ক্রিকেট লিজেন্ডস

ভিক্টর ট্রাম্পারঃ ব্যাটিংয়ের মোজার্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশের তারিখ: 15:20 শুক্রবার, 10 আগস্ট, 2018

ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে ১৮৯০ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত সময়টাকে বলা হয় “Golden Age of cricket” বা ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ। ক্রিকেট ইতিহাসের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই অধ্যায় জন্ম দিয়েছে বেশ ক'জন গ্রেট ক্রিকেটারের। তাঁদেরই একজন হলেন ভিক্টর ট্রাম্পার। যাঁকে মনে করা হয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান। 

উইজডেনের সাবেক সহ-সম্পাদক গিডিওন হেইয়ের চোখে ভিক্টর ট্রাম্পার আর 'ক্রিকেটের স্বর্ণযুগ' যেন একটি আরেকটির সমার্থক। তিনি বলেছেন, "If it is possible for a cricketer to be their period, rather than merely part of it, then Trumper is the "Golden Age" of cricket.”

টেকনিকে দুরন্ত, স্টাইলে অনন্য, প্রচণ্ড মেধাবী এ ব্যাটসম্যানকে তাঁর সমসাময়িক প্রায় সবাই একবাক্যে 'সেরা' বলে মেনে নিয়েছেন। এমনকি পরবর্তীকালে অনেকেই তাঁকে স্যার ডন ব্রাডম্যানের চেয়েও প্রতিভাবান ও স্কিলফুল ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাঁদের অনেকের চোখে ব্র‍্যাডম্যান নন, ভিক্টর ট্রাম্পারই সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান!

ট্রাম্পারের সমসাময়িক বিখ্যাত ক্রিকেটার মন্টি নোবেল যেমন সরাসরি বলেই দিয়েছেন, ভিক্টর ট্রাম্পারই ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান। ওঁর সাথে অন্য কারও তুলনা চলে না। 

যে টেস্টে ট্রাম্পারের অভিষেক হয়, সেই একই টেস্টে ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয় কিংবদন্তী অলরাউন্ডার উইলফ্রেড রোডসেরও। সেই রোডসকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তাঁর দেখা সেরা ব্যাটসম্যান কে? উত্তরটা ছিল, “There was only one, Victor Trumper.”

ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং বিখ্যাত ক্রিকেটার সি. বি. ফ্রাই ট্রাম্পারের বড় ভক্ত ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘ব্র‍্যাডম্যান যত রানই করুন না কেন, সবার ওপরে থাকবে ট্রাম্পারের নামটা।'

“When he came, he opened the windows of the mind to a new vision of what batting could be. He lifted it to heights never before known, gave us thrills we had never experienced.”

ভিক্টর ট্রাম্পার সম্পর্কে অসাধারণ এই মন্তব্যটি করেছিলেন প্রখ্যাত ইংরেজ ধারাভাষ্যকার এবং ক্রীড়ালেখক জনি ময়েস।

ভিক্টর ট্রাম্পারের ব্যাটিংয়ে প্রধান অনুষঙ্গ ছিল স্টাইল, উৎকর্ষ এবং নান্দনিকতা। দ্রুত রান তুলতে ভালবাসতেন কিন্তু স্ট্রোক মেকিংয়ের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন পুরোপুরি টাইমিং নির্ভর। অর্থাৎ তিনি মোটেও কোন হার্ডহিটার ছিলেন না। তাঁর ব্যাটিংয়ে এক ধরনের অদ্ভুত সাবলীলতা কাজ করত ক্রিকেটের ভাষায় যাকে বলা হয় 'এফোর্টলেস বিউটি'! সিবি ফ্রাইয়ের ভাষায়, "He had no fixed canonical method of play, yet every stroke he played satisfied the ultimate criterion of style – the minimum of effort, the maximum of effect."

ট্রাম্পারের ব্যাটিং সৌন্দর্যে বিমোহিত ছিলেন সিবি ফ্রাইয়ের স্ত্রীও। মিসেস ফ্রাইয়ের ভাষায়, “Trumper can play, with his bat, a cricket ball as Paganini played his violin."

