বিপিএল

‘ঘরোয়া ক্রিকেটের মানই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের প্রতিচ্ছবি’

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
Publish Date: 00:23 Friday, February 23, 2024

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

সাদা পাঞ্জাবির মাঝে কালো রঙের নকশা, বুকের ঠিক বা পাশে লেখা ‘একুশে’। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে বিসিবির দেয়ার এমন পাঞ্জাবি পড়েই পুরোটা দিন কাটিয়েছেন রমিজ রাজা। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ধারাভাষ্য দিতে আসায় প্রায় সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলেন পিসিবির সাবেক চেয়ারম্যান। কয়েকদিনের প্রচেষ্টায় এক গোধূলি লগ্নে পাওয়া গেল রমিজকে। ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা রমিজের চুল কালো থাকলেও সাদা হয়ে গেছে মুখের দাঁড়ি।

বয়স যে ক্রমশই বাড়ছে সেটা অন্তত বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্রিকেট ছেড়ে দেয়ার পর ধারাভাষ্যকার হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেন রমিজ। ক্ষুরধার মাথায় ক্রিকেট বিশ্লেষণ করায় বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন। মাঝে মাঝে অবশ্য বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার মুখেও পড়েছে। তবে পিসিবির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে নিজের সবটা উজার করে দিয়েছেন রমিজ। তার সময় এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে পাকিস্তান।

রমিজের সবচেয়ে বড় সাফল্য পাকিস্তান সুপার লিগকে (পিএসএল) বিশ্ব দরবারে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যাওয়া। একটা সময় বিপিএলকে বিবেচনা করা হলেও এখন সবার চোখে আইপিএলের পরই পিএসএল। তরুণদের তুলে আনতে চালু করেছিলেন পাকিস্তান জুনিয়র লিগও (পিজেএল)। বিপিএলে ধারাভাষ্য দিতে এসে ক্রিকফ্রেঞ্জির প্রতিনিধি মমিনুল ইসলাম এর সঙ্গে কথা বলেছেন পিজেএল, বাংলাদেশের ক্রিকেট, বিপিএল এবং আইসিসির টুর্নামেন্টে সাকিব আল হাসানদের পারফরম্যান্স নিয়ে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিপিএলে প্রথমবার এলেন, সময়টা কেমন উপভোগ করছেন?

রমিজ: আমি তো এর আগেও এসেছি। তবে বিপিএলে প্রথমবার এলাম। এখন পর্যন্ত বেশ ভালো লাগছে। আমার মনে হয় এটা আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। বিপিএলে দারুণ ক্রিকেট হচ্ছে এবং এখানকার দর্শকরা তো দুর্দান্ত। সবাই মাঠে এসে খেলা দেখছে, দলের জন্য চিয়ার্স করছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাংলাদেশের খাবার তো খাওয়া হয়েছে নিশ্চয়। এদেশের খাবার খেয়ে, মানুষদের সঙ্গে মিশে কেমন লাগলো?

রমিজ: হোটেলের নিচে যে বাফেট দেয়া হয় সেটা আমার বেশ মনে ধরেছে। এক কথায় খাবারটা দুর্দান্ত। আমার মনে হয় দুনিয়াতে এর চেয়ে মজাদার এবং সুস্বাদু কিছু আমি খাইনি। ফ্লেভারটাও বেশ ভালো, মাছ তো বরাবরের মতোই ভালো লেগেছে। এখানকার মানুষ খুব ভালো এবং বিনয়ী। তারা আমাকে দারুণভাবে স্বাগত জানিয়েছে। এখন তো চট্টগ্রামে আছি এরপর ঢাকায় যাবো। আতিথেয়তা মনে রাখার মতো। সুতি কাপড়টাও ভালো দেখলাম, যাওয়ার সময় পারলে কিছু কুর্তা কিনে নিয়ে যাবো।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি তো বেশ কয়েকটি ম্যাচ দেখলেন। মানের দিক থেকে বিপিএল কোথায় দাঁড়িয়ে?

