বাংলাদেশ- আয়ারল্যান্ড সিরিজ

লিটনের নান্দনিক ব্যাটিং আর সুপার সাকিবের ঘূর্ণিতে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 13:33 বুধবার, 29 মার্চ, 2023

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

লিটন দাস ও রনি তালুকদারের নান্দনিক ব্যাটিংয়ে শুরু, মাঝে বাংলাদেশকে টেনেছেন তাওহিদ হৃদয় ও সাকিব আল হাসান। পুরো ম্যাচে চোখে লেগে থাকার মতো ব্যাটিং করেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। এমন দিনে বোলাররাও বিলিয়ে দিয়েছেন নিজেদের সেরাটা, বিশেষ করে সাকিব। বাঁহাতি এই স্পিনারের বল খেলার যেন কোনো উপায়ই খুঁজে পাচ্ছিলেন না আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররা। শেষ পর্যন্ত উপায় খুঁজেও পায়নি তারা। সাকিবের ঘূর্ণিতে রীতিমতো আসা যাওয়ার মিছিলে ছিলেন সফরকারীরা। শেষ দিকে কার্টিস ক্যাম্ফার হাফ সেঞ্চুরি করলেও সেটা কেবল তাদের হারের ব্যবধান কমিয়েছে। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আয়ারল্যান্ডকে ৭৭ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।

চট্টগ্রামে বড় রান তাড়ায় ইনিংসের প্রথম বলেই নিজেদের অধিনায়ককে হারায় আয়ারল্যান্ড। তাসকিন আহমেদের অফ স্টাম্পের বল তাড়া করতে গিয়ে আউট হন পল স্টার্লিং। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে লিটন দাস ক্যাচ লুফে নিলে শূূন্য রানেই ফিরে যেতে হয় আইরিশ অধিনায়ক। দ্বিতীয় ওভারে বোলিং এসে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নেন সাকিব।

বাঁহাতি এই স্পিনারের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে হাঁটু গেড়ে পুল খেলতে চেয়েছিলেন লরকান টাকার। তবে শেষ মুহূর্তে ব্যাট থামিয়ে দেয়ায় বল ব্যাটে লেগে রনির হাতে চলে যায়। ফলে ফিরতে হয় টাকারকে। তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে দুই ছক্কা দেন নাসুম আহমেদ। তবে পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে আরও একবার প্রথম বলেই উইকেট পান সাকিব।

বাংলাদেশের অধিনায়কের আর্ম বলে বোল্ড হয়েছেন রস টেলর। সেই ওভারের শেষ বলে সাকিব নিয়েছেন আরও এক উইকেট। সাকিবের নিচু হওয়া ডেলিভারিতে এজ হয়ে লিটনের গ্লাভসে ধরা পড়েন ডেলানি। প্রতি ওভারে উইকেট নেয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন নিজের তৃতীয় ওভারেও। সাকিবের স্ট্রেইট ডেলিভারিতে সুইপ করতে চেয়েছিলেন জর্জ ডকরেল। তবে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি তিনি।

জোরালো আবেদন করলে আউট দেন অনফিল্ড আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। তবে ততক্ষণাৎ রিভিউ নেন ডকরেল। রিপ্লেতে দেখা যায় বল মিডল স্টাম্পে হিট করতো। ফলে রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি ডকরেলের। একই ওভারের শেষ বলে আরও এক উইকেট নিয়েছেন সাকিব। বাঁহাতি এই স্পিনারকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন হ্যারি টেক্টর।

তাতে পঞ্চাশ পেরোনোর আগেই ৬ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড। আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছেন সাকিব। প্রথমবার বাংলাদেশি হিসেবে একাধিকবার ৫ উইকেট নেয়ার রেকর্ডটা এখন তার দখলে। এদিন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়া বোলারদের তালিকায় টিম সাউদিকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। বর্তমানে সাকিবের উইকেট ১৩৬টি।

সাকিব-তাসকিনদের সঙ্গে উইকেট নেয়ার মিছিলে যোগ দেন হাসান মাহমুদও। ডানহাতি এই পেসারের বলে আউটসাইড এজ হয়ে লিটনের গ্লাভসে ক্যাচ দেন মার্ক অ্যাডায়ার। নিজের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে ফিন হ্যান্ডকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেছেন তাসকিন। ৫০ করা ক্যাম্ফারকেও ফিরিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত সফরকারীরা থামে ১২৫ রানে।