ইংলিশ কিংবদন্তি জ্যাক হবসের মতে, ভিক্টর ট্রাম্পারই তাঁর দেখা সবচেয়ে নিখুঁত ব্যাটসম্যান যার ব্যাটিং স্টাইল ছিল সম্পূর্ণ ইউনিক। প্রচলিত সব শটের পাশাপাশি বিচিত্র সব উদ্ভাবনী শটও ছিল তাঁর হাতে। এমন সব স্ট্রোক খেলতেন যেগুলো তিনি ছাড়া অন্য কেউ খেলার কথা ভাবতেও পারত না। যেমন- ইয়র্কার লেন্থের বলে দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে লেগ গ্লান্সের মত একটা শট খেলতেন ট্রাম্পার। যে শটটা তিনি ছাড়া কেউ খেলতে পারত না। অনেকেই চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সফলতার মুখ দেখেন নি।

ট্রাম্পারের অনবদ্য ব্যাটিং শৈলীর বিবরণ দিতে গিয়ে উইজডেন লিখেছে, “He was correct and catlike in his footwork and powerful in his wrists, picked up the line and length early, was comfortable playing good-length balls on the up, and had several strokes for every delivery. His lofted drives, pulls and cuts were perfection, but he was particularly known for his leg-side glances and glides. He could play a fast ball from off stump with a straight bat behind square leg by closing the face at exactly the right moment.”

ট্রাম্পার সম্পর্কে সবচেয়ে মজার উক্তিটি করেছেন আর্চি ম্যাকলারেন। ইংল্যান্ডের সাবেক এই অধিনায়ক ট্রাম্পারের সাথে নিজের তুলনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “Compared to Victor I was a cab-horse to a Derby winner.”     

ভিক্টর ট্রাম্পারের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যানে একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক। 

★ টেস্ট:

ম্যাচ- ৪৮ 
রান- ৩১৬৪
গড়- ৩৯.০৪
সর্বোচ্চ- ২১৪*
সেঞ্চুরি- ৮টি
হাফ সেঞ্চুরি- ১৩টি
উইকেট- ৮টি

★ ফার্স্ট ক্লাস:

ম্যাচ- ৪৮ 
রান- ১৬,৯৩৯
গড়- ৪৪.৫৭
সর্বোচ্চ- ৩০০*
সেঞ্চুরি- ৪২টি
হাফ সেঞ্চুরি- ৮৭টি
উইকেট- ৬২টি

১৮৯৯ থেকে ১৯১২ সাল অর্থাৎ যে সময়টাতে ট্রাম্পার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন, সে সময়ে ট্রাম্পারই ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, সবচেয়ে বেশি (৮) সেঞ্চুরির মালিক। তাঁর চেয়ে বেশি গড়ে রান করেছেন কেবল দুইজন; ক্লেম হিল (৩৯.২) আর অব্রে ফকনার (৪০.৭৯)। 

আধুনিক যুগের ব্যাটসম্যানদের সাথে তুলনা করলে ট্রাম্পারের ক্যারিয়ার স্ট্যাটস বলা যায় একেবারেই সাদামাটা। টেস্টে তাঁর চাইতে বেশি গড়ে রান করেছেন অন্তত ৫০ জন ব্যাটসম্যান! তাহলে মাত্র ৩৯ গড়ের একজন ব্যাটসম্যানকে কী করে মানুষ সর্বকালের সেরার আসনে বসায়? 

আসলে পরিসংখ্যান দেখে আপনি বিভ্রান্ত হতেই পারেন, তবে ক্রিকেট ইতিহাস নিয়ে যাদের সামান্য হলেও পড়াশোনা আছে, তাদের মনে অন্তত ভিক্টর ট্রাম্পারের গ্রেটনেস নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকার কথা নয়। কেবল ব্যাটিং গড় দিয়ে কারও গ্রেটনেস বিচার করতে যাওয়াটা তাই মুর্খতার শামিল।

সাবেক ক্রিকেটার অ্যাশলি ম্যালেটের মতে, “To assess Trumper's batsmanship statistically is as pointless as judging Mozart by counting the notes.”