রমিজ: আপনার একটা টুর্নামেন্টের মান কতটা সেটা নির্ভর করে স্থানীয় প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের উপর। যখন স্থানীয় তরুণ ক্রিকেটাররা সামনে থেকে পারফর্ম করবে তখন টুর্নামেন্টের মান নিজ থেকেই উন্নতি হবে। আমি বিদেশিদের গুরুত্বটা বুঝি কিন্তু এগুলো এমন লিগ যা বিদেশি ক্রিকেটারদের দ্বারা হয় না। আপনাকে স্থানীয় ক্রিকেটারদের দিয়েই এসব টুর্নামেন্ট করতে হবে। আমার কাছে মনে হয় এখন পর্যন্ত যতটুকু দেখেছি তাতে ব্যাটিং পারফরম্যান্সে নজর দিতে হবে।

আমার জন্য এখনই সবকিছু নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন। কারণ আমি মাত্রই এখানে এসেছি। কিন্তু যেটা দেখলাম এখানে গুচ্ছ আকারে উইকেট হারায়। যে কারণে দ্রুতই চার উইকেট পড়ে যায়। আপনাকে এটার সমাধান খুঁজে বের করতে হবে যে কেন আপনি পারছেন না। আমার মনে হয় এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টি সম্পর্কে আপনার স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে যে আপনার লক্ষ্যটা কি? আপনি কিভাবে ব্যাটিং করতে চান?

নির্দিষ্ট উইকেটে আপনি কি করতে চান। এরপর আপনি আপনার স্কিল প্রয়োগ করুন। আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে সেটা হলো বেশ কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার এবং অনভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা একটু বেশিই তাড়াহুড়ো করছে। যে কারণে তাদের দলগুলো উপকৃত হচ্ছে না। যার ফলে তাদের দলের ফলাফলেও সেটার প্রভাব পড়ছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার দেশে পিএসএল চলছে অথচ আপনি বিপিএলে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। পেছনের গল্পটা বলবেন?

রমিজ: পেছনের গল্পটা একেবারে সহজ। আমি আগেই বিপিএলকে কথা দিয়েছিলাম তাই এখানে। আপনি যখন কারও সঙ্গে হাত মেলাবেন, কোনো বিন্দুযুক্ত লাইনে স্বাক্ষর করবেন তখন এটা বিশ্বাসের বিষয়। আমি তাদের মাঝে একজন যারা কিনা কোনো কিছুতে স্বাক্ষর করে এবং সেটা মেনে চলে। তাই আমিও পিএসএলকে মিস করি কিন্তু তারা একটু দেরিতে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। সুতরাং আমার প্রতিশ্রুতিটা ছিল বিপিএলের সঙ্গে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ধারাভাষ্য কক্ষে বসে সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবালের দ্বৈরথটা দেখেছেন নিশ্চই। তাদের উদযাপনের ঘটনাটা কিভাবে দেখছেন?

রমিজ: অনেক সময় এটা হতে পারে। আমার তো সতীর্থদের সঙ্গে কত এমন লড়াই হয়েছে। এটা খেলার অংশ। আপনার পরিবারেও আপনি এমন লড়াই দেখবেন। তাই আমার উদ্বেগের কথা যদি বলুন তাহলে বলবো এটা তেমন কোনো ইস্যু না। কারণ আপনি যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলবেন তখন এসব হতে পারে। এটা সিরিয়াস কিছু না। আমার মনে হয় এমন দ্বৈরথকে স্বাগত জানানো যেতে পারে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: তানজিদ তামিমের ইনিংসটা আপনার নজর কেড়েছে নিশ্চই?

