নারী ক্রিকেট

হালচাষ থেকে বিশ্বকাপে, মারুফার অনুপ্রেরণা হার্দিক

হাসিব সিয়াম

হাসিব সিয়াম
প্রকাশের তারিখ: 20:28 বৃহস্পতিবার, 08 সেপ্টেম্বর, 2022

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

'আমি ক্রিকেটার না হলে এখন হয়তো পেট্রোল পাম্পে কাজ করতাম।'- নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে এমনটাই বলেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। ভারতের এই অলরাউন্ডার এখন বিশ্ব ক্রিকেটেরই বড় এক বিজ্ঞাপন। হার্দিক এখন অনেক তরুণ ক্রিকেটারেরই আর্দশের নাম। এই তালিকায় আছেন, বাংলাদেশ নারী দলে প্রথমবার ডাক পাওয়া মারুফা আক্তারও। 

হার্দিক জেনুইন অলরাউন্ডার হলেও মারুফা ব্যাটটা ঠিকমতো চালাতে পারেন না, কারণ তিনি একজন জেনুইন পেসার। বাইশ গজের প্লেয়িং রুলে দুই জনের মধ্যে হয়তো খুব একটা মিল নেই, তবে মাঠের বাইরে দুই জনের মধ্যে বেশ মিল। বিশেষ করে জাতীয় দলে আসার আগের সময়টা বিবেচনা করলে।

এক সময় ক্রিকেটকে স্রেফ বিনোদনের একটা মাধ্যম হিসেবেই দেখা হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে। আধুনিক ক্রিকেটে বেড়েছে পেশাদারিত্বও। এমনকি এই ক্রিকেটই বদলে দিচ্ছে কারো কারো জীবনের গতিপথও। যেমনটা ঘটেছে হার্দিকের বেলায়।

সময়ের অন্যতম সেরা এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার ক্রিকেটার না হলে, হয়তো এখন বড়জোর গুজরাটের কোনো এক পেট্রোল পাম্পের কর্মচারী থাকতেন। কয়েক মাস আগে এক সাক্ষাৎকারে এমন কথা নিজেই জানিয়েছিলেন। আর এ জায়গাতেই মারুফার সঙ্গে মিল আছে হার্দিকের।

কিছুদিন আগেও মারুফা সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন, বাবার সঙ্গে জমিতে হালচাষ করার কারণে। মাস কয়েকের ব্যবধানে তিনি আবারও সংবাদের শিরোনামে, তবে এবার কারণটা একেবারেই ভিন্ন, প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলে। সেটাও আবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসরে।

জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর বৃহস্প্রতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রথমবার সংবাদ সম্মেলনে আসলেন মারুফা। নিজের আদর্শ ক্রিকেটার হিসেবে হার্দিকের নাম বলার পর এর ব্যাখাও দিয়েছেন সদ্য কৌশোর পেরোনো এই ক্রিকেটার। তিনি বলেন, ‘আমার মতো, এ জন্য।’

জাতীয় দলে আসর পথটা মোটেই সহজ নয়। তবে মারুফার জন্য সেটা ছিল রীতিমতো খালি হাতে সাগর পাড়ি দেয়ার মতোই। পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে বাবার সঙ্গে জমি চাষের কাজ করেছেন মারুফা। আর ক্রিকেট অনুশীলন করেছেন পরিত্যাক্ত রেললাইনের পাশে।

এসবের পরও তার স্বপ্ন ছিল লাল-সবুজ জার্সিটা গায়ে জড়ানো। এই স্বপ্ন সত্যি করার পথে সর্বশেষ নারী ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) ১১ ম্যাচে ২৩ উইকেট শিকার করেন তিনি। যেখানে এক ম্যাচেই ৭ উইকেট তুলে নেন। সেই টুর্নামেন্টে জেতেন সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারও।

এরপর সিলেটে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি সংস্করণের জাতীয় লিগে খেলেন তিনি। যেখানে ৭ ম্যাচে শিকার করেন টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এই টুর্নামেন্টে তার ইকোনমি ছিল তিনেরও কম। এমন পারফরম্যান্সের পরই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলার সুযোগ মেলে মারুফার।

অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা এই ক্রিকেটার নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, ‘ভালো লাগতেছে, আমার এটা প্রথম সফর, সবাই দোয়া করবেন।’ মানুষ তার স্বপ্নের যতটা কাছে আসে, তার বাক্যও বোধহয় ততটাই ছোট হয়। তাইতো মারুফার এমন এক লাইনের উত্তর!