১৮৭৭ সালের ২রা নভেম্বর, নিউ সাউথ ওয়েলসের ছোট্ট মফঃস্বল শহর ডার্লিংহার্স্টে জন্মেছিলেন ভিক্টর ট্রাম্পার। ছোটবেলায় স্কুল ক্রিকেট খেলতে গিয়ে তিনি নজরে পড়ে যান অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ওপেনার ও ইতিহাসের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান চার্লস ব্যানারম্যানের। প্রথম দেখাতেই 'ছোট্ট' ট্রাম্পারের ব্যাটিংয়ের প্রেমে পড়ে যান তিনি। 

আগ্রাসী স্ট্রোক খেলার প্রতি ট্রাম্পারের প্রবল ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুতগতিতে রান তুলতে পারতেন বলে দর্শকদের কাছেও ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। স্কুলের মাঠে ট্রাম্পার ব্যাটিংয়ে নামলেই মিস্টার ব্যানারম্যান নাকি চেঁচিয়ে উঠতেন, “ভিক, ছেড়ে দাও ওটা। অত বাইরের বলে ব্যাট চালাতে হবে কেন!” কিন্তু কে শোনে কার কথা! ব্যাটিংয়ের সময় ট্রাম্পারের নাকি কোনদিকে খেয়াল থাকত না। তারপর যেটা ঘটত সেটা মিঃ ব্যানারম্যানের মুখ থেকেই শুনুন, “And the blade would keep venturing out of safety zone, unerringly connecting with the far away ball, sending it screaming to the fence.”

ট্রাম্পারের টেস্ট অভিষেক ২২ বছর বয়সে, ১৮৯৯ সালের ইংল্যান্ড সফরে। তবে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে ট্রাম্পারের ডাক পাওয়াটা ছিল একরকম অপ্রত্যাশিতই। এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল তাসমানিয়ার বিপক্ষে খেলা ২৯২ রানের একটি ইনিংস। উল্লেখ্য, ট্রাম্পারের '২৯২' ছিল ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটের ইতিহাসে শততম ডাবল হান্ড্রেড! কাকতালীয় না ব্যাপারটা?

ট্রাম্পারের অভিষেক লগ্নটা অবশ্য মনে রাখার মত কিছু ছিল না। বৃষ্টিভেজা ইংলিশ কন্ডিশনে দলের বাকি সবার মত তিনিও ছিলেন ব্যর্থ, দুই ইনিংসে করেছিলেন ০ ও ১১ রান! তবে নিজের জাতটা চেনালেন দ্বিতীয় টেস্টে। ইংরেজ ফাস্ট বোলারদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে লর্ডসের মাঠে খেললেন অপরাজিত ১৩৫ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস। যে ইনিংসের বর্ণনা দিতে গিয়ে উইজডেন লিখেছিল, “A dazzling knock, full of glorious drives, cuts and pulls.”

ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ হ্যারি আলথাম ট্রাম্পারের এই ইনিংসকে দেখেছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটে এক নতুন তারকার আবির্ভাব হিসেবে। তাঁর বইতে তিনি লিখেছেন, “It was obvious a new star of unsurpassed brilliance had joined the cluster of the southern cross.”

উল্লেখ্য, ট্রাম্পারের অভিষেক টেস্টটা ছিল বিখ্যাত সেই দাঁড়িওয়ালা ভদ্রলোক, ডব্লিউ জি গ্রেসের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট। ট্রাম্পারের ১৩৫ রানের ইনিংসটা তিনি উপভোগ করেছিলেন গ্যালারিতে বসে। 

এর দিন কয়েক পরের ঘটনা। হঠাৎ একদিন বলা নেই কওয়া নেই, অস্ট্রেলিয়ান ড্রেসিংরুমে এসে হাজির স্বয়ং ডব্লিউ জি গ্রেস! বিশাল দাঁড়ির ফাঁক দিয়ে হুংকার ছেড়ে রীতিমতো আবদার জানিয়ে বসলেন যে, ভিক্টর ট্রাম্পার যে ব্যাট দিয়ে সেঞ্চুরি করেছে, সেটা তাঁকে দিতে হবে। শুধু যে দিতেই হবে তা নয়, অটোগ্রাফ সহকারে দিতে হবে।

কথিত আছে, ডব্লিউ জি গ্রেস নাকি মানুষ হিসেবে ছিলেন বেশ অহংকারী, আত্মকেন্দ্রিক ও রাশভারী প্রকৃতির। নিজের ব্যতীত অন্য কারও প্রশংসার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন বরাবরের কৃপণ। কিন্তু সেই গ্রেস সাহেবের মত লোকই যখন যেচে এসে কারও কাছ থেকে অটোগ্রাফসহ ব্যাট চেয়ে নিচ্ছেন, ব্যাপারটা কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে না!