রমিজ: হ্যাঁ, অবশ্যই। অন্য ওপেনারদের অনুসরণ করার জন্য এটা দারুণ একটা ব্লুপ্রিন্ট হতে পারে। কারণ (তানজিদ) তামিমের ইনিংসে সবকিছুই ছিল। সে একেবারে শান্ত ছিল। এমন না যে সে রাগ করে বলগুলো মারছে। আমার মনে হয় সে দেখেশুনে, বুঝে ইনিংসটা খেলেছে। তার নিজস্ব একটা পরিকল্পনা ছিল এবং সে তার উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেনি। বাংলাদেশের অন্য তরুণরা এই জিনিসটা তার ইনিংস থেকে শেখা দরকার।

আপনাকে আপনার শক্তির জায়গা দিয়ে খেলতে হবে। আপনাকে অনেক বেশি কিছু করতে হবে না। আপনি তামিমের ইনিংসটা দেখুন খুব বেশি ইম্প্রোভাইজেশন ছিল না। সে একদম ঠিকঠাক শটস খেলেছে। আমরা তার কাছ থেকে ছক্কা দেখেছি, বাউন্ডারি, এক-দুইও দেখেছি। এটা পুরোপুরি একটা প্যাকেজ ছিল।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাংলাদেশে একটা বড় সমস্যা হচ্ছে তরুণরা আশা জাগিয়ে এলেও থিতু হতে পারেন না। এটা কেন হয় এবং সমাধানই বা কি?

রমিজ: আমার মনে হয় আপনার মানসিক শক্তি, টেম্পারমেন্ট এবং কি করতে চান সেটা নিয়ে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। আপনি একবার থিতু হয়ে গেলে....আমি ব্যাটিংয়ের দিক থেকে বলছি কারণ আমি একজন ব্যাটার ছিলাম। এখানে থিতু হতে একটা সময় লাগে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যেকোনো তরুণের জন্য ভিন্ন ধরনের একটা চাপ। কারণ তারা সবাই বারবার স্কোরবোর্ডের দিকে তাকায় এবং দেখে যে প্রতি ওভারে ১০ রান লাগে।

তখন তাদের মন খারাপ হয়। চিন্তা করে তারা যদি প্রতি ওভারে ১০ রান না নিতে পারে তখন কি হবে। এটা তাদের পীড়া দিতে থাকে। তাই আপনাকে যা করতে হবে সেটা নিয়ে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। আপনার উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা কি সেটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার একটা পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং সেটার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজের উপর বিশ্বাস রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সবসময় চাপের মাঝে থাকতে পারবেন কিন্তু স্কোরবোর্ডের দিকে তাকান। বর্তমান সময় নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে পরের দুই ওভার আপনি ঠিকঠাক খেলছেন। যাতে করে আপনি থিতু হতে পারেন।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এশিয়াতে এই জিনিসটা খুব বেশি দেখা যায় যে কয়েকটা ভালো ইনিংস খেললেই তাকে জাতীয় দলে নিয়ে নেয়া হয়। তাদের বেশিরভাগই ঝরে পড়ে যায়। আপনার কি মনে হয় প্রক্রিয়াটা ঠিক না...

রমিজ: আমি ঠিক জানি না। যখন একেবারে তরুণ ছিলাম তখন আমি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলাম। সত্যি বলতে আমরা যখন ঘরোয়াতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলি আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলি সেখানে বড় একটা পার্থক্য আছে। একজন তরুণের জন্য সরাসরি জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা দারুণ ব্যাপার। কারণ যখন এমনটা ঘটে তখন বুঝতে হবে তার মাঝে বিশেষ কিছু আছে। সে সবসময় খেলা নিয়ে শিখছে। যেখানে তাকে রাখা হয়নি। কিন্তু এটা আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে দুই ধাপ নিচে। তরুণদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ডাগ আউটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার বিষয়ে আমি অবশ্য খানিকটা খুশি। কারণ তাতে করে আপনার প্রক্রিয়াটা দ্রুতই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, যা আপনাকে আরও বেশি উপকৃত করে তুলবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: কিন্তু তরুণদের জাতীয় দলে খেলানোর জন্য তো একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া দরকার। যেটার মধ্য দিয়ে তারা শিখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখবে। সেটা কেমন হওয়া উচিত?

