ক্রিকেট লিজেন্ডস

লঙ্কান ক্রিকেটের আনসাং হিরো

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশের তারিখ: 14:50 শুক্রবার, 17 আগস্ট, 2018

|| ফ্রাইডে স্পেশাল ||

ফাস্ট বোলারসুলভ দৈহিক গঠন, উচ্চতা, ভয়ংকর গতি কিংবা আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা কোনটাই ছিল না তাঁর। তবে নিজের দিনে তিনি ছিলেন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের যম; ইনিংসের প্রথম ওভারে টপাটপ উইকেট তুলে নেওয়াটাকে রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন যিনি! নতুন বলে বিষাক্ত সুইং আর নিখুঁত লাইন লেন্থ দিয়ে প্রতিনিয়ত যিনি ভুগিয়েছেন সময়ের সেরাদেরকেও। বলছি শ্রীলঙ্কার ইতিহাসের অবিসংবাদিত সেরা ফাস্ট বোলার চামিন্দা ভাসের কথা। ফাস্ট বোলিং লিজেন্ড ওয়াসিম আকরামের পর তাঁকে এশিয়ার দ্বিতীয় সেরা বাঁহাতি বোলারের স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন অনেকেই। 

বাঁহাতি মিডিয়াম পেসার ভাস ছিলেন একজন আদর্শ 'নিউ বল বোলার'। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ উইকেটই পেয়েছেন নতুন বলে। তাঁর সিগনেচার ডেলিভারি ছিল ডানহাতি ব্যাটসম্যানের ভেতরে ঢোকা 'লেট ইনডিপার'। তবে ট্রেডিশনাল সুইং বোলার হলেও ভাসের প্রধান শক্তির জায়গা ছিল অ্যাকুরেসি, কন্ট্রোল আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ব্যাটসম্যানকে ফাঁদে ফেলবার ক্ষমতা। 

উইজডেনের ভাষায়, “He became synonymous with the in-dipper to a right-hander, a delivery that swung in ever so late to fox the batsman after luring him into believing that it would harmlessly go through.”

কনসিস্টেন্ট লাইন এন্ড লেন্থে একটানা বল করে যেতে পারতেন ভাস। ফ্লাট পিচ থেকেও আদায় করে নিতেন সিম মুভমেন্ট। ব্যাটসম্যানকে বোকা বানাতে তাঁর কার্যকরী অস্ত্র ছিল অফ কাটার। পারদর্শী ছিলেন স্লোয়ার এবং ইয়র্কারেও। তাছাড়া ক্যারিয়ারের শেষভাগে এসে শিখেছেন রিভার্স সুইংটাও। যার কারণে সাবকন্টিনেন্টের স্পিন সহায়ক স্লো লো উইকেটে তিনি ছিলেন দারুণ ইফেক্টিভ। 

চলুন একনজরে দেখে আসি ভাসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার হাইলাইটস।

★ ১৯৯০ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তাঁর ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে হাতেখড়ি।

★ একদিনের ক্রিকেটে ভাসের অভিষেক ১৯৯৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ভারতের বিপক্ষে। অভিষেক ম্যাচে ৮ ওভার বল করে ৪০ রান দিয়ে পেয়েছিলেন ওপেনার নভজোৎ সিং সিধুর উইকেট।

★ ১৯৯৪ সালের ২৬ আগস্ট, ক্যান্ডিতে তাঁর অভিষেক টেস্টে প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। সে ম্যাচে ৮০ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন তিনি।

★ ১৯৯৫ সালে নেপিয়ার টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল শ্রীলংকা। সে যুগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোটা শ্রীলংকার কাছে তো বটেই; বিশ্বের যে কোন দলের জন্যই ছিল অত্যন্ত কঠিন একটা কাজ। 

উল্লেখ্য, সাবকন্টিনেন্টের বাইরে সেবারই প্রথম টেস্ট জয়ের মুখ দেখেছিল লংকানরা। আর ঐতিহাসিক এই অর্জনে ব্যাটে-বলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন একুশ বছরের তরুণ 'অলরাউন্ডার' চামিন্দা ভাস। বল হাতে দুই ইনিংসেই তিনি শিকার করেছিলেন ৫টি করে উইকেট (৫/৪৩ ও ৫/৪৭) আর ব্যাটিংয়ে নেমে দু'ইনিংসেই করেছিলেন ত্রিশোর্ধ্ব রান (৩৩ ও ৩৬)। 

ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। আর দুই ম্যাচের সিরিজে মাত্র ১১.০৬ গড়ে ১৬ উইকেট নিয়ে জিতে নিয়েছিলেন সিরিজসেরার পুরস্কারটাও।