ট্রাম্পার সেদিন গ্রেসকে দিয়েছিলেন নিজের ব্যাটটা। তবে গ্রেসের কাছ থেকেও তাঁর ব্যবহৃত একটা ব্যাট চেয়ে নিয়েছিলেন। যে ব্যাটের গায়ে গ্রেস নিজ হস্তাক্ষরে লিখে দিয়েছিলেন, ‘ফ্রম টুডে’স চ্যাম্পিয়ন টু দ্য চ্যাম্পিয়ন অফ টুমরো।’ ঐ ব্যাটটি বর্তমানে ক্যানবেরার অস্ট্রেলিয়ান মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।

পরের বছর অ্যাশেজে অবশ্য একদমই ভাল করতে পারেন নি ট্রাম্পার। ২১.৯০ গড়ে করেছিলেন মাত্র ২১৯ রান, সর্বোচ্চ ৬৫! তাঁর এই ব্যর্থতার পেছনে সুনির্দিষ্ট কারণও ছিল। তিনি সেসময় একটা কোম্পানিতে বার্ষিক ৯০ পাউন্ড চুক্তিতে শিক্ষানবিশ কেরানীর চাকুরি নিয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে গভীর রাত অব্দি কাজ করতে হত। এক বছর কাজ করার পর অবশ্য চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি।

ভিক্টর ট্রাম্পার তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন ১৯০২ সালে। ঘরোয়া ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দেবার পর তিনি যান ইংল্যান্ড সফরে। ইংল্যান্ডে তখন বৃষ্টির মৌসুম। প্রায় পুরো সিরিজটাই খেলা হয়েছিল ব্যাটসম্যানদের 'মাইনফিল্ড' নামে পরিচিত বৃষ্টিভেজা 'স্টিকি' উইকেটে। যে ভেজা পিচে অন্যরা টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করতো, সেখানে ভিক্টর ট্রাম্পার ছিলেন আশ্চর্যরকম স্বচ্ছন্দ। সবগুলো ট্যুর ম্যাচ মিলিয়ে ভিক্টর সেই সফরে রান করেছিলেন আড়াই হাজারেরও বেশি!

এ প্রসঙ্গে উইজডেন বলছে, “His mastership was shown on wet wickets, for when other batsmen were struggling merely to keep their wickets intact, he was still able to time the ball and execute strokes all round the wicket.”

সাবেক ইংরেজ ক্রিকেটার পেলহাম ওয়ার্নারের ভাষায়, “The state of the wicket made no difference to him. Runs always flowed from his bat.”

১৯০২ সালের ইংল্যান্ড ট্যুর সম্পর্কে ইঙ্গিত রয়েছে ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ হ্যারি আলথামের 'আ হিস্ট্রি অব ক্রিকেট' বইতেও। সেখানে লেখা আছে, "From start to finish of the season, on every sort of wicket, against every sort of bowling, Trumper entranced the eye, inspired his side, demoralized his enemies, and made run-getting appear the easiest thing in the world."

সিরিজের চতুর্থ টেস্টের ঘটনা। ওল্ড ট্র‍্যাফোর্ডে সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল সকাল থেকেই। বৃষ্টিভেজা, নরম, কর্দমাক্ত, আঠালো উইকেটে ব্যাটিং করা বিপজ্জনক জেনেও সেদিন কী মনে করে টসে জিতে ব্যাটিং নিলেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক জো ডার্লিং। যথারীতি ওপেন করতে নামলেন ভিক্টর ট্রাম্পার আর রেজিনাল্ড ডাফ। 

এদিকে ইংরেজ অধিনায়ক আর্চি ম্যাকলারেন তাঁর পাঁচ বোলারের (স্ট্যানলি জ্যাকসন, বিল লকউড, উইলফ্রেড রোডস, ফ্রেড টেট, লেন ব্রাউন্ড) প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে একটাই নির্দেশ দিলেন, "Keep Trumper quiet, and the match will be ours.”