রমিজ: শীর্ষ পর্যায়ে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স যেমনই দেখুন না কেন সেটা একটা আয়না। আমার কাছে মনে হয় আপনার ঘরোয়া ক্রিকেটের সিস্টেম কিভাবে কাজ করছে এটা তারই প্রতিচ্ছবি। উদাহরণ হিসেবে যদি বলি আমি যখন চেয়ারম্যান ছিলাম তখন পাকিস্তান দুটি ফাইনাল খেলেছে। আমরা এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিলাম। যদিও দুটোতেই আমরা হেরেছি। তার মানে হচ্ছে টেম্পারমেন্টে ভুল ছিল। আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে কোথায় আছে সেই দুটো ফাইনাল সেটারই প্রতিচ্ছবি। তাই আমাদের খেলোয়াড়দের টেম্পারমেন্টে উন্নতি করতে হবে।

তখনই আমি সেই ধারণাটা পেয়েছিলাম যখন আমরা দুটো ফাইনাল হেরেছিলাম। ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোযোগ দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটেও আপনাকে মনোযোগ দিতে হবে। অনূর্ধ্ব-১৯ এবং অনূর্ধ্ব-১৭ দলগুলোকে কোন প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হচ্ছে সেটাও আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। ট্যালেন্ট স্কাউটে কারা আছে, তাদের সঙ্গে কি করা হচ্ছে। তারা খুব অল্প বয়সেই বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়েছে। আপনার তাদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ হতে বলতে হবে এবং আশায় থাকতে হবে যে তারা ভালোভাবে গোছানো জীবনযাপন করছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: দ্বিপাক্ষিক সিরিজে প্রায়শই আমরা বাংলাদেশকে ভালো করতে দেখি। কিন্তু আইসিসির টুর্নামেন্টে সেই পারফরম্যান্সটা দেখা যায় না। কোথায় সমস্যা বলে মনে হয়...

রমিজ: দেখুন, সাকিব আল হাসানকে বিশ্বকাপে আমি বলেছিলাম তোমার তিন নম্বরে ব্যাটিং করা উচিত। কারণ সে দলের সেরা খেলোয়াড়। তাই তাকে উপরের দিকে ব্যাটিং করা উচিত। আমি আপনাকে একটা উদাহরণ দিতে পারি। ভিভ রিচার্ডস যখন তার সেরা সময়ে ছিল তখন তিন নম্বরে সে ভয়ঙ্কর ছিল। কিন্তু যখন সে চার কিংবা পাঁচ নম্বরে নেমে গেল তখন তার দলের দুই উইকেট পড়ে যেতো। তখন আপনার মাইন্ডসেট পুরোপুরি আলাদা। কারণ তখন আপনি নিজকে সংহত করতে চান এবং আরও কোনো উইকেট যেন না পড়ে সেই চিন্তা করেন। কিন্তু আপনি যখন তিনে খেলবেন তখন আপনি পুরোপুরি স্বাধীন। আপনি স্বাধীনভাবে খেলতে পারবেন। আমার মনে হয় বিশ্বের বড় দলগুলোর সমকক্ষ হতে হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ব্যাটাররা স্বাধীনভাবে খেলতে চাইলে তো তেমন উইকেট দরকার। বাংলাদেশের কি সেখানে নজর দেয়া উচিত?