ঐতিহাসিক নেপিয়ার টেস্ট নিয়ে এক স্মৃতিচারণে ভাস বলেছিলেন, “ওই ম্যাচের কথা আমি কোনদিনও ভুলতে পারব না। দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট জয়ে দলের অংশ হতে পেরেই আমি গর্বিত। জীবনে প্রথমবারের মত ম্যাচে ১০ উইকেট পেলাম, এ অনুভূতি আসলে বলে বোঝানোর নয়।”

★ ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলংকা দলের অপরিহার্য সদস্য ছিলেন ভাস; খেলেছেন ফাইনালসহ সবক'টি ম্যাচেই। ১০ ম্যাচে ২২ গড়ে তাঁর শিকার ছিল ১৫ উইকেট। ইকোনমি মাত্র ৩.৬৭!

★ ২০০০ সালে শারজায় অনুষ্ঠিত কোকাকোলা ট্রফির এক ম্যাচে মাত্র ১৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে একাই ধসিয়ে দিয়েছিলেন ভাস। সনাৎ জয়াসুরিয়ার ১৬১ বলে ১৮৯ রানের 'টর্নেডো' ইনিংসের ওপর ভর করে লংকানরা করেছিল ২৯৯ রান। জবাব দিতে নেমে ভাসের বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে মাত্র ৫৪ রানেই অলআউট হয় ভারত। 

★ ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ মাত্র ১৯ রানের বিনিময়ে ৮ উইকেট নিয়ে গড়েছিলেন ওয়ানডে ইতিহাসের ব্যক্তিগত সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড (৮-৩-১৯-৮) যা আজও কেউ ভাঙতে পারে নি। ভাসের বোলিং তোপে জিম্বাবুয়ে সেদিন গুটিয়ে যায় মাত্র ৩৮ রানে যা ওয়ানডেতে দলীয় সর্বনিম্ন রানের তৎকালীন রেকর্ড।

★ ২০০১-০২ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মাত্র ১৫.৩৮ গড়ে ২৬ উইকেট নিয়েছিলেন ভাস। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে সিরিজের শেষ ম্যাচে তিনি গড়েছিলেন অনন্য এক রেকর্ড। দুই ইনিংস মিলিয়ে একাই নিয়েছিলেন ১৪ উইকেট (৭/১২০ ও ৭/৭১)।

এশিয়ার মাত্র ২ জন পেসারের আছে ম্যাচে ১৪ উইকেট শিকারের অবিস্মরণীয় এই কীর্তি। আরেকজন হলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তী অলরাউন্ডার ইমরান খান। 

★ ২০০৩ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার ছিলেন ভাস। মাত্র ১৪.৩৯ গড় আর ৩.৭৬ ইকোনমিতে ভাসের শিকার ছিল ২৩ উইকেট। 

★ ২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের এক ম্যাচে 'হ্যাটট্রিকসহ' এক ওভারে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট! ২৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। শুধু তাই নয়, ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ও 'একমাত্র' বোলার হিসেবে ইনিংসের প্রথম তিন বলেই হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছিলেন ভাস।

★ ২০০৩ সালে প্রথমবারের মত চুক্তিবদ্ধ হন ইংলিশ কাউন্টির দল হ্যাম্পশায়ারের সঙ্গে। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে উস্টারশায়ার এবং ২০০৭ সালে মিডলসেক্সের হয়েও কাউন্টি মাতিয়েছেন তিনি। 

★ ২০০৪ সালে একটা ওয়ানডেতে জয়ের জন্য শেষ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ৮ রান। ক্রিজে ছিলেন মাইকেল বেভান ও এন্ড্রু সাইমন্ডসের মত পরীক্ষিত দুজন ফিনিশার। সেই ওভারে ভাস রান দিয়েছিলেন মাত্র ৬! ১ রানের শ্বাসরূদ্ধকর এক জয় তুলে নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। 

★ ২০০৪ সালে আইসিসি নির্বাচিত বর্ষসেরা টেস্ট এবং ওয়ানডে দুটি একাদশেই ঠাঁই করে নেন ভাস।

★ ২০০৫ সালে চেন্নাই টেস্টে ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে টানা ১১ ওভার মেডেন নিয়েছিলেন ভাস! প্রথম ইনিংসে ভারত অলআউট হয়েছিল মাত্র ১৬৭ রানে। ভাসের বোলিং ফিগারটা ছিল দেখার মতো, ২১-১৪-২০-৪!