না, ট্রাম্পারকে সেদিন শান্ত রাখতে পারেন নি ইংরেজ বোলাররা। ভেজা উইকেটেই বাহারি সব স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটিয়ে টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে গড়লেন লাঞ্চের আগেই সেঞ্চুরি হাঁকানোর কীর্তি! পরবর্তীকালে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন আর মাত্র ৫ জন ব্যাটসম্যান- চার্লি ম্যাককার্টনি, ডন ব্র্যাডম্যান, মাজিদ খান, ডেভিড ওয়ার্নার এবং শিখর ধাওয়ান।

লাঞ্চ থেকে ফেরার পরপরই অবশ্য আউট হয়ে যান ভিক্টর। মাত্র ১১৫ মিনিটে খেলা ১০৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংসটিতে বাউন্ডারি ছিল ১৪টা। বলের হিসাব পাওয়া না গেলেও স্ট্রাইক রেট যে একশ'র ওপরে ছিল সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়াই যায়।

উল্লেখ্য, হিউ ট্রাম্বল, জ্যাক সন্ডার্সদের নৈপুণ্যে শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটা জিতেছিল মাত্র ৩ রানে!

ভেজা উইকেটে ট্রাম্পারের সেই অবিশ্বাস্য কীর্তির প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ১২ বছরের এক কিশোর। সে কে ছিল জানেন? ক্রিকেট সাহিত্যের 'শেক্সপিয়ার' খ্যাত কিংবদন্তি লেখক নেভিল কার্ডাস! 

কার্ডাসের ভাষায়, "No one ever played so naturally. The timing was so exquisite that he never seemed to hit them hard."

১৯০২ সালের অ্যাশেজ জয়ী দলটাকে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সেরা দল মনে করেন দলটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, অফ স্পিন কিংবদন্তি হিউ ট্রাম্বল। আর ট্রাম্পার সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন, “Trumper stands alone as the best batsman of all time."

উল্লেখ্য, এরপর ১৯০৫ এবং ১৯০৯ সালে আরও দুইবার ইংল্যান্ড সফর করলেও নিজের সামর্থ্যের প্রতি মোটেই সুবিচার করতে পারেন নি ট্রাম্পার। তার পেছনে অবশ্য কারণ ছিল। বেশ কিছুদিন ধরেই কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।

১৯০৩ সালে উইজডেন মনোনীত বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন ভিক্টর ট্রাম্পার। ১৯০৩-০৪ সালের অ্যাশেজেও ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিক এই ব্যাটিং জিনিয়াস। ২ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিসহ ৭১.৭৫ গড়ে করেন ৫৭৪ রান। 'ঘরের মাঠ' সিডনিতে খেলেন অপরাজিত ১৮৫ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। ট্রাম্পারের সেঞ্চুরির সৌজন্যেই সেদিন ইনিংস পরাজয়ের লজ্জা এড়িয়েছিল স্বাগতিকরা।

সেই ১৮৫ রানের ইনিংস নিয়ে একটা মজার গল্প প্রচলিত আছে। সেই যুগে ক্রিকেট খেলে আয় রোজগার হত না খুব একটা। ক্রিকেটের পাশাপাশি অন্য কাজও করতে হতো প্রায় সব ক্রিকেটারকেই। যেমন ডব্লিউ জি গ্রেস পেশায় ছিলেন চিকিৎসক। ভিক্টর ট্রাম্পারও বাড়তি রোজগারের আশায় ক্রিকেট সরঞ্জামের একটা দোকান খুলে বসেন সিডনিতে। তাঁর ব্যবসায়িক পার্টনার ছিলেন সতীর্থ হ্যানসন কার্টার।

তাঁর তখন ব্যবসাতেই মনোযোগ বেশি, খেলার দিকে কম। এরকম একদিন দোকান খুলে বসে আছেন তিনি। হুট করেই মনে পড়ল তাঁর, আজ না টেস্ট ম্যাচ আছে! দোকান থেকে একটা ব্যাট নিয়ে ট্যাক্সি ভাড়া করে চলে গেলেন সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। অপরাজিত ১৮৫ রানের ইনিংস খেলে আবার ফিরে এলেন তিনি!