এর আগে লেগ স্পিনার গ্যারেথ ডেলানিকে দিয়ে বোলিং শুরু করেছিল আয়ারল্যান্ড। প্রথম ওভারে কোনো বাউন্ডারি হজম না করলেও ৮ রান দিয়েছিলেন ডেলানি। পরের ওভারে মার্ক অ্যাডায়ারকে দুই চার মেরেছেন রনি ও লিটন। সময় যত বেড়েছে বাংলাদেশের দুই ওপেনার ততই আক্রমণাত্বক হয়েছেন। তাতে মাত্র ৩.৩ ওভারে দলের পঞ্চাশ পেরোয় বাংলাদেশ। ১৭ ওভারের ম্যাচ হওয়ায় এদিন পাওয়ার প্লে ছিল ৫ ওভার।

সেখানে ব্যাটিং-তাণ্ডব চালিয়ে লিটন ও রনি মিলে তুলেছেন ৭৩ রান। যেখানে বেশিরভাগ রানই এসেছে লিটনের ব্যাট থেকে। আইরিশ বোলারদেরে তুলোধুনো করতে থাকা লিটন বেন হোয়াইটের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ১৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে বাংলাদেশের হয়ে যা দ্রুততম। এর আগে ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে করা মোহাম্মদ আশরাফুলের হাফ সেঞ্চুরি ছিল ২০ বলে।

এদিন ১৬ বছরের পুরোনো সেই রেকর্ড ভেঙেছেন লিটন। এদিকে হোয়াইটের আউট সাইড লেগ স্টাম্পের ডেলিভারিতে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে লিটন চার মারলে একশ পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো উদ্বোধনী জুটিতে একশ ছুঁয়েছে স্বাগতিকরা। শুধু তাই নয় সেই চারে ছাড়িয়ে গেছেন নাইম শেখ ও সৌম্য সরকারের করা ১০২ রানের উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড।

৮ বছর পর জাতীয় দলে ফিরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩৮ বলে ৬৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন রনি। টানা দুই হাফ সেঞ্চুরি করার সুযোগ ছিল ৩২ বছর বয়সি এই ওপেনারের। তবে তাকে সেটা করতে দিলেন না হোয়াইট। ডানহাতি এই স্পিনারকে লং অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে অ্যাডায়ারেরে হাতে ধরা পড়েন ২২ বলে ৪৪ রানের ইনিংস খেলা রনি। তাতে ভাঙে বাংলাদেশের রেকর্ড ১২৪ রানের উদ্বোধনী জুটি।

আগের ম্যাচে শেষের দিকে ব্যাটিং করলেও এদিন তিনে নেমেছেন সাকিব আল হাসান। হোয়াইটের বলে লং অন দিয়ে চার মেরে প্রথম বলেই রানের খাতা খোলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। দারুণ ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ার সেরা ৭৩ রানের ইনিংস পেরিয়ে গেলেও প্রথমবার সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি লিটনের। খানিকটা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আউট হয়েছেন ডানহাতি এই ওপেনার।

হোয়াইটের ওয়াইড তাড়া করতে গিয়ে আউটসাইড এজ হয়ে উইকেটকিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দেন ৪১ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৮৩ রান করা লিটন। এরপর তাওহিদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে ঝড়ো ব্যাটিং করতে থাকেন সাকিব। মাত্র ২৪ বলে পঞ্চাশ পেরিয়েছে তাদের দুজনের জুটি। শেষ ওভারে অ্যাডায়ারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে টপ এজ হয়ে ফিরে গেছেন ১৩ বলে ২৪ রান করা হৃদয়। এদিকে সাকিব অপরাজিত ছিলেন ২৪ বলে ৩৮ রানের ইনিংস খেলে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ - ২০২/৩ (১৭ ওভার) (লিটন ৮৩, রনি ৪৪, সাকিব ৩৮*, হৃদয় ২৪)

আয়ারল্যান্ড-  ১২৫/৯ (১৭ ওভার) (ক্যাম্ফায়ার ৫০; সাকিব ৫/২২)