরখেলাপ করেছে। লীগের শুরুতে নিয়ম অনুযায়ী অর্ধেক টাকা দিয়ে দিলেও পরের অর্ধেক টাকা পরিশোধ করছে না তারা।

এক্ষেত্রে কলাবাগানের পরে আলোচনায় উঠে এসেছে ব্রাদার্স ইউনিয়নের নাম। এই রবিবার (১৯ই আগস্ট) ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে মিডিয়ার সামনে আসেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের অধিনায়ক অলোক কাপালি।

গণমাধ্যমকে টাকা না পাওয়ার (অবশিষ্ট ২৫ ভাগ) বিষয়টি জানান তিনি। এক্ষেত্রে ক্লাব গুলোর খামখেয়ালী মনোভাব নিয়েও কথা বলেছেন দেশের সুপরিচিত এই ক্রিকেটার। শেষমেশ জানা গেল, নয়-ছয় খেলা শেষে এই সেপ্টেম্বরেই পারিশ্রমিক পাচ্ছেন ক্রিকেটাররা।

যদিও এই অর্থ হাতে আসার আগে কোন নিশ্চয়তা নেই। তবে কি এই নিয়মে এখনো অসন্তোষ ক্রিকেটাররা? সামনের প্রিমিয়ার লীগে কি এই নিয়মেই খেলতে চায় ক্রিকেটাররা? অলোক কাপালি জানান,

'আমার একটা কথা থাকবে বোর্ডের প্রতি যে প্লেয়ার বাই চয়েজে আমাদের জন্য ভালো হচ্ছে কিনা সেটাও আরেকবার দেখা উচিত। কেননা আগে আমরা এমনিতেই চুক্তি করে খেলতাম। তখন এসব সমস্যা হত না। 

'আমরা ক্রিকেটাররা সবাই একসাথে বসব। আমাদের মনে হয় এখনই এই ব্যাপারে এক হওয়া উচিত। কেননা প্লেয়ার বাই চয়েজে আমাদের জন্য ভালো হচ্ছে কিনা সেটা দেখতে হবে।'

জানা গেল, আগে থেকেই এই নিয়মের বিরোধিতা করে আসছে বিসিবির কিছু সদস্য নিয়ে গড়া ক্রিকেটারদের স্বার্থ রক্ষার সংগঠন ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব)। সংগঠনটির জেনারেল সেক্রেটারি দেবব্রত পাল মিডিয়ার সামনে এই ইস্যুতে রবিবার জানান,

'এই সমস্যা গুলো নিয়ে প্লেয়ার্স এসোসিয়েশানের সঙ্গে অনেক দিন ধরে কথা হচ্ছে। সবকিছু ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা চলছে। মোটামুটি একটা ফরম্যাটে এগোচ্ছে। বর্তমান জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারকে নিয়ে কিভাবে সাজানো যায় এটা নিয়ে কথা চলছে। 

'বিশেষ করে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়ে পরিকল্পনা আগাচ্ছে। তো এটা নিয়েই মূল পরিকল্পনা। এই বিষয়ে আমাদের প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্টরা আরও ভাল বলতে পারবে।'

তবে বিষয়টির সমাধান খুঁজে পেয়েছেন তিনি। এজন্য ক্রিকেটারদের একত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। আদতে জাতীয় দলের যেসব ক্রিকেটার ডিপিএলে খেলেন এবং এর বাইরে অন্যান্য যারা ডিপিএলে খেলেন-- এই দুই ভাগের একত্ব নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

সাধারণ জাতীয় দলের বাইরে যেসব ক্রিকেটার এই আসরে খেলেন তাদের পুরো বছরই চলে ডিপিএলের টাকায়। অপরদিকে জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটাররা ব্যক্তিগত চুক্তিতে বড় অঙ্কে দল পেলেও আসর শেষে সেই পারিশ্রমিক পান না (কিছু ক্ষেত্রে) ক্লাবের পক্ষ থেকে।

চুক্তি থেকে কম অর্থ নিয়েই বনিবনা করতে হয় তাদের। এই নিয়মে লাভ হয় মূলত তাদেরই। এই প্রসঙ্গে কথা বলার সময় দেবব্রত পালের কণ্ঠে উঠে আসে কোয়াবের সতর্কদৃষ্টি।

শুরু থেকেই এই নিয়মের পক্ষেই ছিল না কোয়াব। তবে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পিড়াপীড়িতেই চুপ ছিলেন কোয়াব কর্মকর্তারা। কেননা প্লেয়ার্স বাই চয়েজ পদ্ধতিতে তুলনামূলক লাভবানই হন মুশফিক-মাহমুদুল্লাহরা। 

সাবেক এই ক্রিকেটার জানান, 'দেখেন আমরা কিন্তু শুরুতেই প্লেয়ার বাই চয়েজের পক্ষে ছিলাম না। এই ক্রিকেটাররা মিলেই কিন্তু বলেছিল এর বিপক্ষে। কিন্তু বিসিবির সামনে কয়েকজন ক্রিকেটার মিলেই ঠিক করেছিল এই নিয়ম।

সবশেষে বিষয়টি সমাধানের উপায় বলেছেন তিনি; 'ক্রিকেটাররা যদি সংঘবদ্ধ হয় তাহলে কিন্তু বিষয়টা সহজ হয়ে যায়। তারাও আমাদের খুব কাছের, এদের সঙ্গে বোঝাপড়াও ভালো। এখন বিষয়টি নিয়ে যদি তারা সহযোগিতা করে তাহলে সমাধান আসবে।'