এরকম আরেকটা মজার ঘটনা বলি। সিডনি টেস্ট শেষ হবার পর একদিন দোকানে বসে আছেন তিনি। হঠাৎ তাঁর এক ভক্ত এসে হাজির। ট্রাম্পারের ব্যবহৃত একটা ব্যাট কেনার ইচ্ছে নাকি তাঁর বহুদিনের। 

ট্রাম্পার জিজ্ঞেস করলেন, “যে ব্যাট দিয়ে সিডনিতে ১৮৫ করলাম, ঐটা নেবেন?” 

ট্রাম্পারের কথা শুনে ভক্তের চক্ষু রীতিমতো চড়কগাছ!

‘কতো দাম পড়বে ওটার?’ আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করল ভক্ত। 

‘ব্যাটটার আসল দাম তো চার পাউন্ড পাঁচ শিলিং।” ভিক্টর ট্রাম্পার জবাব দিলেন। 

‘হ্যাঁ, তো এখন কতো নেবেন?’ শুষ্ক গলায় জিজ্ঞেস করল ভক্ত।

‘ব্যাটটা যেহেতু একবার ব্যবহার করা হয়েছে এবং আমি বেশ অনেকক্ষণই ব্যাট করেছি এটা দিয়ে, সেহেতু এটা সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস। তা কতো আর দেবেন? দিন, এক পাউন্ড দিলেই চলবে।’ লাজুক গলায় ট্রাম্পারের জবাব।

সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটা হয়েছিল মেলবোর্নের বৃষ্টি ভেজা স্টিকি উইকেটে। সর্বকালের অন্যতম সেরা দুই বাঁহাতি পেসার উইলফ্রেড রোডস এবং জর্জ হার্স্টের সৌজন্যে সেই উইকেট ব্যাটসম্যানদের কাছে পরিণত হয়েছিল মৃত্যুকূপে। রোডস-হার্স্ট জুটির বিধ্বংসী বোলিংয়ে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয় মাত্র ১২২ রানে! এর মধ্যে ভিক্টর ট্রাম্পার একাই করেন ৭৪ রান! ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন তিনি, আউট হয়েছিল ১০ম উইকেট হিসেবে। উল্লেখ্য, ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ১৩ রান!

এরপর ২৯৭ রানের অসম্ভব লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসেও মাত্র ১১১ রানে গুটিয়ে যায় অজিরা। উইলফ্রেড রোডস একাই নেন ৮ উইকেট! প্রথম ইনিংসের ৭টাসহ ম্যাচে তাঁর মোট শিকার ১৫ উইকেট! উল্লেখ্য, এবারেও দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান এসেছিল ভিক্টর ট্রাম্পারের (৩৫) ব্যাট থেকেই। ট্রাম্পার আউট হওয়ার পর গ্যালারিতে একটি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়; তাতে লেখা ছিল “Trumper Dismissed — Hope Abandoned.” 

নেভিল কার্ডাসের ভাষায়, "When Victor Trumper got out, the light seemed to die for a while from an Australian innings. The eagle is gone and now crows and daws."

পাঠক, আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন দলে ক্লেম হিল, সিড গ্রেগরি, জো ডার্লিংয়ের মত ব্যাটসম্যান থাকা সত্ত্বেও কেন সমর্থকদের সকল আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন ট্রাম্পার।

১৯০৭-০৮ সালে দেশের মাটিতে আরও একটি অ্যাশেজ জয়ে বড় অবদান রেখেছিল ভিক্টর ট্রাম্পারের ব্যাট। সিডনি বার্নস, জন ক্রফোর্ড, আর্থার ফিল্ডার, উইলফ্রেড রোডসের সমন্বয়ে গড়া ইংল্যান্ডের দুর্ধর্ষ বোলিং লাইনআপকে তিনি সামলেছিলেন শক্ত হাতে। ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিতে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৩৩৮ রান। কিন্তু শুধু পরিসংখ্যান দিয়ে ট্রাম্পারের কৃতিত্বকে ঠিক বোঝানো যাবে না।

সিডনিতে সিরিজের ৫ম ও শেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৬ রানের 'অতিমানবীয়' এক ইনিংস খেলেন ট্রাম্পার। যার কল্যাণে প্রথম ইনিংসে ১৪৪ রানে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ৪৯ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে অস্ট্রেলিয়া। 