রমিজ: পাকিস্তানে আমি সবসময় বলি উইকেটগুলো আবার বানাতে হবে। আপনাকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে ব্যাট-বলের মাঝে সমানভাবে লড়াই হচ্ছে। বাংলাদেশে অনেক ভালো পেস বোলার আছে। আমি শরিফুল ইসলামের কথা বলতে পারি। ওইদিন খুব সম্ভবত সের একটা স্পেল দেখেছি। তখন তাকে নতুন বলে সুইং করাতে দেখেছি, সে দারুণ কিছু ইয়র্কারও করেছে। তার নিজস্ব একটা পরিকল্পনা আছে এবং সেটা সে কাজে লাগাচ্ছে। এখানে অনেক প্রতিভা আছে কিন্তু তারা তখনই ভালো জায়গায় যেতে পারবে যখন তাদের উৎসাহ দেয়া হবে।  টার্নিং উইকেট দিয়ে আপনি পেস বোলারদের উৎসাহিত করতে পারবেন না।

যদিও ঘরের মাঠে বাংলাদেশ স্পিনের সুবিধা নিয়ে থাকে। কিন্তু আমার মনে হয় অন্তত ঘরোয়াতে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে সামঞ্জতা থাকা প্রয়োজন। ২২ গজে উইকেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতি হিসেবে এটি আপনাকে চেনাবে। যে কারণে আমরা সবাই অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডে গিয়ে হোঁচট খাই। কারণ আমরা কেউ প্রস্তত না। আমরা যেভাবে উইকেট প্রত্যাশা করি সেখানে তেমনটা থাকে না। আপনি আপনার শক্তি দিয়ে ভালো মানের স্পোর্টিং উইকেট বানানো গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় এমনটা করতে পারলে বাংলাদেশের ক্রিকেট আরও বেশি উন্নতি করবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: কয়েকদিন পরপরই পিসিবিতে রদবদল আসে। এটা কি পাকিস্তান ক্রিকেটকে পিছিয়ে দিচ্ছে?

রমিজ: প্রত্যেকটা ক্রিকেট বোর্ডেই ধারাবাহিকতা দরকার। এমনকি ক্রিকেট দলেরও ধারাবাহিকতার প্রয়োজন আছে। আপনি যখন বারবার পরিবর্তন করবেন তখন আত্মবিশ্বাস হারাবেন। যখন নতুন কেউ বোর্ডে আসে তখন তারা নতুন পরিকল্পনা, নতুন স্ট্যাট্রেজি নিয়ে আসে। আগের চেয়ারম্যান যে পরিকল্পনাগুলো করেছিল তারা সেটা একটাও অনুসরণ করে না। সবচেয়ে বড় সমস্যাটা এখানেই। আপনি যদি কাউকে তিন বছরের জন্য সময় দেন তাহলে তাকে সময়টা শেষ করতে দিতে হবে। তখনই কেবল আপনি সেটা থেকে ফল পাবেন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ক্রিকেট দলগুলোর মাঝেও নিশ্চই এমন ধারাবাহিকতা প্রয়োজন...

রমিজ: হ্যাঁ, অবশ্যই। বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে আমি উদাহরণ দিতে পারি। আমি যখন চেয়ারম্যান ছিলাম তখন সাজেশন ছিল যে আমরা ওপেনিং জুটিটা পরিবর্তন করবো কারণ তারা নির্দিষ্ট একটি গতিতে খেলছে। আমি বলেছিলাম যে আমাদের ভালো মানের ওপেনিং জুটি দরকার। এটা আমাদের কাজে দিয়েছে কারণ আমরা তাদের সময় দিয়েছি এবং পাশে ছিলাম। আমরা তাদের দেড় বছর সময় দিয়েছি এবং তারা দারুণ একটা জুটি হয়ে উঠেছে। তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এবং ক্রিকেট দলের মাঝে ধারাবাহিকতটা থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: তরুণদের জন্য আপনি পিজেএল চালু করেছিলেন। সেখান থেকে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার উঠে এসেছে। আপনার কি মনে হয় এটা প্রতিটি দেশেরই করা উচিত?