ভাসের দুর্দান্ত সেই স্পেল সম্পর্কে উইজডেন লিখেছিল, “Chaminda Vaas showed his class on a pitch that offered little to him. His accuracy was incredibly mind-numbing.”

★ ২০০৫ সালে দ্বিতীয়বারের মত আইসিসি মনোনীত বর্ষসেরা টেস্ট একাদশে জায়গা পান তিনি।

★ ২০০৬ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফলোঅনে পড়েও নিশ্চিত পরাজয়ের মুখ থেকে দলকে বাঁচিয়েছিলেন 'ব্যাটসম্যান' ভাস। নুয়ান কুলাসেকারাকে সাথে নিয়ে নবম উইকেট জুটিতে প্রায় ৫০ ওভারেরও বেশি সময় 'অবিচ্ছিন্ন' থেকে গড়েছিলেন ১১৫ রানের 'ম্যাচ সেভিং' জুটি! ১৩৩ বলে ৬৪ রান করে কুলাসেকারা আউট হলেও ভাস খেলেছিলেন ১৮৮ বলে ৫০ রানের হার না মানা এক ইনিংস। 

★ ২০০৭ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার ফাইনালে ওঠার পেছনে বড় অবদান ছিল ভাসের। ২২.০ গড়ে নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট, ইকোনমি রেট মাত্র ৩.৬৮!

★ ২০০৭ সালের জুনে কলম্বো টেস্টে 'প্রিয় প্রতিপক্ষ' বাংলাদেশের বিপক্ষে হাঁকিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্ট সেঞ্চুরি।

★ ২০০৭ সালের অক্টোবরে ডাম্বুলায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ইতিহাসের 'কনিষ্ঠতম' বোলার হিসেবে স্পর্শ করেন ৩০০ উইকেটের মাইলফলক। ভাসের ৩০০তম শিকার হয়েছিলেন ইংলিশ ওপেনার অ্যালিস্টার কুক।

★ ২০০৮ সালের মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে শ্রীলংকার ইতিহাসের 'প্রথম' টেস্ট জয়টা এসেছিল ভাসের হাত ধরেই। বল হাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট (৩/৪৮ ও ৫/৬১) নেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে একটি ফিফটিসহ করেছিলেন ৬৭ রান।

★ ২০০৮ সালে টেস্ট ইতিহাসের ৮ম ক্রিকেটার হিসেবে ৩০০ উইকেট ও ৩০০০ রানের 'অলরাউন্ডার'স ট্রিপল' অর্জন করেন চামিন্দা ভাস। 'বিরল' এই ক্লাবের বাকি সদস্যরা হলেন ইমরান খান, কপিল দেব, স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, ইয়ান বোথাম, শন পোলক, ড্যানিয়েল ভেটোরি ও শেন ওয়ার্ন।

★ ২০০৮ সালে কলম্বোর প্রেমাদাসায় ওয়ানডে ক্যারিয়ারের 'বিদায়ী' ম্যাচটি খেলেন ভারতের বিপক্ষে। সেই ম্যাচেই একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র 'চতুর্থ' বোলার (মুত্তিয়া মুরালিধরন, ওয়াসিম আকরাম এবং ওয়াকার ইউনুসের পর) হিসেবে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন ভাস। যুবরাজ সিংকে বোল্ড করে নিজের ৪০০তম শিকারে পরিণত করেছিলেন তিনি।

★ ভাসের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটি ছিল ২০০৯ সালের জুলাইতে পাকিস্তানের বিপক্ষে। কলম্বোয় অনুষ্ঠিত ম্যাচটি শেষ হয়েছিল অমীমাংসিতভাবে। ভাস নিয়েছিলেন ৪৩ রানে ১ উইকেট। 

★ ২০১১ বিশ্বকাপের মূল স্কোয়াডে জায়গা না পেলেও 'স্ট্যান্ডবাই' তালিকায় রাখা হয়েছিল তাঁকে।

★ খেলোয়াড়ি জীবন শেষে ভাস বেছে নিয়েছেন পেশাদার কোচিং ক্যারিয়ার। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ড; ২০১৩,২০১৫ ও ২০১৭ সালে 'তিন' দফায় শ্রীলংকা, ২০১৬ সালের শুরুতে আয়ারল্যান্ড এবং পরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বোলিং উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন ভাস।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভাসের বলে সবচেয়ে বেশিবার আউট হওয়া ব্যাটসম্যানদের তালিকাটা একটু দেখে নেয়া যাক।

★ সবচেয়ে বেশি ১৪ বার করে আউট হয়েছেন 
সাঈদ আনোয়ার ও স্টিভেন ফ্লেমিং।

★ ১২ বার করে শচীন টেন্ডুলকার, রিকি পন্টিং, ইনজামাম-উল-হক ও হার্শেল গিবস।

★ ১১ বার করে সৌরভ গাঙ্গুলী ও মার্কাস ট্রেসকোথিক।

★ ১০ বার করে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও ক্রিস গেইল। 

মজার ব্যাপার হল, ক্রিস গেইল আর হার্শেল গিবস এই দুজনকে তিনি সর্বমোট ৭ বার করে ফিরিয়েছেন শূন্য রানে!