উল্লেখ্য, প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট পাওয়া (ট্রাম্পারের উইকেটসহ) বোলার সিডনি বার্নস দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র ১টা! এবং সেটা ট্রাম্পার ছিলেন না। সিরিজ চলাকালীন বার্নসের বলে ইতিমধ্যেই ৪ বার আউট হওয়া (চার ইনিংসে তিনি করেছিলেন যথাক্রমে ৩, ৪, ০ ও ১০ রান) ট্রাম্পারের ভেতর হয়ত প্রতিশোধস্পৃহা জেগে উঠেছিল। তাই সেদিন শুরু থেকেই বার্নসকে পাল্টা আক্রমণ করে খেলছিলেন তিনি।

ইতিহাসের সবচাইতে স্কিলফুল এবং বৈচিত্র‍্যময় বোলার মনে করা হয় সিডনি বার্নসকে। তাঁকে নাকি কোন ব্যাটসম্যানই ঠিকমতো খেলতে পারত না। তো বার্নসকে একবার প্রশ্ন করা হল, আপনার বিপক্ষে সবচেয়ে ভাল ব্যাটসম্যান কে ছিলেন? জবাবে তিনি বলেছিলেন, ”সম্ভবত ভিক্টর ট্রাম্পার।” তাকে আবার প্রশ্ন করা হল যে আর কেউ আছে কিনা। বার্নসের তৎক্ষণাৎ জবাব “নোবডি এলস এভার ট্রাবলড মি"।

ট্রাম্পারের ক্যারিয়ারের শেষ দুটো সিরিজ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে, দুটোই হোম সিরিজ। ১৯১০-১১ সালে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ২ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিতে ট্রাম্পার করেন ৬৬১ রান, গড় ৯৪.৪১! এক সিরিজে এটাই ছিল ট্রাম্পারের সর্বোচ্চ রান এবং সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড়ের রেকর্ড। ক্যারিয়ারের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরিটাও পেয়েছিলেন এই সিরিজেই।

মজার একটা তথ্য দিই। দক্ষিণ আফ্রিকা দলে সেসময় চারজন ডানহাতি লেগ স্পিনার ছিলেন যারা কিনা খুব ভাল 'গুগলি' দিতে পারতেন। এরা সবাই ছিলেন একেকজন জাত উইকেটশিকারি; যাদের প্রত্যেকের ফার্স্ট ক্লাস বোলিং গড় ২০ এর নিচে! অব্রে ফকনার‚ বার্ট ভোগলার, রেজি শোয়ার্জ এবং গর্ডন হোয়াইট- এই চারজনকে একসঙ্গে বলা হত 'গুগলি কোয়ার্টেট'। এই গুগলি বোলারদের অসাধারণ নৈপুণ্যেই ইংল্যান্ডকে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়ে এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। 

অথচ সেবার ট্রাম্পারের সামনে এই গুগলি স্পেশালিষ্টরা পাত্তাই পেলেন না! ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া বিখ্যাত সেই গুগলি কোয়ার্টেটের বিপক্ষে আর কোন ব্যাটসম্যান বোধ হয় এতটা স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে খেলতে পারেন নি। 

উল্লেখ্য, সেবারই প্রথম ব্যাটসম্যানদের রানের পাশে বলের হিসাব রাখা হয়েছিল। ভিক্টর ট্রাম্পারের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ইনিংস ছিল এরকম- 

১৫৮ বলে ১৫৯, 
২২৭ বলে ২১৪, 
৮৫ বলে ৮৭,
২৩ বলে ৩১,
৯০ বলে ৭৪,

একবার চিন্তা করুন, সেই ১৯১০ সালে একজন ব্যাটসম্যান এমন বিধ্বংসী সব ইনিংস খেলেছেন, তাও টেস্ট ক্রিকেটে, বিশ্বমানের স্পিনারদের বিপক্ষে! এবার বুঝতে পেরেছেন তো, ভিক্টর ট্রাম্পারের গ্রেটনেসটা ঠিক কোথায়! 

