টেস্ট ক্রিকেট ও সাকিব

টেস্ট ক্রিকেট, সাকিব ও কিছু বাস্তবতা

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 01:44 রবিবার, 22 জুলাই, 2018

টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান টেস্ট ক্রিকেটেই খেলতে চান না, এমন খবর ক্রিকেট অঙ্গনে আলোচনার ঝড় তুলতে বাধ্য। আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নাজমুল হাসান পাপন বিষয়টি নিশ্চিত করলে তো যে কারো চোখ কপালে উঠবে।

কিছুদিন আগে টেস্ট অধিনায়কত্ব পাওয়া সাকিবের টেস্টে অনীহা ইস্যুতে সম্প্রতি বোর্ড প্রেসিডেন্ট বলেছেন, 'আমাদের দেশে এখন দেখছি যে বেশ কিছু সিনিয়র ক্রিকেটার যারা আছে তারাও আসলে টেস্ট খেলতে চাচ্ছে না। যেমন সাকিব, টেস্টে সে খেলতে চায় না।'

সাকিব আল হাসানের সাথে দুই পেসার রুবেল হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমানের নামও জুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানও বিষয়টি সহজে মেনে নিতে চাইলেন না। 

তার বক্তব্য, 'সে তো টেস্ট খেলছে, আর টেস্টের অধিনায়কও সে। সে কিন্তু বলেনি যে সে খেলতে চায় না। বোর্ড প্রেসিডেন্ট যা বলেছে এই ব্যাপারে আমি পুরোপুরি জানি না।সাকিব আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজন ক্রিকেটার। 

'আমাদের ক্রিকেট যে অবস্থায় আছে আমি মনে করি যে তিনটি ফরম্যাটই কিন্তু আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এমনটা আসলে হওয়া উচিত না। আমার নিজের কাছে শুনেও ব্যাপারটি খারাপ লাগল।'

সাকিব আল হাসানের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে কোন মন্তব্য জানা না গেলেও নামটি সাকিব বলেই আলোচনা বেশি হচ্ছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে টানা ক্রিকেটের ধকল সামলে উঠতে টেস্ট ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের ছুটি নিয়েছিলেন সাকিব, ঠিক দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কঠিন সফরের পূর্বে। 

উদ্দেশ্য ছিল ক্লান্তি অবসাদ কাটিয়ে ফের পুনরুজ্জীবিত হয়ে ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাটে ফেরা। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে দেশের সেরা ক্রিকেটার সাকিবের টেস্ট থেকে ছুটি নেয়া বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে আবির্ভূত হয়। 

সাকিবের ছুটি চাওয়া থেকে শুরু করে টেস্ট ক্রিকেট সাকিবের অনীহা সবই কি একই সুতোয় গাঁথা? সাকিব আল হাসান অবশ্য ছয় মাস ছুটি পাওয়ার পর বলেছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিকল্পনার কথা। 

তার ভাষায়, 'আমার ইচ্ছে আছে, সবার পরে টেস্ট থেকে অবসর নেব। তার আগে টি-টুয়েন্টি ও ওয়ানডে থেকে অবসর নেব। সবার শেষে টেস্ট থেকে। কিন্তু আমার মনের কথা সবসময় সবাইকে বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না। আমার ভেতরে কি আছে, আমি জানি।'

কিন্তু বর্তমানে ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের ব্যাপক জনপ্রিয়তাও বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেস্ট ক্রিকেট ছেড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের মোটা অংকের টাকার পেছনে ছুটে যাওয়া ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহায়েত কম না। 

বাংলাদেশের মত র‍্যাঙ্কিংয়ের নিচু সারিতে থাকা দল গুলোর ক্রিকেটারদের জন্য কথাটা আরও সত্য। টেস্ট ক্রিকেটের ক্ষেত্রে দেশের সেরা ক্রিকেটারদের আগ্রহ ধরে রাখতে হলে বেতন বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে। আবার এই ক্ষেত্রেও খোদ সাকিব আল হাসান বেশ সবর ছিলেন।

এমসিসির সভায় সময়ের বাস্তবতা ও দেশকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করা নিয়ে জোর গলায় কথা বলেছেন তিনি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে সাকিবের মন্তব্যের রেশ টেনে কিংবদন্তী রিকি পন্টিং বলেছিলেন, 

'বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা কিছু প্রসঙ্গ ও ঘটনার কথা বলেছে সাকিব। পাশাপাশি সে এটিও বলেছে, টাকা কোথায় যাচ্ছে, সেটির নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে আইসিসিকে। কারণ সে জানে, অনেক অর্থই সঠিক জায়গায় যাচ্ছে কিন্তু ক্রিকেটারদের কাছে যেভাবে যাওয়া উচিত, সেভাবে যাচ্ছে না।'

মোটা দাগে প্রশ্ন তোলাই যায়, বিশ্বের চতুর্থ ধনী বোর্ড বিসিবি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক ইস্যুতে কতোটা সজাগ? অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বোর্ডের সাথে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটাররা ভালো পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে।

যার কারনে তারা ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের চেয়ে দেশের হয়ে খেলাকে বাড়তি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বার্ষিক আয়ের হিসেবে জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের ক্রিকেটারদের থেকেও পিছিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। 

বলা চলে, অন্য টেস্ট খেলুড়ে দেশের তুলনায় বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক বিব্রতকর রকমের কম। যা টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ মজবুত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায়।

ক্রিকেটারদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে সিনিয়র ক্রিকেটার থেকে শুরু করে তরুন ক্রিকেটারদের মন থেকেই ক্রমেই সরে যাবে সাদা পোশাকের অভিজাত ক্রিকেট, টেস্ট ক্রিকেট।