চলুন এক নজরে দেখে নিই ভাসের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান।

১১১ টেস্টে ভাসের শিকার ২৯.৫৮ গড়ে ৩৫৫ উইকেট। ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন ১২ বার, ম্যাচ ১০ উইকেট ২ বার। সেরা বোলিং ৭১ রানে ৭ উইকেট। 

ওয়ানডেতে ৩২২ ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ৪০০ উইকেট। ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছেন ১৩ বার, ৫ উইকেট ৪ বার। সেরা বোলিং ১৯ রানে ৮ উইকেট। বোলিং গড় ২৭.৫৪, ইকোনমি রেট ৪.১৯।

এছাড়া ৬টি আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলে তাঁর শিকার ৬ উইকেট। সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে ইকোনমি রেট মাত্র ৫.৮২!

শুধু বল হাতেই নয়, লোয়ার অর্ডারে কার্যকরী ব্যাটসম্যান এবং 'পিঞ্চ হিটার' হিসেবেও ভাসের বেশ নামডাক ছিল। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ মিলিয়ে ব্যাট হাতে পাঁচ হাজারেরও বেশি রান সেই সাক্ষ্যই দেয়। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১টি সেঞ্চুরির সাথে ১৩টি ফিফটিও আছে তাঁর। ব্যাটিং গড় ২৪.৩২। 

ঐতিহ্যগতভাবে শ্রীলংকা বরাবরই স্পিননির্ভর দল। যেখানে বল হাতে আক্রমণের নেতৃত্বটা দিয়ে থাকেন স্পিনাররাই। পেসারদের ভূমিকাটা এখানে গৌণ। চামিন্দা ভাসও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নন। বল হাতে দলের সবচাইতে ধারাবাহিক এই পারফরমারটি ক্যারিয়ারজুড়ে 'স্পিন জাদুকর' মুরালিধরনের ছায়াসঙ্গী হয়েই থেকেছেন সবসময়। 

বল হাতে মুরালির সাথে ভাসের রসায়নটা জমত দারুণ। টেস্ট ক্রিকেটের সফলতম বোলিং জুটিগুলোর একটা হচ্ছে এই 'মুরালি-ভাস' জুটি। দুজনে জুটি বেঁধে ৯৫ টেস্টে শিকার করেছেন ৮৯৫ উইকেট!

১৯৯৪ থেকে ২০১১ - প্রায় দেড়যুগের লম্বা ক্যারিয়ারটা তিনি কাটিয়েছেন অসম্ভব নিষ্ঠা, একাগ্রতা, পরিশ্রম ও আত্মনিবেদনকে সঙ্গী করে। ফাস্ট বোলিংয়ের 'অলটাইম গ্রেট'দের শর্টলিস্টে হয়ত তিনি থাকবেন না। কিন্তু তারপরেও শ্রীলংকার মত একটি দেশ থেকে একজন পেসারের এভাবে উঠে আসা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাওয়া সাফল্য, গাদা গাদা উইকেট, হ্যাটট্রিক এগুলোকে তো অস্বীকার করবার কোন উপায় নেই।

ভাসকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল এত লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর সাফল্যের রহস্য কী? জবাবে ভাস বলেছিলেন ধৈর্য ও অধ্যাবসায়ের কথা।

বাকিটা ভাসের মুখ থেকেই শুনুন, “At times you get frustrated and disappointed when wickets are not coming. But I think with experience you can get over such situations. As test cricketers you must have a lot of patience and wait for the right moment. You must keep trying and always put the ball in the right place, and then you are bound to get rewarded.”

ক্রিকেটের সব সংস্করণ মিলিয়ে সাড়ে ৭'শর বেশি উইকেট আর ৫ হাজারের বেশি রানের মালিক, কিংবদন্তী এই পেসারের নামটা কিন্তু বিশাল লম্বা! ওয়ার্নাকুলাসুরিয়া পাতাবেন্দিগে উশান্থা জোসেফ চামিন্দা ভাস!