ট্রাম্পারের সেই ৮৭ রানের ইনিংসটা নিয়ে একটা মজার গল্প প্রচলিত আছে। ভিক্টর ট্রাম্পার ছিলেন অত্যন্ত সুহৃদ, হাসিখুশি ও কোমল স্বভাবের মানুষ। মেলবোর্নে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে খেলার আগের দিন অস্ট্রেলিয়া দলের ড্রেসিং রুমে কেউ একজন এসে টোকা দিল। সে আসলে ভিক্টরকে খুঁজছিল। তো তিনি দরজার কাছে যেতেই দেখেন যে, মলিন চেহারার এক তরুণ হাতে একটা ব্যাট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল যে সে ট্রাম্পারের অনেক বড় ভক্ত। সম্প্রতি সে একটি ব্যাট বানানোর কারখানা চালু করেছে। সাথে করে আনা ব্যাটটা সেখানকারই তৈরি। তার খুব ইচ্ছা যে ট্রাম্পার পরবর্তী ম্যাচটা এই ব্যাট দিয়েই খেলুক!

উল্লেখ্য, ভিক্টর ট্রাম্পারের ব্যাগে সবসময়ই কয়েকটা ব্যাট থাকতো। তা সত্ত্বেও তরুণ ছেলেটার কাছ থেকে ব্যাটটা নিতে রাজী হয়ে গেলেন এক কথাতেই। কিন্তু সমস্যা হল, ব্যাটটা দেখতে ছিল বেশ কদাকার, ওজনেও অনেক ভারি। ট্রাম্পারের এক সতীর্থ সেটা দেখতে পেয়ে বলেছিল, “তুমি নিশ্চয়ই কাল এই ব্যাটটা নিয়ে খেলতে নামছো না?” উত্তরে ট্রাম্পার বলেছিলেন, “না, এটা দিয়েই খেলছি আমি। অল্পবয়সী একটা ছেলে ব্যবসা করতে নেমেছে। এই ব্যাট দিয়ে আমি কিছু রান করলে ওর ব্যবসার প্রসার হতে পারে।”

মজার ব্যাপার হল, সেই কিম্ভুতকিমাকার ভারী ব্যাট দিয়ে খেলেই মেলবোর্নে ৮৭ রান করেছিলেন ট্রাম্পার! পরে ব্যাটটা ফেরত দেয়ার সময় তরুণ ব্যাট ব্যবসায়ীর আনন্দ দেখে কে!

১৯১১-১২ সালের অ্যাশেজ চলাকালীন সময় ট্রাম্পার ছিলেন বেশ অসুস্থ। অসুস্থতা নিয়েই সিরিজের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি আর শেষ টেস্টে হাঁকান হাফ সেঞ্চুরি! 

ইংল্যান্ডের বাঁহাতি পেসার ফ্রাঙ্ক ফস্টার এবং ডানহাতি পেসার কাম স্পিনার সিডনি বার্নস সেসময় ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। এই দুই বোলারকে সামলাতে সেবার বেশ হিমশিম খেতে হয়েছিল অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের। ৪-১ ব্যবধানে সিরিজটাও জিতে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। 

১৯১৩-১৪ মৌসুমে ঘরোয়া লীগে ক্যান্টারবুরির বিপক্ষে ৯ নম্বরে নেমে ২৯৩ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেন ট্রাম্পার। আর্থার সিমন্সের সাথে ৮ম উইকেট জুটিতে গড়েন ৪৩৩ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপ।

উল্লেখ্য, ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছুতে ট্রাম্পার সময় নিয়েছিলেন মাত্র ১৩১ মিনিট! সময়ের হিসাবে যেটি ফার্স্ট ক্লাস ইতিহাসের তৃতীয় দ্রুততম ডাবল হান্ড্রেড। 

১৯১৪ সাল থেকেই তাঁর স্বাস্থ্যের আশঙ্কাজনক অবনতি হতে থাকে। অবশেষে ১৯১৫ সালের ২৮শে জুন, ব্রাইট'স ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ভিক্টর ট্রাম্পার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩৭ বছর। তাঁর এই অকাল মৃত্যু কেবল অস্ট্রেলিয়াতেই নয়, আলোড়ন তুলেছিল গোটা ক্রিকেট দুনিয়ায়; এমনকি চিরশত্রু ইংল্যান্ডেও। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকার মাঝেও সেখানকার পত্রিকাগুলোতে ভিক্টর ট্রাম্পারের মৃত্যুর খবর ছাপা হয়েছিল প্রথম পাতায়। এক পত্রিকার শিরোনাম ছিল এরকম, 'Death of a great Cricketer'.