বিপিএল

আত্মবিশ্বাস ছিল রাসেল একটা বাউন্ডারিও মারতে পারবে না: সাইফউদ্দিন

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
Publish Date: 11:50 Saturday, March 2, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

জেমস ফুলারের করা ১৯তম ওভারে আন্দ্রে রাসেলের তিন ছক্কায় এলো ২১ রান। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স তখন হয়তো স্বপ্ন বুনছিলেন ১৬৫ কিংবা ১৭০ রানের পুঁজি। তবে সেটা একেবারে নসাৎ করে দিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। প্রথম তিন ওভারে ৩০ রান দেয়া সাইফউদ্দিনের হাতে বলে তুলে দিলেন তামিম ইকবাল। ফরচুন বরিশালের অধিনায়কের আস্থার প্রতিদানও দিলেন ডানহাতি এই পেসার।

লেগ সাইড দিয়ে ওয়াইডে ওভার শুরু করলেন সাইফউদ্দিন। পরের বলটা করলেন একদম পারফেক্ট ইয়র্কার, রাসেল যেন দিশা খুঁজে পেলেন না। যদিও বলটি নো বল হওয়ায় খুব বেশি আক্ষেপ করার সুযোগ নেই রাসেলের। তবে বিধ্বংসী এই ব্যাটারকে ফ্রি হিট কাজে লাগাতে দেননি সাইফউদ্দিন। পুরো ওভারে রাসেলকে নাচিয়ে ছেড়েছেন বাংলাদেশের এই পেসার।

কখনও পারফেক্ট ইয়র্কার, কখনও লেগ-মিডল স্টাম্পে ইয়র্কার আবার স্লো ফুলটসে রাসেলকে আটকে রাখেন তিনি। পুরো ওভারে সাইফউদ্দিন এক নো বলের সঙ্গে করলেন তিনটি ওয়াইড ডেলিভারি। ডানহাতি এই পেসারের ওভার থেকে এলো মাত্র ৭ রান। বিধ্বংসী হয়ে ওঠা রাসেল ফ্রি হিটসহ ৬ বল খেলে নিতে পারলেন কেবল এক রান। যদিও তিনবার রান নেয়ার সুযোগ থাকলেও জাকের আলী অনিককে স্ট্রাইক দেননি রাসেল।

শেষের ওভারে জাকের আলী খেলতে পেরেছিলেন মাত্র এক বল। সাইফউদ্দিনের সেই ওভারেই অনেকটা এগিয়ে যায় বরিশাল। শেষ ওভারের আগে সাইফউদ্দিনকে বাড়তি সাহস দিয়েছিলেন তামিম। ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের জানান, তামিম সেই সময় বুকে হাত দিয়ে বলেছিলেন ‘তুই পারবি’। এদিকে সাইফউদ্দিন জানান, তারা আত্মবিশ্বাস ছিল রাসেল তাকে বাউন্ডারি মারতে পারবেন না।

সাইফউদ্দিন বলেন, ‘যখন রাসেল আগের ওভারে তিনটা ছয় মেরেছিল তখন বুকে হাত দিয়ে বলেছেন তুই এটা পারবি। কারণ একই পরিস্থিতিতে কুমিল্লার হয়ে যখন খেলেছিলাম আমাকে একই প্রেরণা যুগিয়েছিল। যার কারণে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল রাসেল আমাকে একটা বাউন্ডারিও মারতে পারবে না। সত্যি বলতে একজন বড় ভাই না, অধিনায়ক না উনি (তামিম ইকবাল) আমার পরিবারের সদস্যের মতোই। উনি আমাকে আত্মবিশ্বাস না দিলে হয়ত এখানে....।’

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে প্রেস কনফারেন্সে যাওয়ায় সাইফউদ্দিনকে একটি ব্যাট উপহার দিয়েছিলেন তামিম। চ্যাম্পিয়ন হতে পারায় আরও দুটি ব্যাট দেবেন বলে কথা দিয়েছেন বরিশালের অধিনায়ক। দুটি ব্যাট উপহার পাওয়ায় বেশ খুশি সাইফউদ্দিন। বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার জানান, অন্যদের বাড়ি-গাড়ি-টাকা কিংবা জমির নেশা থাকলেও তার নেশা কেবলই ব্যাটে।

তিনি বলেন, ‘উনি (তামিম ইকবাল) আমাকে বলেছে দুইটা ব্যাট দেবে চ্যাম্পিয়ন হলে। এজন্য আরও আমি বেশি খুশি। অনেকের হয়ত নেশা থাকে টাকার নেশা বা বাড়ি-গাড়ি-জমির নেশা। আমার আসলে ব্যাটের নেশা ব্যাটিং পারি আর না পারি।’

চোটের কারণে টুর্নামেন্টের শুরুর দিকে খেলতে পারেননি সাইফউদ্দিন। বিপিএলের শুরুর দিকে পাওয়া যাবে না এমনটা জানার পরও তাকে দলে নিয়েছিলেন তামিম। বরিশাল অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন ব্যাটে-বলে পারফর্ম করে। ব্যাট হাতে ১৮৫.২৯ স্ট্রাইক রেট ও ৬৩ গড়ে করেছেন ৬৩ রান। বোলিংয়ে ৯ ম্যাচে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। ভালোভাবে কামব্যাক করতে না পারায় ভক্ত-সমর্থক থেকে শুরু করে যারা সুযোগ দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

সাইফউদ্দিন বলেন, ‘যা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ, সত্যি বলতে সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা আমার ভক্ত-সমর্থক আছে, যারা আমাকে সুযোগ দিয়েছে। সবমিলিয়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, তারা আমাকে সাপোর্ট করেছে এবং দোয়া করেছে, ভালোভাবে কামব্যাক করতে পেরেছি।’

খারাপ সময়ে পাশে থেকে আত্মবিশ্বাস যুগানোয় নিজের মাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন সাইফউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমার পরিবার, আমার নতুন স্ত্রী, আপনারা হয়ত জানেন সে ক্রিকেটে প্রতি এত আগ্রহী না। অনেক অনুরোধ করেছিলাম মাঠে আসার জন্য তারপরও সে আসে নাই। তারপরও মনে হয় টিভি-সেটের সামনে বসে সে দেখেছে। সত্যি বলতে আমার মাকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। আমার মা সবসময় আমার পাশে ছিল এবং সবসময় আত্মবিশ্বাস দিতো।’