রমিজ: অবশ্যই, আমার মনে হয় এটা বৈশ্বিক একটা টুর্নামেন্ট ছিল। কারণ আমাদের এখানে অস্ট্রেলিয়ান, সাউথ আফ্রিকান এবং ইংলিশ তরুণ ক্রিকেটাররাও খেলতে আসতো। আপনি নিশ্চয় দেখেছেন তাদেরকে বেশ ভালো পারিশ্রমিকও দেয়া হয়েছে। আমাদের যারা ক্রিকেট খেলে তাদের জন্য জীবিকা নির্বাহ করা খুব কঠিন। তাই তরুণদের ক্রিকেটারদের সেই ভরসাটা দিতে চেয়েছিলাম যে তোমরা ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে নিতে পারো। আপনি তাদেরকে ছোট বয়সেই দলে নিচ্ছেন এবং টাকা দিচ্ছেন। এটা ভালো জিনিস।

তারা খুব সম্ভবত ১০ হাজার ডলার থেকে ১৭ হাজার ডলার পেতো। সেটাও ১০-১২ দিনে লিগ খেলে। আমার পরিকল্পনা ছিল এমন একটা পেশাদার জায়গা তৈরি করা যেখান থেকে তারা টাকা পাবে এবং ক্রিকেট খেলাটা শিখবে। সংস্কৃতির কথা যদি বলেন তারা একজন আরেকজনকে চেনার সুযোগ পাচ্ছে। কারণ ১৭ বছরের একজন তরুণের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ডাগ আউট দেয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের একজন ১৭ বছরেরছেলে অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। এখান থেকে সে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি এবং তাদের সম্মন করতে শিখবে।

আমরা চেয়েছিলাম আমাদের তরুণরা যেন এমন একটা প্রক্রিয়ার মাঝে দিয়ে যায় যাতে করে ১৯-২০ বছরের মাঝে তারা ভালো ক্রিকেটার হতে পারে। দেখুন, পরের বছর পিএসএলে আরও দুই-একটা দল যোগ করতে চাইছে। তখন আপনার পুলে আরও বেশি ক্রিকেটার লাগবে। আমরা সেই পুলই তৈরি করতে চেয়েছি যেখানে ১৮-২০ বছরের ক্রিকেটাররা থাকবে। যারা কিনা আপনার পরবর্তী জেনারেশন। আমার ইচ্ছে ছিল এটি চালিয়ে যাওয়া কিন্তু এটা হয়নি। তবে আমি মনে করি এই ধারণাতে অনেক বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি ক্রিকেট খেলেছেন, পিসিবির চেয়ারম্যান ছিলেন, এখন ধারাভাষ্যও করছেন। আপনার কাজ কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং?

রমিজ: প্রত্যেকটা কাজই চ্যালেঞ্জিং। আমার কাছে মনে হয় ক্রিকেট বোর্ড চালানোটা দেশে চালানোর মতো। কারণ ক্রিকেট আমাদের বিশ্বের প্রতিটা অংশেই আছে। এখানে প্রত্যেকেই বিশেষজ্ঞ, তারা সবাই জানতে চায় আপনি কি করছেন, আপনার পরিকল্পনা কি। আপনাকে একটা জিনিস মেনে নিতে হবে যে কিছু জিনিস আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। আমার মনে হয় সমর্থকরা এটাকে সম্মান করবে। এটা আসলে প্রশাসক হিসেবে সমর্থক এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা।

আমি যদি এভাবে হিসেব করি তাহলে ধারাভাষ্য দেয়া আমার জন্য অনেক সহজ। কারণ লম্বা সময় ধরেই আমি এটা করে আসছি। এই তিনটার মাঝে সবচেয়ে কঠিন হচ্ছে ক্রিকেট খেলা। আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন তাহলে সত্যি বলতে আপনি অন্যদের চ্যালেঞ্জ করছেন, যারা কিনা বিশ্ব, যাদের মাঝে কয়েকজন বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ও। আপনি বিশ্বের সেরাদের বিপক্ষে উইকেটে নিজেকে প্রমাণ করতে চান। একটা সময় আপনি ব্যর্থ হোন, সেখানে থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ান। এটার জন্য ভিন্ন একটা মানসিকতা প্রয়োজন। কিন্তু তিনটা কাজই কঠিন।