নারী এশিয়া কাপ

সিলেট যেন ২০১৪ সালের ইনসেন

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশের তারিখ: 14:30 সোমবার, 10 অক্টোবর, 2022

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট, সিলেট থেকে ||

১ বলে ৫ রান! ম্যাচ জিততে ছক্কা মারার বিকল্প ছিল না রিতু মনির সামনে। ম্যাচ সুপার ওভারে নিয়ে যেতে হলেও অন্তত চার মারতে হতো ডানহাতি এই ব্যাটারকে। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে হলো না দুটির একটিও। ওশাদি রানাভিরার লেগ স্টাম্পের টসড আপ ডেলিভারিতে সুইপ করে দৌড় দিলেন রিতু। ১ রানের বেশি না হওয়ায় বাংলাদেশ হেরে গেল ৩ রানে। শ্রীলঙ্কা যখন আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা টিভি স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছিলো নিগার সুলতানা জ্যোতির হতাশামাখা মুখ।

ঘরের মাঠ, চেনা কন্ডিশন তবুও ৭ ওভারে ৪১ রানের সমীকরণ মেলাতে না পারায় হতাশায় নুইয়ে পড়ল বাংলাদেশের অধিনায়কের মাথা। অথচ ম্যাচের সবকিছুই ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। রাতে খানিকটা বৃষ্টি, গুমোট আবহাওয়ায় উইকেট খানিকটা স্যাঁতস্যাঁত হয়ে থাকায় সকালের ম্যাচে টস ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল। সকালের শুরুটা হলো বাংলাদেশের টস জয় দিয়ে।

বোলিংয়ে নেমে উইকেটের পুরো ফায়দাই লুফে নিলো বাংলাদেশের বোলাররা। জাহানারা আলমের ইনসুইং কিংবা রুমানা আহমেদের নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বারবারই বিপাকে পড়তে হচ্ছিলো। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির আগে ১৮.১ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা থামে ৮৩ রানে। বৃষ্টি শেষে আবার খেলা শুরু হতেই বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪২ বলে ৪১ রান। এমন সমীকরণের ম্যাচেও বাংলাদেশের দুই ওপেনার ছিলেন নিষ্প্রভ।

ফারজানা হক পিংকি ৮ বলে ৬ রান করলেও আরেক ওপেনার মুর্শিদা আউট হয়েছেন ৪ বলে মাত্র ১ রান করে। এরপর জ্যোতি ও রুমানা মিলে ছোট জুটি গড়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিলেও টাইগ্রেসদের জয় দেখাতে পারেননি তারা। ম্যাচ শেষ দুই ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। দেখেশুনে এক রান করে নিয়ে খেললেও কঠিন হওয়ার কথা ছিল না বাংলাদেশের জন্য। তবে প্রথম বল থেকেই রানাভিরার ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা।

রানাভিরার টসড আপ ডেলিভারিতে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নিলাক্ষী ডি সিলভার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন রুমানা। এক বল পর আক্রমণ করতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এসেছেন জ্যোতি। বাংলাদেশের অধিনায়কের বিদায়ের পর সেই ওভারেই আউট হয়েছেন সোবহানা মোস্তারি এবং ফাহিমা খাতুন। ১ ওভারে মাত্র ৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।

এমন হারে সিলেট ৮ বছর আগের স্মৃতি ফেরাল বাংলাদেশের মেয়েরা। ২০১৪ সালে সাউথ কোরিয়ার ইঞ্চিয়নে সেদিন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। এশিয়ান গেমসের সেই ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ৭ ওভারে ৪৩ রান। তৃতীয় ওভারে ২ উইকেট হারালেও ৪ ওভার শেষে ম্যাচে এগিয়েই ছিল বাংলাদেশ। সেদিন ৪ ওভারে ২ উইকেটে ২৯ রান তুলেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা।

ম্যাচ জিততে শেষ ওভারে টাইগ্রেসদের প্রয়োজন ছিল ১৪ রান। নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও অবিশ্বাস্যভাবে সেই ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ। পঞ্চম ওভারে ৪ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন পাকিস্তানের সাদিয়া ইউসুফ। পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে সাদিয়ার দেখানো পথেই হেঁটেছিলেন সানা মীর।

ফাহিমা এবং লতা মন্ডলকে ফিরিয়ে ৩ রানে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। পাকিস্তানের এমন বোলিংয়ের পরও শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল মাত্র ৬ রান। এমন সহজ সমীকরণও মেলাতে পারেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। নিদা দারের ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে সালমা খাতুনের দল তুলতে পেরেছিল মাত্র ১ রান। তাতে ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ৪ রানে হেরে এশিয়ান গেমসের রৌপ্য জিতেছিল বাংলাদেশ।

৮ বছর পর ইঞ্চিয়নের বেদনাময় স্মৃতি ফেরায় খানিকটা হতাশ সংবাদ সম্মেলনে আসা জাহানারা। শুধু ডানহাতি এই পেসারই নন তার কথায় উঠে আসলো পুরো দলের হতাশার কথা। ম্যাচ শেষে জাহানারা বলেন, ‘দল হিসেবে এটা তো অবশ্যই আমাদের জন্য হতাশাজনক। টার্গেটটা যখন সেট হয়েছে তখনই আমরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলাম, হয়তো কিছুটা পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে।’

‘২০১৪ তে ইনসেনে এরকম একটা ঘটেছিল। ৪২ বলে ৪৩ রান টার্গেট ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। আমরা সেটা হেরে রৌপ্য পেয়েছিলাম, স্বর্ণ হাতছাড়া করেছিলাম। অবশ্যই, আজকের ম্যাচটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা সবাই হতাশ, এটা বলাই চলে। আমরা খুব আপসেট।’